ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

‘পল্টি’,‘টারজান’,‘রকেট’এ বুড়িগঙ্গায় উচ্ছল দুরন্ত কৈশোর

ইমরান আহমেদ,স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৩৭ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৫
‘পল্টি’,‘টারজান’,‘রকেট’এ বুড়িগঙ্গায় উচ্ছল দুরন্ত কৈশোর ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: বুড়িগঙ্গার নামটা মাথায় আসলে চোখের সামনে ভেসে উঠবে ময়লা-দুর্গন্ধযুক্ত কালো পানি। কিন্তু বর্ষা শুরু হওয়ার সাথে সাথে বুড়িগঙ্গা যেন বদলে ফেলেছে তার চেনা রূপ।

বর্ষার বদৌলতে কালো ময়লা পানির বদলে বুড়িগঙ্গায় এখন বিরাজ করছে ঘোলা পানি। গন্ধটাও নেই। বুড়িগঙ্গার এমন পরিবর্তনে স্বভাবতই উচ্ছ্বসিত আশপাশের দুরন্ত শিশু-কিশোর ও পথশিশুদের দল। যখন তখন তারা ঝাঁপিয়ে পড়ছে নদীর ঘোলা জলে, সাঁতার কাটছে, খেলছে মনের সুখে।

শুধু শিশুরাই নয় আশপাশের অনেক মানুষও গোসলসহ অন্যান্য কাজ সারছেন এই পানিতে।

শিশুদের লাফ-ঝাঁপ আর নানা রকম ডিগবাজিতে দিনভর উত্তাল বুড়িগঙ্গার জল। এই লাফ-ঝাঁপ আর ডিগবাজিরও আবার নিজেদের মত করে আলাদা নাম দিয়েছে দুরন্ত শিশুর দল।

সরেজমিনে গিয়ে চোখে পড়লো শিশুদের দুরন্তপনা ।   লঞ্চ ঘাটের পনটুনের রেলিংয়ে দাঁড়িয়ে ঝাঁপ দিয়ে পানিতে পড়ছে তারা। কেউ ডিগবাজি দিয়ে পড়ছে। পানিতে পড়ার এসব ভিন্ন ভিন্ন কৌশলের নিজেদের মত করে নামও দিয়েছে তারা। এগুলো হলো- পল্টি,  জাম্বুরা, আটার বস্তা, রকেট, ফ্লাইং আর টারজান। তবে এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় পল্টি এবং রকেট।

পল্টি কিভাবে দেয় ? দেখতে চাইলে দৌঁড়ে আসে মান্না। মান্নার বয়স কত সে বলতে পারে না। স্কুলেও যায় না । কি করা হয় জানতে চাইলে বলে, ‘বোতল টুকাই। লঞ্চ আইয়া ঘাটে থামবার ( থামার পার) বিতরে (ভিতরে) ডুইকা মানুষজনের ফালাইয়া যাওয়া খাওন খাই। মাঝে মধ্যে টেহাও (টাকা) পাওয়া যায়। একবার মোবাইল পাইসিলাম। হেইডা (সেটা) আবার আমারে মাইরা পোশাক ( কুলি) নিয়া গেছে। ’

‘পল্টি’র কথা বলতেই র‌্যালিংয়ের উপর দাঁড়িয়ে উল্টো হয়ে কয়েকটি প্যাঁচ মেরে ঝাঁপিয়ে পড়লো পানিতে। তার পেছনে পেছনে পড়ল কাওসার, সাজ্জাত, কাবিলাসহ অনেকেই। সবাই মান্নার মত একই কাজ করে।

‘রকেট’ কোনটাকে বলে জানতে চাইলে কাওসার বলে, ‘সেইডা (সেটা) হাত সোজা কইরা মাথা নিচে দিয়ে পড়লাম হেইডাই রকেট। ’

দুই পা, হাত দিয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে  ধরে  লাফ দেওয়াকে ‘জাম্বুরা’ বলে। যোগ করলো কাবিলা। তাদের এই উচ্ছ্বলতা দেখে মনে পড়ে গেলো নিজের শৈশব, দুরন্ত কৈশোর। হয়তো গ্রাস করলো ক্ষণিকের নষ্টালজিয়াও।

এদিকে শুধু শিশুরাই নয়, আশেপাশের ছিন্নমূল মানুষদেরও দেখা গেছে বুড়িগঙ্গার ঘোলা জলে গোসল করতে।

তবে পানি পরিবর্তন হলেও বুড়িগঙ্গা এখনও জনস্বাস্থ্যের জন্য মোটেও উপযোগী না বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান।

তিনি বলেন,যদি পানির গতি সচল থাকতো এবং পাহাড় থেকে প্রবাহিত পানি নিয়মিত আসতো তাহলে পানি গোসলের উপযোগী থাকতো। বর্ষার কারণে  অবস্থান পরিবর্তন হলেও বিষাক্ত কেমিক্যাল বুড়িগঙ্গার পানিতে এখনও আছে। তাই এ পানিতে গোসলসহ দৈনন্দিন কাজ করা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৩৬ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৫
আইএএ/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।