ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

সুন্দরবন এক্সপ্রেস থেকে মাহমুদ মেনন

আউশের চিড়া ও তার কারিগরের গল্প

মাহমুদ মেনন, হেড অব নিউজ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৫
আউশের চিড়া ও তার কারিগরের গল্প ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সুন্দরবন এক্সপ্রেস থেকে: জামতৈল স্টেশন থেকে চিড়াওয়ালা সুলতানের কণ্ঠ অন্য ফেরিওয়ালাদের চেয়ে একটু আলাদা ঠেকলো। কণ্ঠে দৃঢ়তা আছে, আর যা বলছেন, তা বেশ আস্থা নিয়েই।

বক্তব্য অন্যদের মতোই 'আমার চিড়া, সবার সেরা'।

কিন্তু আস্থার কারণ কি?

সুন্দরবন এক্সপ্রেসের 'ঞ' বগিটা শোভন শ্রেণীর। বারোয়ারি যাত্রীর জন্যই বুঝি বরাদ্দ। আর সে কারণে ফেরিওয়ালাদের ভিড়টাও বেশি। পাশের সিটের যাত্রী, বলা চলে স্টেশনে স্টেশনে বদল হয়েছে। ঢাকার শেষ সীমান্তে সাতকামাইর স্টেশন থেকে যে বুড়ো-বুড়ি উঠে সিট না পেয়ে মেঝেতে ব্যাগের ওপর বসেছিলেন, তাদেরও দু’জনের স্থান হয়েছে সিটে। দীর্ঘপথ দাঁড়িয়ে থেকে বসতে পেরেছে তাদের কিশোর নাতিটিও।

এমনই ভিড়ে বগিতে যখন চিড়েচ্যাপ্টা দশা তখনই চিড়ার বক্স নিয়ে সুলতানের উপস্থিতি।

অন্যদের মতো, 'এই ঘটিগরম' বলে হাঁক দিলেন না, তবে শুরুটা এভাবে, ‌আপনারা সবাই অনেক চিড়াই খেয়েছেন, এবার একটু আমার চিড়া খেয়ে দেখেন। ' এই ঘটিগরম চিড়া, নিজের হাতে বানানো, বাড়িতে ভেজে এনেছি। গরম গরম চিড়া। আর এই চিড়া আউশ ধানের। '

এই পথে যারা নিয়মিত যাত্রী, তাদের হাতে হাতে দ্রুতই পৌঁছে যেতে লাগলো সুলতানের চিড়েভাজা। পাঁচ টাকায় এক ঠোঙা। ছোট কাগজের টুকরো পেঁচিয়ে ঠোঙা বানিয়ে বানিয়ে তা তুলে দিচ্ছেন ক্রেতাদের হাতে। বোঝা গেলো সুলতানের চিড়া জনপ্রিয়। অন্তত এই সুন্দরবন এক্সপ্রেসে।

সিরাজগঞ্জর উল্লাপাড়ার শাহপুর গ্রামের সুলতান এই ট্রেনেই বেশি ফেরি করেন চিড়া ভাজা। যাত্রীদের খাঁটি আউশ ধানের চিড়া খাওয়াতে তার চেষ্টার কমতি নেই।

সারা বছর যাতে চিড়া খাওয়াতে পারেন, সেজন্য একই মানের, একই স্বাদের জন্য ধান কিনে মজুত করে রাখেন।

দুই মন করে ধান ভাঙান আর তা দিয়ে চিড়া ভেজে বিক্রি শেষ হলে আবার ভাঙান।

জানালেন সারাদিন চিড়া বিক্রি করলে সাড়ে তিনশ' থেকে চারশ' টাকা পর্যন্ত আয় হয়। তা দিয়েই পাঁচ সদস্যের সংসার চলে। প্রতিদিন বিক্রি হয়, পাঁচ থেকে ছয় কেজি চিড়া।

সুলতানের সঙ্গে আলাপচারিতার শেষদিকে জানা গেলো, এই চিড়ার মূল কারিগর তার স্ত্রী। তিনিই প্রতিদিন কিছুটা চানাচুরের মিশ্রণে, আর মসলা মাখিয়ে চিড়া ভেজে দেন। আর স্বাদের সেই চিড়া ট্রেনে ট্রেনে ফেরি করে ফেরেন সুলতান।

তাজা ভাজা চিড়া স্বামীর হাতে তুলে দিতে তাকে খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠতে হয়। ভাজতে হয় ছয় কেজি পরিমাণ চিড়া। যা বিক্রি করেই চলে গোটা পরিবার।

গ্রামে অতি সাধারণ নারীরাও ঘরকন্নার কাজের পাশাপাশি এভাবে কতশতভাবেই যে অর্থনীতির চাকা ঘোরাচ্ছেন, তাদের কথা কেউ মনে রাখে। তবে সুলতানদের মতো বিক্রেতারা স্ত্রীর এই অবদানের কথা যখন পথে-ঘাটেও স্বীকৃতি দিতে শুরু করেছেন তাতে পরিস্থিতি পাল্টাবে নিশ্চয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৫
এমএমকে/এএ

** প্ল্যাটফর্মে বস্তা-বস্তা ডাক, ডিজিটালে চাপ কমছে
** সাড়ে ৩ ঘণ্টা বিলম্বের কথা জানতেও দেড় ঘণ্টা বিলম্ব

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।