(সিদ্ধিরগঞ্জ) শীতলক্ষ্যার তীর থেকে ফিরে:
‘এই ঘাটের বয়স কত?’
- 'ওরে সর্বনাশ…! তা আমার বাপ-দাদাও কইবার পারতো না’। এ কথা বলে ৬৮ বছর বয়সী মো. সিরাজুল ইসলাম বিস্ময়বোধক দৃষ্টি নিয়ে চেয়ে থাকলেন।
তরুণ বয়সে প্রথম দিকে সিদ্ধিরগঞ্জ বাজারে খাবার হোটেলের ব্যবসা করতেন সিরাজুল। ব্যবসায় সুবিধা করতে না পেরে তা ছেড়ে মাঝির কাজ নিয়েছেন। তখন তার বয়স আঠারো বছর।
সেই থেকে বৈঠা হাতে নাও বাইতেই চলে গেলো অর্ধশত বছর। নিজের ষোল হাত দৈর্ঘ্যের ডিঙি নৌকা আছে। সেই নৌকাই তার রুটি-রুজি আর বেঁচে থাকার ভরসা।
মঙ্গলবার (২২ ডিসেম্বর) শেষ বিকেলে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ সাইলোর পাশে খেয়াঘাটের বৃদ্ধ মাঝি সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে গল্পে গল্পে এমনটাই জানা যায়।
‘চাওয়া-পাওয়া কী থাকলো জীবনে?’- এমন প্রশ্ন লুফে নিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সিরাজুলের প্রায় সমবয়সী মাঝি মো. আব্দুর রউফ (৬২) হেসে কুটকুটি হয়ে বললেন, ‘কী আর পাইতো (পাবেন) সিরাজ ভাই, চার পোলাপান ছাড়া?’
চার সন্তানের জনক সিরাজ জানালেন, তার দুই ছেলে, দুই মেয়ে। দু’জনের বিয়ে দিয়েছেন। আর দু’জন এখনো বাকি। জীবন সায়াহ্নে এসেও সংসারের ঘানি তাকেই টানতে হয়।
ঘাটের এপারের নাম সিদ্ধিরগঞ্জ বাজার খেয়াঘাট, ওপারের নাম কুতুবপুর ঘাট। ওপারের সোনারগাঁও এলাকার কাঁচপুর ইউনিয়নের কতুবপুর বাজারের পাশে তার বাড়ি।
ঘাটে প্রতিদিন দুই শিফটে ২২টি নৌকা চলে। প্রথম শিফটে ১১টি নৌকা ফজরের আজানের পর থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত চলে। দ্বিতীয় শিফট চালু থাকে বেলা ২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত।
সব পেশার মানুষই এ ঘাট দিয়ে পার হন। প্রতি পারে যাত্রীদের গুণতে পাঁচ টাকা। মাঝিরা কাজ শেষে ২৫০-৩০০ টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরেন।
কথা হলো মো. আনোয়ার হোসেন (৩৫), আরিফ হোসেনসহ (৩২) আরো বেশ কিছু মাঝির সঙ্গে। তারা বলেন, ‘আমগো দিন চইলা যাইতাছে, ভবিষ্যৎ কী অইতো জানি না?’
ঘাটের প্রায় সব মাঝিই স্থানীয় বাসিন্দা। সবারই নিজস্ব নাও আছে। আর তা দিয়ে চলছে দিনের পর দিন খেয়া পারাপার। বিকেলে অল্প-স্বল্প দর্শণার্থীরা এখানে ঘুরতে আসেন। কেউ কেউ নৌকা রিজার্ভ করে ঘোরেন। সেক্ষেত্রে একটু বাড়তি কামাই হয় মাঝিদের।
কখনো সখনো মাঝিদের পরিবারের ছোট ছেলেরা নৌকায় এসে বড়দের কাছ থেকে বৈঠা মারার তালিম নেয়। তবে কী এই শিশুদেরও ভবিষ্যৎ বাঁধা পড়বে পূর্ব পুরুষের নৌকা-বৈঠায়?
মাঝিদের সঙ্গে আলাপচারিতায় ততক্ষণে ডুবে গেলো পশ্চিম আকাশের সূর্য। সাঙ্গ হলো জীবন নৌকার আরো একটি দিন..
বাংলাদেশ সময়: ০০৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৫
টিআই/এএসআর