ইংরেজি মিথ শব্দটি এসেছে গ্রিক ‘মিথস’ শব্দ থেকে, যার অর্থ গল্প। যতই এর অর্থ গল্প হোক না কেন, বিশ্বের প্রায় প্রতিটা দেশেই এমন কিছু মিথ থাকে, যার কোনো ভিত্তি না থাকলেও মানুষ তা বিশ্বাস করে।
প্রথম পর্ব দেখতে ক্লিক করুন
৬. গর্ভবতী নারী
গর্ভবতী নারীদের ব্যাপারে নাইজেরিয়ার বেশিরভাগ গোত্র ও উপজাতিগুলোর মধ্যে বিভিন্ন সংস্কার প্রচলিত আছে। আইজো ও ইয়োরুবাসের মতো কিছু গোত্র মনে করে, গর্ভে সন্তান থাকা অবস্থায় মুখোশধারী কাউকে দেখা উচিত নয় নারীদের। দেখলে সন্তানও ওই রকমই হবে।
কিছু এলাকায় প্রচলতি আছে, পা মেলে দিয়ে যদি কোনো গর্ভবতী নারী বসে থাকে, তাহলে তার পা মাড়ানো উচিত নয়। এতে করে তার সন্তানের চেহারা পা মাড়ানো লোকের মতো হবে, নতুবা দুর্ভাগ্য কখনোই শিশুর পিছু ছাড়বে না।
৭. জিন
জিন সম্পর্কে মুসলিমদের মধ্যেই গল্প বেশি। যেসব বোর্ডিং স্কুলে মুসলিম শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি, সেসব স্কুলে জিনের ভয়টাও তাই বেশি।
কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারে না, জিনেরা দেখতে আসলে কেমন। তবে সবাই একমত, তারা খুব ছোট আকৃতির এবং কখনো কখনো অজেয়। প্রচলিত আছে, কেউ যদি জিনদের বাড়িতে পা রাখে, বা তাদের সন্তান অথবা পবিত্র জল মাড়ায়, জিনরা সেক্ষেত্রে মাড়ানো ব্যক্তিটিকে হত্যা করবেই। এক্ষেত্রে ক্ষমা চাওয়ারও সুযোগ নেই, কারণ অপরাধী নিজেও জানতে পারে না, কখন কিভাবে সে অপরাধ করেছে।
বেশিরভাগেরই বিশ্বাস, উঁইয়ের ঢিঁবিতে জিনদের বসবাস। আর এ কারণে নাইজেরিয়ায় উঁইঢিঁবি ধ্বংস করা নিষেধ।
৮. জংলী শিশু
রাতের আঁধারে সামান্য একটু রহস্যময় শব্দও যেকোন বীরের পিলে চমকে দেয়। বিশেষত, যদি তা কোনো শিশুর কান্নার আওয়াজ হয়, তাহলে তো কথাই নেই। নাইজেরিয়ায় প্রচলিত আছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ ধরনের রহস্যময় শিশুর কান্না আসলে জংলী শিশুদেরই হয়ে থাকে।
নাইজেরিয়াজুড়ে বোর্ডিং স্কুলগুলোয় শিক্ষার্থীদের জংলী শিশুদের ভয় দেখানো হয়। রাতে যেন শিক্ষার্থীরা বাইরে না যায় এবং নিজেদের পড়ায় মন দেয়—তার জন্য সচেতনভাবেই এ ভয়টা দেখানো হয়।
গল্পটা এমন: শান্ত রাতে যখন হালকা হিমেল হাওয়ায় চোখ জুড়িয়ে আসে, তেমন সময় শিশুর কান্নার শব্দ শোনা যায়। মনে হবে, সত্যিই কোনো শিশু কাঁদছে। কখনো কখনো শিশুটি সাহায্যের আবেদনও জানাবে। এ সময় কেউ যদি তাকে সাহায্য করতে বাইরে যায়, সে তার সামনে লাল চোখের ও ধারালো দাঁতের এক শিশু দেখতে পাবে। এরপর সাহায্যকারীটিকে কোথাও আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।
কেউ কেউ বলে, এসব জংলী শিশুরা ঘটনাস্থলেই সাহায্যকারীকে খেয়ে ফেলে। আবার অনেকের বিশ্বাস, শিশুরা সাহায্য করতে আসা ব্যক্তিকে টেনে নরকে নিয়ে চলে যায়।
৯. শয়তানের সঙ্গীত
কখনো এমন হয়, বাদ্যবাজনা ছাড়াই একজন কেউ নেচে চলেছে। এক্ষেত্রে জুতো কোথায় আছে, সে বিষয়ে খোঁজ রাখতে জোর দিয়ে থাকে নাইজেরিয়ার মানুষ। অনেকেই মনে করে, শয়তানের সঙ্গীতের তালেই মানুষ সাধারণত এভাবে নাচে।
প্রচলিত আছে, রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় জুতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখে অথচ ঘুম ভাঙার পর সেই জুতো বিছানার পাশে গোছানো অবস্থায় পাওয়া যায় যাদের, তাদের ক্ষেত্রেই এরকম প্রলয়নৃত্যে মেতে ওঠা সম্ভব। শয়তানের কারসাজিতেই এমনটা হয়ে থাকে।
১০. সুন্দর বেণী
বোর্ডিং স্কুলগুলোতেই বেণী সংক্রান্ত গল্পটি প্রচলিত। এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো, নাইজেরিয়ার বেশিরভাগ স্কুলেই মেয়েদের বেণী করে চুল বাঁধা বাধ্যতামূলক।
এবার এ সংক্রান্ত গল্পটা বলা যাক। কিছুদিন আগে এক মেয়ে ছিল, যার চুলগুলো খুবই সুন্দর। সবসময়ই তার চুল খুব সুন্দরভাবে বেণী করা থাকত। কেউ যদি তাকে জিজ্ঞেস করত, কে এমন বেণী করে দিয়েছে, কোনো উত্তর দিত না সে। একটা সময় মানুষ প্রশ্ন করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেল। এক রাতে ওই মেয়ের এক রুমমেট হঠাৎ জেগে দেখল, মেয়েটা ধড় থেকে মাথা খুলে সামনে রেখে নিজের চুল নিজেই আঁচড়াচ্ছে। এ দৃশ্য দেখে ওই রুমমেট চিৎকার করে ওঠে। তবে এরপর মাথাহীন খুলে রাখা মেয়ের বা তার রুমমেটের কী ঘটেছিল, সে ব্যাপারে কোনো তথ্য পাওয়া যায় না।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৫
আরএইচ/টিকে
ফিচার
নাইজেরিয়ার উদ্ভট ১০ মিথ (দ্বিতীয় পর্ব)
রাজিউল হাসান, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।