চাঁদপুর: টাইলস্ কাজের ঠিকাদার আল-আমিন শেখ (২৫)। বর্তমানে চাঁদপুর শহরে ‘গোল্ডেন বয়’ নামে তার ব্যাপক পরিচিতি।
আর আল-আমিনের এমন পরিচিতির কারণ তার অভিনব এক পরিকল্পনা ও অধ্যবসায়। আপাদমস্তক সোনালি রঙে আবৃত করে জীবন্ত মূর্তিরূপ ধারণ করেন এই যুবক। একই ঢঙে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকেন দীর্ঘ সময়। যে কেউ দেখলে প্রথমে ভাববেন, সোনায় মোড়ানো কোনো মূর্তি, কোনো স্ট্যাচু।
এভাবেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা মূর্তিরূপ ধারণ করে চাঁদপুর শহরের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করেন আল-আমিন। আর এভাবেই ‘গোল্ডেন বয়’ খ্যাতিটা জুটে গেছে তার। কারণ, জীবন্ত মূর্তি ধারণ করে দীর্ঘসময় একই স্থানে অবস্থান করা ব্যক্তি চাঁদপুরে এর পূর্বে দেখা যায়নি।
বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে এখন আল-আমিনের উপস্থিতি থাকে। বিশেষ করে জেলার প্রধান পর্যটন কেন্দ্র তিন নদীর মোহনা, বড় স্টেশন মোলহেডে প্রায় সময়ই তিনি অবস্থান করেন।
আল-আমিনের এখন স্বপ্ন কনটেন্ট ক্রিয়েটর হবেন।
জানা যায়, ছোট বেলা থেকেই একটু দুষ্টু প্রকৃতির আল-আমিন। প্রাথমিক বিদ্যালয় শেষ করলেও মাধ্যমিকে এসে দুষ্টুমিটা বেড়ে যায় তার। একাধিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হলেও অষ্টম শ্রেণীর পর আর পড়া হয়নি।
এক সময় পরিবারের অভাবের কারণে দুষ্টুমির স্বভাবে লাগাম টানতে হয়, কাজে যোগ দিতে হয় তাকে।
গ্রামের এক টাইলস্ মিস্ত্রির সহযোগী হয়ে কাজ শেখেন। পরে নিজেই হয়ে যান টাইলস্ কাজের ঠিকাদার। দশ বছরের অধিক সময় এই কাজ করে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।
চাঁদপুরে ব্যাপক পরিচিতি পেলেও আল-আমিনের বাড়ি মূলত বাগেরহাট জেলায়। সেখানে শাহজাহান শেখ ও মনোয়ারা বেগমের সংসারে ১৯৯৭ সালে জন্ম তার।
তবে ৮ বছর বয়সে মা মনোয়ারার সঙ্গে চাঁদপুর ফরিদগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ গ্রামে নানা বাড়িতে চলে আসে আল-আমিন। সেখানে আফতাব উদ্দিন বেপারী বাড়িতে মায়ের কাছে বড় হন। মুক্তা আক্তার নামে ছোট বোন আছে তার। তিনি স্থানীয় একটি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়েন।
কথা হয় ‘গোল্ডেন বয়’খ্যাত আল-আমিনের সঙ্গে।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমি ফরিদগঞ্জ নানাবাড়িতেই ছিলাম। এখনো আমার মা-বোন সেখানে। আমি চাঁদপুর শহরের ক্লাব রোডে এক বন্ধুর সঙ্গে থাকি। দীর্ঘ সময় টাইলসের কাজ করায় নানা অসুস্থতা দেখা দেয়। অবসর বসে না থেকে স্মার্ট মোবাইলে ফেসবুক ও ইউটিউব দেখে কনটেন্ট ক্রিয়েটর হওয়ার পরিকল্পনা করি। গত জুন মাস থেকে জীবন্ত মূর্তি ধারণ করে চাঁদপুর শহরের তিন নদীর মোহনা, শপথ চত্বর এলাকায় অবস্থান করছি। ইতোমধ্যে আমি চাঁদপুরের লোকজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছি।
সোনালি রং মেখে এই জীবন্ত মূর্তি হওয়ার ভাবনা কীভাবে এলো প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি ইউরোপের জীবন্ত মূর্তি ধারণ করা ব্যক্তিদের ভিডিও দেখে এটা শিখেছি। তবে এই কাজটি খুব ভালোভাবে করার জন্য তেমন অর্থ নেই আমার কাছে। আর আমি কিছু সামাজিক সচেতনতামূলক কাজে যুক্ত । বিশেষ করে সড়কে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে চলাচল বিষয়ে সতর্কতামূলক প্রচারণা করে আসছি। গোল্ডেন বয় সেজে এসব প্রচারণা চালিয়ে আসছি।
আল-আমিন বলেন, এর আগে গ্রামের বিভিন্ন ব্যবসায় বিনিয়োগ করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। বার বার লোকসান হয়েছে। এখন জীবন্ত মূর্তি ধারণ করে শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষদেরকে বিনোদন দেওয়ার পাশাপাশি কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হওয়ার স্বপ্ন দেখছি। ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি।
তিনি জানান, আমার একটি ভালো ক্যামেরার প্রয়োজন। অন্য কোনো সমস্যা নেই। আমার কাজের জন্য কিছুটা সহযোগিতা করেছেন চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মো. জিল্লুর রহমান। সবার সহযোগিতা থাকলে আমার কাজটি এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব।
বাংলাদেশ সময়: ১২১১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০২৩
এসএএইচ