ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

কেন আপনার বন্ধুদের বন্ধুসংখ্যা আপনার বন্ধুসংখ্যার চেয়ে বেশি

ফারাহ্‌ মাহমুদ, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৫
কেন আপনার বন্ধুদের বন্ধুসংখ্যা আপনার বন্ধুসংখ্যার চেয়ে বেশি

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে মানুষ এখন সহজেই অনেক বেশি মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করতে পারছে। অনেকেরই ভার্চুয়াল জগতের বন্ধুতালিকায় বিশাল অংকের বন্ধু আছে।

মানুষ এখন অন্য মানুষের সঙ্গে অনেক বেশি কানেক্টেড। এটা গাণিতিকভাবে প্রমাণিত যে, একজন সাধারণ ফেসবুক ব্যবহারকারীর যতজন বন্ধু আছে, তার বন্ধুদের বন্ধুর সংখ্যা গড়ে তার চেয়ে বেশি। তার মানে আপনার বন্ধুর সংখ্যা সবসময়ই আপনার বন্ধুদের বন্ধুর গড় সংখ্যার চেয়ে কম। শুধু ভার্চুয়াল জগতের জন্যে নয়, বাস্তবেও এটা সত্য।

ব্যাপারটা এত অদ্ভুত যে, সমাজবিজ্ঞানী স্কট এল ফেল্ড এর নাম দিয়েছেন ‘ফ্রেন্ডশিপ প্যারাডক্স’। ‘কেন আপনার বন্ধুদের বন্ধুসংখ্যা আপনার বন্ধুসংখ্যার চেয়ে বেশি’—এই নামে ১৯৯১ সালে তিনি একটি পেপার তৈরি করেন।

ফ্রেন্ডশিপ প্যারাডক্স বোঝার জন্যে একটা সরল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কল্পনা করুন যেখানে সদস্য মাত্র ৪ জন—আসিফ, আরিফ, শরিফ এবং জারিফ। এখন মনে করুন, আসিফের শুধু একজন বন্ধু আরিফ। শরিফ ও জারিফের বন্ধুতালিকায়ও আরিফ আছে। এদিকে শরিফ ও জারিফ আবার পরস্পরের বন্ধু। হিসেব করলে দেখা যাবে আসিফ, আরিফ, শরিফ এবং জারিফের যথাক্রমে ১, ৩, ২ ও ২ জন করে বন্ধু আছে। অর্থাৎ তাদের সবার বন্ধু সংখ্যা মোট ৮। গড়ে প্রত্যেকের ২ জন করে বন্ধু আছে। এখন দেখা যাক তাদের বন্ধুর বন্ধুর (Friends of friends) সংখ্যা কত।

আসিফের একমাত্র বন্ধু আরিফ যার বন্ধু আছে ৩ জন। শরিফের বন্ধু হলো আরিফ ও জারিফ—যাদের বন্ধুসংখ্যা মোট ৫। এদিকে জারিফের দুই বন্ধু আরিফ ও শরিফ—যাদের বন্ধুসংখ্যা মোট ৫। আর আরিফের বন্ধু আসিফ, শরিফ ও জারিফ—যাদের বন্ধুসংখ্যা মোট ৫। তাহলে বন্ধুদের বন্ধুর সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ১৮। কিন্তু সবার মোট বন্ধুসংখ্যা আগের মতোই আছে ৮। তাহলে বন্ধুদের বন্ধুর গড় সংখ্যা দাঁড়ায় ২.২৫; যা প্রত্যেকের গড় বন্ধুসংখ্যা ২ এর বেশি। তারমানে বন্ধুদের বন্ধুর সংখ্যা সবসময়ই বেশি।

অর্থাৎ গণিতের হিসাব বলে বেশিরভাগ মানুষের বন্ধুসংখ্যা তার বন্ধুর বন্ধুসংখ্যার চেয়ে কম। এর কারণ সবার বন্ধুতালিকায়ই এমন কিছু বন্ধু থাকে যাদের বন্ধুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি (উপরের উদাহরণ অনুযায়ী আরিফ)। তাই গড় করলে বন্ধুদের বন্ধুর সংখ্যা সবসময়ই বেশি আসে। উপরের হিসাব সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের জন্য প্রযোজ্য। টুইটার পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে একজন সাধারণ টুইটার ব্যবহারকারীর ফলোয়ার সংখ্যা, তার ফলোয়ারদের ফলোয়ার সংখ্যার চেয়ে কম।

এমনিতে বেশ গুরুত্বহীন মনে হলেও ‘ফ্রেন্ডশিপ প্যারাডক্স’ ব্যবহার করে সহজেই বের করা যায় একটা ছোঁয়াচে রোগ কত দ্রুত ছড়াবে তার হিসাব। তাছাড়া এই প্যারাডক্স অন্যান্য ক্ষেত্রেও সত্য। এমনকি বেশিরভাগ মানুষই মনে করে তাদের বন্ধুরা তাদের চেয়ে বেশি ধনী, বেশি সুখি কিংবা বেশি সফল। বিশেষ করে যারা বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের নিয়মিত ও সক্রিয় ব্যবহারকারী তারা নিজেদেরকে তাদের বন্ধুদের চেয়ে অসুখি মনে করে।

সোর্স : উইকিপিডিয়া ও দ্য ইকোনোমিস্ট

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৫
এফএম/টিকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।