ঢাকা, রবিবার, ২৭ পৌষ ১৪৩১, ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ১১ রজব ১৪৪৬

ফিচার

অ্যালেক্স কাউন্টসের ‘স্মল লোনস, বিগ ড্রিমস’ বইয়ের প্রকাশনা উৎসব

ফিচার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০২৫
অ্যালেক্স কাউন্টসের ‘স্মল লোনস, বিগ ড্রিমস’ বইয়ের প্রকাশনা উৎসব

ঢাকা: গ্রামীণ ফাউন্ডেশন ইউএসএ-এর প্রতিষ্ঠাতা ও লেখক অ্যালেক্স কাউন্টস-এর 'Small Loans, Big Dreams: Muhammad Yunus, Grameen Bank and the Global Microfinance Revolution' বইয়ের প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শনিবার (১১ জানুয়ারি) বিকেল ৪টায় রাজধানীর ফার্মগেটে বইটির প্রকাশক দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডের (ইউপিএল) কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রকাশনা অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয়।

গ্রামীণ ফাউন্ডেশন ইউএসএ-এর প্রতিষ্ঠাতা ও ‘স্মল লোনস, বিগ ড্রিমস’ বইয়ের লেখক অ্যালেক্স কাউন্টস বলেন, ১৯৮৮ সালের ডিসেম্বরে ডিগ্রি পাশ করে বৃত্তি নিয়ে বাংলাদেশে আসি। সে সময় গ্রামীণ ব্যাংকের সাথে কাজ করার, বাংলাদেশ নিয়ে জানার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিই। গ্রামীণ ব্যাংক গ্রাম পর্যায়ে কী ভূমিকা রাখছে, সে বিষয়ে জানার আগ্রহ থেকে কাজ শুরু করি। মানিকগঞ্জের দৌলতপুরে প্রায় ১৫ মাস থেকেছি। সেখানে সাধারণ মানুষের সাথে, গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্যদের সাথে কথা বলতাম। আমি যা শিখেছি, তা এই বইয়ে আছে।

অ্যালেক্স আরও বলেন, আমি দেখেছি গ্রামীণ ব্যাংকের প্রভাব অনেক বেশি এবং তা দিনের পর দিন বেড়েছে। তবে সব সদস্যের ওপর গ্রামীণ ব্যাংকের প্রভাব দেখতে গিয়ে দেখেছি, সবার ওপর প্রভাব সমান ছিল না, কারও ওপর বেশি কারও ওপর কম ছিল, যা খুবই স্বাভাবিক। আমেরিকার শিকাগোতে আমি গ্রামীণ মডেল কর্মসূচি চালু করি। সেখানেও ধনীদের এলাকা যেমন ছিল, তেমনি দরিদ্রদের এলাকাও ছিল। গ্রামীণ আমেরিকা শুরু থেকে খুবই ছোট ছিল, তা থেকে গত বছর বিলিয়ন ডলার ঋণ বিতরণ করেছি, যা ১৯৯৩-৯৪ সালে ভাবতেও পারিনি। এ বইয়ে দেখিয়েছি আমেরিকায় একজন নাগরিক যিনি গ্রামীণের সদস্য, তিনি ঋণ নিয়ে কী কী কাজ করেছেন।

লেখক বলেন, প্রফেসর ইউনূস আমাকে অনেক সময় দিয়েছেন। আমি মনে করি, প্রফেসর ইউনূসের ওপর একটা ভালো জীবনীগ্রন্থ থাকা উচিত। এই বইটি তার জীবনীর একটি ছোট সংস্করণ বলতে পারি। আমার মনে হয়েছে কর্মী ও সদস্যদের দৃষ্টি থেকে গ্রামীণ ব্যাংক বিষয়টি মানুষকে বোঝানো দরকার। তাদের সংগ্রাম ও উন্নতির বিষয়টি আমি পেছন থেকে পর্যবেক্ষকের দৃষ্টি থেকে দেখেছি, এখানে লিখেছি। এই বইয়ে বাংলাদেশে গ্রামীণের একজন দলপ্রধান সন্ধ্যা রানী হালদার, ননী বালা ঘোষ, আমেনা বেগমদের এবং পরিচয় করিয়েছি শিকাগোর দলপ্রধানদেরও।

অ্যালেক্স আরও বলেন, এক গবেষণায় দেখেছি, বাংলাদেশের জিডিপিতে গ্রামীণ ব্যাংক এক শতাংশের বেশি অবদান রাখছে। ব্র্যাকসহ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এই অবদান রাখছে। গতকাল সর্বশেষ গ্রামীণ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে দেখেছি, এটি ৩৯ বিলিয়ন ডলার ঋণ বিতরণ করেছে। এগুলো প্রান্তিক পর্যায়ে দেশের অর্থনীতিতে বেশ বড় ভূমিকা রাখছে।

