মহাস্থান জাদুঘর ঘুরে: সুঙ্গ-মুসলিম আমলের ইতিহাস-ঐতিহ্যের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আজকের মহাস্থান জাদুঘর। কেননা এসব আমলের প্রায় ২৬৮৭টি প্রত্মবস্তু সংরক্ষিত রয়েছে এ জাদুঘরে।
মহাস্থানগড় ও আশপাশের এলাকা প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান হিসেবে রয়েছে খ্যাতির চূড়ায়। খননের মাধ্যমে এসব স্থান থেকে নানা সময়ে বেরিয়ে এসেছে নানা ধরনের মূল্যবান প্রত্নতত্ত্ব সম্পদ। দেশের বিভিন্ন এলাকাতেও প্রায়ই সন্ধান মিলছে প্রত্নতত্ত্ব সামগ্রীর। খনন থেকে প্রাপ্ত ও সংগ্রহীত প্রত্নবস্তু দিয়ে সাজানো এ জাদুঘর।
বগুড়ার মহাস্থানগড় লাগোয়া ইতিহাস-ঐতিহ্য সমৃদ্ধ প্রত্নতাত্ত্বিক মহাস্থান জাদুঘরে গেলে এসব তথ্য উঠে আসে।
মহাস্থানগড় আশপাশের এলাকা খননের ফলে প্রাপ্ত এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাওয়া প্রত্নতত্ত্ব সম্পদ সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের জন্য ১৯৬৭ সালে স্থাপন করা হয় মহাস্থান জাদুঘর। এখানে সংরক্ষিত রয়েছে তৃতীয় খ্রিষ্টপূর্ব থেকে পঞ্চদশ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সময়ে পাওয়া নানা ধরনের প্রত্নবস্তু।
এরমধ্যে উত্তরাঞ্চলীয় কালো চকচকে মৃৎপাত্রের টুকরো, দ্বিতীয় খ্রিষ্টপূর্ব সুঙ্গ আমলের কারুকার্য খচিত পোড়ামাটির ফলক, সাঁচে ঢালাইকৃত মূদ্রা, চতুর্থ ও পঞ্চম খ্রিষ্টাব্দ গুপ্ত আমলের পোড়ামাটির মাথা, ভাসুবিহার থেকে প্রাপ্ত পঞ্চম থেকে ষষ্ট শতকের শতকের পোড়ামাটির ফলক, অষ্টম ও নবম খ্রিষ্টাব্দের মূল্যবান পাথরের বাটিকা, বেলে পাথরের বুদ্ধমূর্তি, বেলে পাথরের নকশাকৃত পিলার, পোড়ামাটির পাত্র, নবম ও দশম খ্রিষ্টাব্দের বিষ্ণুমূর্তি, অবলিকেতেশ্বর মূর্তি, দত্তাত্রেয় মূর্তি, দশম ও একাদশ খ্রিষ্টাব্দের বিষ্ণু মূর্তি, চামর ধারিনী, উমামহেশ্বর, সূর্য মূর্তি, লক্ষ্মী-কার্তিকসহ নানা মূর্তি, দ্বাদশ থেকে ত্রয়োদশ খ্রিষ্টাব্দের সংস্কৃত ভাষার শিলালিপি, পঞ্চদশ খ্রিষ্টাব্দের মুসলিম আমল শিলালিপি, অলঙ্কৃত ইট, চকচকে পাত্র অন্যতম।
মহাস্থান জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান মজিবর রহমান বাংলানিউজকে জানান, এ জাদুঘরের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে বেহুলা-লক্ষীন্দরের বাসর ঘর ও গোবিন্দ ভিটা। ইতিহাস-ঐতিহ্য সমৃদ্ধ এসব স্থাপনা দেখেতে নিয়মিত দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকরা আসেন।
সার্কভুক্ত দেশগুলো ছাড়াও চীন, জাপান, ফ্রান্স, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের পর্যটকরা এ জাদুঘরে সংরক্ষিত প্রত্নবস্তু দেখার জন্য আসেন।
তিনি আরো জানান, ২০১৫ সালের ১৫ জুলাই থেকে চলতি বছরের ১৬ জুন পর্যন্ত ৩ লাখ ৭৯ হাজার ৮৮৯ দর্শনার্থী ও পর্যটক এখানে এসেছেন। এরমধ্যে বিদেশি ১হাজার ৪৮জন ও সার্কভুক্ত দেশের ৭৬জন পর্যটক রয়েছেন।
তবে সংস্কার কাজ চলমান থাকায় বর্তমানে জাদুঘর বন্ধ রাখা হয়েছে। সংস্কার কাজ শেষ হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে তা আবার দর্শনার্থী ও পর্যটকদের জন্য উম্মুক্ত করে দেওয়া হবে বলেও জানান মজিবর রহমান।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৬
এমবিএইচ/এসএইচ