ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

২০০ মরদেহের ওপর শপিংমল!

সানজিদা সামরিন, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০১৫
২০০ মরদেহের ওপর শপিংমল!

ঢাকা: ধরুন আপনি সবসময় একটি শপিংমলে কেনাকাটা করতে যান। একসময় জানলেন শপিংমলটি দাঁড়িয়ে রয়েছে শত শত মরদেহের ওপর! আপনি কি সেখানে যাওয়ার জন্য ফের পা বাড়াবেন?

ভাবছেন হয়তো এটা কাল্পনিক গল্পেরই এক অংশ।

সবাইকে থমকে দিয়েই বলতে হচ্ছে যে এটা সত্য একটি ঘটনা।

স্বপ্নের নগরী প্যারিসের মনোপ্রিক্স নামের একটি শপিংমল দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রায় দু’শটি মরদেহের ওপর। শপিংমলটির বেসমেন্ট বাড়ানোর সময় সেখানে কর্মরত ব্যক্তিরা বিষয়টি উদ্ঘাটন করেন। তারা মাটি খোঁড়ার সময় দেখেন সেখানে পড়ে রয়েছে অসংখ্য কঙ্কাল ও ছিন্নভিন্ন হাড়গোড়।

শুধু তাই নয়, সেসব কঙ্কালগুলো সুন্দরভাবে পাঁচ থেকে আটটি ভূগর্ভস্থ চেম্বারে সাজিয়ে রাখা হয়েছে।


ধারণা করা হচ্ছে এখন থেকে পাঁচ শতাব্দী আগে ফ্রান্সের কোনো মহামারিতে মৃতদের মরদেহ এগুলো। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য জাতীয় প্রতিরোধকমূলক প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইএনআরএপি) থেকে প্রত্নতাত্ত্বিকরা ওই স্থানে এসে টানা কয়েকদিন নিরলস কাজ করেন।

পরে তারা মাটির নিচে বিশটি কঙ্কাল ভর্তি সাতটি চেম্বার ও দেড়শোটি কঙ্কাল সমৃদ্ধ আরও একটি চেম্বার আবিষ্কার করেন।

মনোপ্রিক্স সুপারমার্কেটের স্টোর ম্যানেজার প্যাস্কাল রায়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই সুপার মার্কেটটি দ্বাদশ শতাব্দীতে ট্রাইনাইটি নামের একটি  হাসপাতাল ছিলো।

তিনি বলেন, আমরা কিছু হাড়গোড় দেখে আন্দাজ করেছিলাম যে এই স্থানটা সেসময়কার কবর ছিল হয়তো। তবে এত সংখ্যক কঙ্কাল পাওয়া যাবে তা কল্পনায়ও ভাবিনি। তবে অন্য গবেষকরা বলছেন অন্য কথা।


তাদের মতে, এখন থেকে দুশ’ বছর আগে প্যারিসের শহরের সমাধিক্ষেত্রে মৃতদেহের সংখ্যা ছয় মিলিয়ন ছাড়িয়ে গেলে এখানে কিছু মরদেহ স্থানান্তর করা হয়। তবে এ ঘটনা বিশেষজ্ঞদেরও তাক লাগিয়ে দিয়েছে। এক স্থানে এতগুলো কঙ্কালে তারা রীতিমত অবাক।

একসঙ্গে এতগুলো কঙ্কাল ও তাদের সমাধির রূপ দেখে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন চতুর্দশ, পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতাব্দীতে ফ্রান্সে প্লেগের আক্রমণে বহু মানুষ মারা যায়। সে ঘটনার কারণে এটা ঘটতে পারে।

এই গবেষণার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রত্নতাত্ত্বিক ইসাবেল আবেদি জানান, কঙ্কালগুলো দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে তাদের ছুড়ে ফেলা হয়নি, বরং মরদেহগুলো যত্নেই সমাধিস্থ করা হয়।

এসব হাড়গোড়ের ভেতর মধ্যযুগীয় সিরামিকের টুকরো ও মৃতশিল্পের অংশবিশেষও পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন তারা।


তবে কঙ্কালগুলো কোন সময়ের হতে পারে তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা করতে প্রত্নতাত্ত্বিকরা কার্বন ও ডিএনএ টেস্টের ব্যবস্থা নিচ্ছেন। এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাদের আসল গন্তব্য কোথায় হবে তা নির্ধারণ ও সংস্থাপনের যাবতীয় খরচ সরকার নেবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।