সাতক্ষীরা: ভোর থেকেই শুরু হয় মুড়ি তৈরি। চলে দুপুর পর্যন্ত।
তাই তো সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ফিংড়ি ইউনিয়নের উত্তর গাভা গ্রাম এখন মুড়ি গ্রাম নামে পরিচিতি পেয়েছে।
মুড়ির চাহিদা সারা বছর থাকলেও রোজার সময় বাড়ে। স্বাদে অন্য মুড়ির চেয়ে ভালো হওয়ায় হাতে ভাজা মুড়ির কদরও বেশি।
স্থানীয়রা জানান, উত্তর গাভা গ্রামের ৮০টি পরিবার মুড়ি তৈরি করেই জীবন-জীবিকা নির্বাহ করেন। বাজারে তাদের হাতে ভাজা মুড়ির বেশ কদর রয়েছে।
এক সময় উত্তর গাভার ১৫০টিরও বেশি পরিবার মুড়ি উৎপাদন ও বাজারজাত করেই জীবিকা নির্বাহ করত। কিন্তু আস্তে আস্তে চালের দাম বাড়া এবং ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় অনেকেই ছেড়ে গেছেন এ পেশা।
উত্তর গাভা গ্রামের ভীম দেবনাথ বলেন, এটা আমাদের বাপ-দাদার পেশা। ছোটবেলা থেকে আমরা এ পেশায় জড়িয়ে রয়েছি। মুড়ি ভাজার ওপরে নির্ভর করে আমাদের সংসার চলে। ভোর থেকেই আমরা মুড়ি ভাজতে শুরু করি। চলে দুপুর পর্যন্ত।
তিনি আরও বলেন, আগে এক বস্তা মুড়িতে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা লাভ হলেও বর্তমানে চাল ও জ্বালানির দাম বাড়ায় তা নেমে ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এতে দুজন মানুষের পারিশ্রমিক ওঠে না। বর্তমানে বাজারও ভালো না।
একই গ্রামের প্রভা রাণী দেবনাথ বলেন, আমরা প্রায় তিন পুরুষ ধরে মুড়ি ভেজে আসছি। আমার বিয়ের আগে আমার শ্বশুর-শাশুড়ি ভাজতেন। তারপর আমরা, এখন আমাদের ছেলে-মেয়েরাও ভাজে। এটা আমাদের রক্তে মিশে আছে। তাই এটা আমাদের পেশা-নেশা দুটোই।
সুচিত্রা রানি দেবনাথ বলেন, আমরা প্রতিদিন ৪০-৫০ কেজি চালের মুড়ি ভেজে থাকি। এক বস্তা চালের মুড়ি ভেজে সব খরচ বাদ দিয়ে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা থাকে। যা বর্তমান সময়ের জন্য একেবারেই সামান্য। ছেলে-মেয়ের লেখাপড়াসহ সংসার চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। পরিবারের খরচ বেড়েছে, তবে আয় বাড়েনি। এ শিল্পে আমাদের বাপ-দাদার স্মৃতি লুকিয়ে আছে। এ কারণে এখনো এ পেশা ধরে রেখেছি। তারপরও টিকিয়ে রাখা কঠিন। আধুনিকায়নের ফলে যে মেশিন বের হয়েছে, সবাই ওই দিকে ঝুঁকছে।
সাতক্ষীরা বিসিকের উপব্যবস্থাপক গোলাম সাকলাইন বলেন, গাভার হাতে ভাজা মুড়ি কেমিক্যাল মুক্ত হওয়ায় খুবই প্রসিদ্ধ। ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় এবং ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় এ কাজে জড়িত পরিবারগুলো আর্থিক সংকটে পড়ছে। আমরা চেষ্টা করছি, তাদের পাশে দাঁড়ানোর।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০২৪
এসআই