ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

ভেষজগুণে অনন্য চুইঝাল

মাহবুবুর রহমান মুন্না, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩০ ঘণ্টা, জুলাই ৩, ২০১৫
ভেষজগুণে অনন্য চুইঝাল ছবি : মানজারুল ইসলাম / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

খুলনা: চুই গাছ মানেই ভেষজগুণের এক অনন্য ওষুধি গাছ। চুইলতার শিকড়, কাণ্ড, পাতা, ফুল-ফল সবই ভেষজগুণ সম্পন্ন।

বলা যায়, পুরো গাছই উপকারী।

চিকিৎসকদের মতে, মানব শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে এ গাছ দারুণ কার্যকর। গাছটির ওষুধি গুণ সম্পর্কে হামদর্দ খুলনা শাখার মেডিকেল অফিসার হাকিম আব্দুল হালিম মোল্লা বাংলানিউজকে বলেন, গ্যাসট্রিক সমস্যা সমাধান, কোষ্ঠকাঠিন্য তাড়াতে, রুচি বাড়াতে এবং ক্ষুধামন্দা দূর করতে কার্যকর ওষুধি গুণাগুণ রয়েছে চুইঝালে। পাকস্থলী ও অন্ত্রের প্রদাহ সারাতে চুইঝাল উপকারী। এছাড়া এটি স্নায়ুবিক উত্তেজনা ও মানসিক অস্থিরতা প্রশমন করে ঘুম আনতে সহায়তা করে। কাশি, কফ, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, রক্তস্বল্পতা, শারীরিক দুর্বলতা কাটাতে এবং শরীরের ব্যথা সারাতে চুইঝালের জুড়ি নেই।

খুলনার একটি বেসরকারি হাসপাতালের গাইনী ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ডা. আঞ্জুমান আরা চুইঝালের ভেষজগুণ সম্পর্কে বাংলানিউজকে বলেন, প্রসূতি মায়েদের শরীরের ব্যাথা কমাতে চুইঝালের জুড়ি নেই। এছাড়া সর্দির সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে মাত্র এক ইঞ্চি পরিমাণ চুইঝালের সঙ্গে আদা পিষে খেতে পারেন। সর্দি পালাবে।

এতো গেল চুইঝালের ওষুধি গুণাগুণ। স্বাদেও দারুণ এ চুইঝাল। যে কোনো মাংসের সঙ্গে খেতেও এর জুড়ি নেই। বিশেষ করে খুলনাঞ্চলে বাড়িতে আত্মীয়স্বজন এলে চুইয়ের সঙ্গে মাংস রান্না খাদ্য তালিকায় থাকেই।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার উপ-পরিচালক আব্দুল লতিফ বাংলানিউজকে বলেন, চুই লতা জাতীয় গাছ। এর কাণ্ড ধূসর এবং পাতা পান পাতার মতো সবুজ রঙের। চুইঝাল খেতে ঝাল হলেও এতে ওষুধি গুণ রয়েছে। মসলা হিসেবে সারা দেশে রয়েছে এর জনপ্রিয়তা।  
গাছের মতো দেখতে চুই গাছ আম, জাম, সুপারি, নারিকেল গাছসহ বিভিন্ন গাছে পানের মতো লতিয়ে উঠে বাড়ে। কিছু দিনের মধ্যে এ গাছ বড় হয়, জানালেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার অতিরিক্ত উপ-পরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস।

তিনি বলেন, খুলনার রূপসা, পাইকগাছা, কয়রা, দাকোপ, তেরখাদা, ফুলতলা, ডুমুরিয়া, বাগেরহাটের যাত্রাপুর, মোল্লাহাট, ফকিরহাট উপজেলার অনেক বাড়িতে চুইঝালের চাষ করা হয়।

ডুমুরিয়াসহ বেশ কিছু স্থানে এ বছর বাণিজ্যিকভাবে অনেকে চুইঝালের চাষ শুরু করেছেন, জানান তিনি।

এবার খুলনা বিভাগীয় বৃক্ষমেলায়ও মিলছে চুইঝাল গাছের কলম। এ বৃক্ষমেলার সরদার নার্সারির সাইফুল ইসলাম জানালেন, আমরা চুইঝালের কলম চারা তৈরি করি। যা বৃক্ষমেলায় বিক্রির জন্য আনা হয়েছে। দিন দিন চুইয়ের জনপ্রিয়তা বাড়ায় ক্রেতারাও এটি কিনছেন।

বর্তমানে খুলনায় প্রতি কেজি চুইঝাল বিক্রি হচ্ছে ৬শ’ থেকে ১ হাজার টাকায়। এক সময়ের গ্রামগঞ্জের গরীবের খাবার চুইঝাল এখন ধনী ভোজন বিলাসীদের খাবারে পরিণত হয়েছে, জানালেন নগরীর বড় বাজারের চুইঝাল বিক্রেতা আব্দুল্লাহ।

তিনি বলেন, খুলনাঞ্চলের চুইঝাল সবচেয়ে বিখ্যাত। এটি শুধু মাংস নয় তরকারি, ডাল, এমনকি মাছের মধ্যে দিয়েও খাওয়া যায়।

চুইঝালের চাষ পদ্ধতি: সাধারণত দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটিতে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ এবং আশ্বিন-কার্তিক মাসে চুইঝাল রোপন করতে হয়। পানি নিষ্কাশন সুবিধাযুক্ত ও ছায়াময় উঁচু জমিতে এর ফলন ভালো হয়। কাটিং পদ্ধতিতে এর কাণ্ড বা শাখা ৫০ থেকে ৭৫ সে. মি. লম্বা করে কেটে সরাসরি মাটিতে রোপণ করা হয়।

এতে সাধারণত কোনো রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয় না। শাখা রোপণের আগে গর্তে পচা আবর্জনা বা ছাই ব্যবহার করা হয়। শুকনো মৌসুমে পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হয়।

চুই সাধারণত রোপণের ১ বছরের মাথায় খাওয়ার উপযোগী হয়। তবে ভাল ফলনের জন্য ৫/৬ বছরের গাছই উত্তম। হেক্টরপ্রতি ফলন পাওয়া যায় ২ থেকে ২ দশমিক ৫ মে. টন। ৫/৬ বছরের একটি গাছ থেকে প্রায় ১০ থেকে ১৫ কেজি ফলন পাওয়া যায়।

চুইয়ের কাণ্ড ও ডাল খাওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়। আগে খুলনাঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে চুইঝালের চাষ না থাকলেও বর্তমানে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় অনেকে বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ শুরু করেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, জুলাই ০৩, ২০১৫
এমআরএম/আরএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।