ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

প্রেমের দেবতা কিউপিড

সানজিদা সামরিন, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৫
প্রেমের দেবতা কিউপিড

ঢাকা: ভালোবাসা স্বর্গীয়। ভালোবাসা আসে স্বর্গ থেকে।

এর স্বাদ অমৃতের মতো। কথাগুলোর সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত। যুগ যুগ ধরে এ কথাগুলেই কালজয়ী হয়ে আছে। অনেকে বলেন, ভালোবাসা হলো ঈশ্বরের আশীর্বাদ।

গ্রিক পুরাণে, ভালোবাসার দেবতা হলেন কিউপিড। নামটি আমাদের সবার জানা। কিউপিডের তীরে বিদ্ধ হওয়া মানেই ভালোবাসার আশীর্বাদের তালিকায় নিজের নাম লেখানো।

ভ্যালেন্টাইন ডে’র অন্যতম প্রতীক কিউপিড। এক নিষ্পাপ দেবশিশু। ডানা মেলে আকাশে উড়ছে। হাতে তার তীর আর ধনুক। সেই তীর যন্ত্রণা নয় বরং ভালোবাসার আবেগের প্রতীক।

কিউপিডের লক্ষ্য একটাই, ঈশ্বর ও মানুষের দিকে তীর ছুড়ে দেওয়া। তার তীরে বিদ্ধ হয়েই গভীর প্রেমে পড়ে দেবতা ও মানুষ। যুগ যুগ ধরে প্রচলিত গল্পটি যেন গল্প নয়, একটি অদৃশ্য বিশ্বাসে পরিণত হয়েছে মানুষের মনে।


প্রাচীন গ্রিসে কিউপিড এরোস নামে পরিচিত ছিলেন। সৌন্দর্য ও প্রেমের দেবী আফ্রোদিতির পুত্র এরোস। অন্যদিকে, রোমানরা দেবী ভেনাসের পুত্র হিসেবে কিউপিডকে মান্য করে। ভেনাস তাদের প্রেমের দেবী।

রোমান পুরাণে, কিউপিডের প্রেমের কাহিনী খুব জনপ্রিয়। দেবতার প্রেমকাহিনী বলে কথা। সেতো যেন তেন কথা নয়! সার্বজনীন ভালোবাসার এ দিনটিতে গল্পটি না বললেই নয়।

অনেক অনেক আগের কথা। সাইকি ছিলো পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী কন্যা। এদিকে তার সৌন্দর্য্যে হিংসাপরায়ণ হলেন স্বর্গের দেবী ভেনাস। ঈর্ষান্বিত ভেনাস তার পুত্র কিউপিডকে আদেশ দিলেন সাইকিকে হত্যা করার। কিন্তু ইতিমধ্যেই কিউপিড সাইকির প্রেমে পড়েছেন। কিউপিড সাইকিকে বিয়ে করলেন কিন্তু সাইকিকে বললেন, তিনি যেন মৃত মানুষের মতো চোখ বন্ধ করে থাকেন। কিছুতেই যেন চোখ মেলে না তাকান।



সব ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু সাইকির বোনেরা কিউপিডকে দেখার জন্য চোখ মেলে তাকাতে বললেন। সাইকি কিউপিডের দিকে চোখ রাখতেই তিনি গেলেন ভীষণ রেগে। শাস্তি হিসেবে তাকে একা ফেলেই চলে গেলেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে তাদের বাগানসহ বিরাট প্রাসাদটিও নিমিষেই উবে গেল। হঠাৎই সাইকি নিজেকে আবিষ্কার করলেন জনশূন্য এক মাঠে। সাইকির মন বিষাদে ভরে উঠলো। তিনি তার ভালোবাসা কিউপিডকে শত ডেকেও কোনো সাড়া পেলেন না।

শেষপর্যন্ত সাইকি দেবী ভেনাসের দ্বারপ্রান্তে গেলেন। ভেনাস তাকে দেখে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন। সাইকিকে তিনি বললেন, কিউপিডকে তিনি ফিরিয়ে দেবেন যদি সাইকি কয়েকটি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। সাইকি রাজি হলেন। কিন্তু তিনি বুঝতে পারলেন না, ভেনাস তাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতেই একথা বলেছেন।

সাইকিকে ভেনাসের দেওয়া প্রতিটি পরীক্ষাই ছিল অত্যন্ত কঠিন ও ভয়ঙ্কর। সর্বশেষ পরীক্ষায় দেবী ভেনাস সাইকিকে একটি ছোট্ট বাক্স দিয়ে বললেন, সেটা যেন তিনি পাতালপুরীতে রেখে আসেন। ভেনাস আরও বললেন, সেই বাক্সে প্লুটোর স্ত্রী প্রসরপাইনের কিছু সৌন্দর্য নিয়ে আসতে।

পাতালপুরীতে পৌঁছতে হলে সাইকিকে মৃত্যুপুরী পার হতে হবে। আর হ্যাঁ, একটি শর্ত, কিছুতেই বাক্সের মুখ খোলা যাবে না। কিন্তু সাইকি কিছুতেই উত্তেজনা সামলাতে পারলেন না। তিনি যাবার পথেই বাক্সের মুখ খুলে ফেলেন। সঙ্গে সঙ্গেই তার শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। চিরতরে সাইকি হারিয়ে যান মৃতের রাজ্যে।



অনেকদিন পর কিউপিড তার ভালোবাসা সাইকির খোঁজে পাতালপুরীতে যান। চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সাইকির দেহকে সেই বাক্সে পুরে নিয়ে ফিরে আসেন। কিউপিড সাইকিকে ক্ষমা করে দিলেন। আর অন্যান্য দেবদেবীরা কিউপিডের প্রতি সাইকির ভালোবাসা দেখে তাকে দেবীর মর্যাদা দেন। আর কিউপিড তার এ ভালোবাসার অতৃপ্ত স্বাদ দিতেই সবার দিকে ভালোবাসার তীর ছোড়েন।



বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।