ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

ভেজ অর ননভেজ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৬
ভেজ অর ননভেজ ছবি:বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

আহমেদাবাদ থেকে ফিরে: পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া রেলস্টেশন থেকে দিল্লি যেতে যাত্রীদের আস্থা রাজধানী, শতাব্দী অথবা দূরন্ত এক্সপ্রেসে। তুলনামূলক সময় কম ও ভালো সেবার জন্য নাম আছে এ ট্রেনগুলোর।

বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসা, পড়াশোনা, ভ্রমণের কারণেই বেশি যাতায়াত দিল্লিতে। তাদের অধিকাংশের পছন্দও এসব ট্রেন।

রাজধানী, শতাব্দী কিংবা দূরন্তে ভ্রমণ মানেই জম্পেশ খানাপিনা। বিকেলের দিকে ট্রেনে চাপার পরপরই রেল কর্তৃপক্ষের তরফে হালকা খাবার পরিবেশন করা হয়। এমন খাবার চলে নৈশভোজের আগ পর্যন্ত। পরিবেশনকারীরা যাত্রীদের কাছ থেকে জেনে নেন তিনি ভেজ না ননভেজ খাবার খাবেন। পরে চাহিদা অনুযায়ী নোট নিয়ে পরিবেশন করা হয় খাবার।

১৮ ঘণ্টার এ জার্নিতে যাত্রীদের টিকিটের সঙ্গে খাবারের দামটাও নিয়ে নেওয়া হয়। অনেককে বলতে শোনা যায়, লোভনীয় খাবারের জন্যই তারা রেলে ভ্রমণ করেন।

তবে বাঙালিরা অধিকাংশই জানিয়ে দেন ননভেজ। অবাঙালি হলে তারা মেন্যুতে ভেজের কথিই জানিয়ে দেন বেশি। গতমাসে কলকাতা থেকে গুজরাটের প্রাচীন শহর আহমেদাবাদে রেলে যেতে বেশ একটা অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়। দেখি কামরার আগে-পিছের কামরায় সবাই ভেজ। শুধু আমরা তিনজন বাঙালিই ননভেজ।

আগেই জেনে নিয়েছিলাম ‘পোরবন্দর’ রেলে খাবার কিনে খেতে হবে। টিকিটের সঙ্গে খাবারের দাম ধরা হচ্ছে না। রেলে বা পথে কি খাবার পাই না পাই তাই আমরা সঙ্গে করে নিয়ে উঠেছিলাম ভাত-রুটি-পরোটা-তরকারির সঙ্গে মুরগির মাংস। ছিলো ভাজা মাছও।

হাওড়া থেকে ট্রেন ছাড়ার আধাঘণ্টা বাদে আধো আলো-আঁধারিতে ভাত-মাছ-মাংস দিয়ে রাতের খাবার সেরে নিলাম। পরদিন সকালে ব্রেকফাস্ট সেরে নিলাম সঙ্গে আনা রুটি-পরোটা-মাংস দিয়ে।

কিন্তু দুপুরে আমাদের ননভেজ খাবার দেখে সঙ্গের যাত্রীরা কিছুটা অস্বস্তি বোধ করছিলেন বলেই মনে হলো। অধিকাংশই ভেজ খাবার অর্ডার দিলেন। মেন্যুতে ভাতসহ রুটি, আলুর তরকারি ডাল।  

‘পোরবন্দর’ ওই রেলটাতে করে আড়াই হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে আহমেদাবাদ যেতে সময় লেগেছিল ৩৪ ঘণ্টা। ওই রেলে চা-কফির ব্যবস্থা ছিলো। দুটো মারি বিস্কিটের সঙ্গে এককাপ চা ১০ টাকা। দাম কমই। আহমেদাবাদ বা রাজধানী গান্ধীনগরে গাছের তলায় টংঘর বা দোকানে বসে চা পান করুন, মূল্য ১০ টাকা।

হাওড়া থেকে ট্রেন ছেড়েছিল ঘড়ির কাঁটা ধরে রাত ১০টা ৫৫ মিনিটেই। একদিন-একরাত পার করে পৌঁছেছিল সকাল নয়টায়। আহমেদাবাদ যাচ্ছি প্রথমবারের মতো। একেবারেই অচেনা জায়গা। তেমন কাউকে পেলাম না যে তার কাছ থেকে দিক-নির্দেশনা নেবো।

তবে খোঁজ পেলাম অধুনালুপ্ত বাংলাদেশ অবজারভারের চিফ অ্যাকাউন্ট্যান্ট স্বর্গীয় অজিত দত্তের নাতি ভিকির সঙ্গে। আহমেদাবাদের বালাজী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্র সে। ভারত সরকারের বৃত্তি পেয়ে সেখানে পড়তে গিয়েছে। ওর গাইড মতো আমাদের গন্তব্যে যেতে আর সেখানে থাকতে অসুবিধা হয়নি।

আহমেদাবাদ শহরে চলতে-ফিরতে চোখে পড়লো না ননভেজ রেস্টুরেন্ট। সেখানে নগরবাসী প্রচুর গাইগরু পালন করেন। তাই দুধ সস্তা- ভেজালহীন প্রতি কিলো ২০ টাকা। কিন্তু এতো বড়ো শহরে ২/১টা বাদে তেমন একটা মিষ্টির দোকান চোখে পড়লো না।

খেয়াল ছিলো না যে কারও কাছে জেনে নেবো যে দুধের এতো সহজলভ্যতা থাকা সত্ত্বেও শহরে মিষ্টির দোকান কম কেন। দেখা মেলেনি মাছ-মাংসের দোকানও। ইস্কন এসজি হাইওয়ে সংলগ্ন একটি লোককে দেখলাম ডিম-পাউরুটি বিক্রি করতে। কলকাতায় প্রতি পিস ডিম সাড়ে চার টাকা। আর আহমেদাবাদে ৬ টাকা পিস।

ওখানে একজন বাঙালি জানালেন, তিনি ডিম ভেজে খান না। কেননা ঘ্রাণে পাশের বাড়ির লোকে আপত্তি জানায়। তাই তিনি সিদ্ধ করে নেন!

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৬

এসএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।