আলোচনায় সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, এই বইটিতে গল্পের মতো করে অ্যালেক্স গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতার বিবরণ দিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের পর পরই যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি থেকে উত্তরণ ও পুনর্বাসনের জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি কাজ করেছে। শিক্ষা-স্বাস্থ্যখাতে পুনর্গঠনের জন্য তারা কাজ করেছে। পরবর্তীকালে বিশেষ করে নারীদের ঋণ দেওয়া তাদের অবস্থার উন্নতিতে ভূমিকা রেখেছে। এই বইয়ে গ্রামীণ মডেলটি কীভাবে তাদের পরিবারের দারিদ্র্য দূর করতে ভূমিকা রেখেছে, একইসাথে সামাজিক উদ্যোগ কীভাবে সামাজিক ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত হতে পারে তার একটি বড় উদাহরণ লেখক উল্লেখ করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন, এটি কোনো দান নয়, এটা ছিল ব্যবসার উদ্যোগ। ক্ষুদ্রঋণের গঠনমূলক ব্যবহারের মধ্য দিয়ে জীবন-জীবীকার উন্নয়নের মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে।



প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক প্রধান সমন্বয়কারী জনাব লামিয়া মোর্শেদ বলেন, এই বইয়ের প্রকাশনা ও আলোচনা সময়োপযোগী হয়েছে। প্রফেসর ড. ইউনূসের কাজের বিষয়ে গত বছরগুলোতে কথা বলার পরিবেশ ছিল না। গত ৫০ বছরের কাজের স্বীকৃতি, অবদান নিয়ে কথা বলা সম্ভব ছিল না। অ্যালেক্স এই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেছেন এই বইয়ের মধ্য দিয়ে। ১৯৯৩ সাল থেকে আমি এই প্রতিষ্ঠানের সাথে পুরোদমে কাজ শুরু করি। অ্যালেক্সের এই বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ বাংলাদেশ ও আমেরিকায় গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণ গ্রহিতাদের বিষয়ে বিশদ বিবরণ। এই বইয়ে তাদের জীবনের ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে অ্যালেক্স সামাজিক-অর্থনৈতিক ও ইতিহাসভিত্তিক বিবরণ দিয়েছেন।

প্রকাশনা অনুষ্ঠানে গ্রামীণ শক্তি সামাজিক ব্যবসা লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব রতন কুমার নাগ বলেন, ১৯৮৮ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত ৩৬ বছর এই বইয়ের লেখক অ্যালেক্স কাউন্টস গ্রামীণ ফাউন্ডেশন ও গ্রামীণ ব্যাংকের পরিবারের সাথে সম্পৃক্ততা বজায় রেখে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকায় মানুষের সাথে থেকেছেন, গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন। তারই প্রতিফলন আজকের এই বই। তিনি ওয়াশিংটন ডিসিতে গ্রামীণ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করে গ্রামীণের প্রচার ও প্রসার করেছেন, তহবিল সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্য দিয়ে ৪০টির বেশি প্রকল্পে কাজ করেছেন।

তিনি বলেন, ‘স্মল লোনস, বিগ ড্রিমস’ বইয়ে ড. ইউনূসের ক্ষুদ্র ঋণ ও সামাজিক ব্যবসার ধারণাটিকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার বিষয়ে বিশদভাবে লেখা হয়েছে। সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলোর দরিদ্র মানুষগুলো কীভাবে তাদের অবস্থার উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে কাজ করেছে, সে বিষয়ে সুলিখনের মধ্য দিয়ে উঠে এসেছে।

আলোচনার শুরুতে শুভেচ্ছা জানিয়ে ইউপিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহরুখ মহিউদ্দীন বলেন, ‘স্মল লোনস, বিগ ড্রিমস’ বইটি ইউপিএল থেকে সাউথ এশিয়ান তথা বাংলাদেশ এডিশন করার সুযোগ হয়েছে। ১৯৯৬ সালে বইটি প্রথম প্রকাশ হয়। এ ছাড়া প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জরিমন অ্যান্ড আদার্স বইটি প্রথম প্রকাশ করেছেন ইউপিএল-এর প্রতিষ্ঠাতা এমিরেটাস প্রকাশক মহিউদ্দিন আহমদ। এরপর একে একে ওয়ার্ল্ড অফ থ্রি জিরোস, ব্যাংকার্স টু দ্য পুওর, সোশ্যাল বিজনেস—বইগুলো ইউপিএল প্রকাশ করেছে। এবারের বইমেলায় ওয়ার্ল্ড অফ থ্রি জিরোস-এর বাংলা সংস্করণটিও প্রকাশ হবে। এ জন্য ইউনূস সেন্টারের কাছে আমাদের কৃতজ্ঞতা জানাই।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০২৫
এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।