শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): কুয়োয় পানি থাকবে- এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কালের বিবর্তন আর প্রযুক্তির উৎকর্ষে সে স্বাভাবিকতায় পড়েছে ধুলার আস্তর।
একসময়ে সবসময় প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর থাকা কুয়োগুলো এখন মৃত। পানির জায়গা দখল করেছে শুকনো পাতা, ক্ষতিকর পলিব্যাগসহ বিভিন্ন প্রকার বর্জ্য।
অথচ জীবন বাঁচানোর এক সময় এমন কুয়ো থেকেই পানি সংগ্রহ করা হতো। চা বাগানে শত শত নারী-পুরুষ শ্রমিক ও তাদের পরিবারগুলো এই পানি পান করেই বেঁচে থাকতেন। শুধু চা বাগানেই নয়, কালের বিবর্তনে আজ বাংলার জনপথ থেকে হারিয়েই যেতে বসেছে জনবসতিপূর্ণ এলাকার কুয়ো।
বিশুদ্ধ পানির সংস্থান হওয়ায় স্বাস্থ্য রক্ষায়ও এ কুয়োগুলো এক সময় দারুণ ভূমিকা পালন করেছে। হাজার হাজার মানুষের জীবনরক্ষা করে মানুষের অবহেলাতেই জীবনরক্ষাকারী কুয়োগুলো আজ মরে গেছে।
সম্প্রতি ডাকছড়া চা বাগানে গিয়ে দেখা যায়, সড়কপথের কুয়োটি ভরাট। এলাকাবাসী কুয়োর বদলে পাহাড়ি ছড়াতে তাদের থালা-বাসন ও কাপড়চোপড় ধুচ্ছেন।
এই চা বাগানের সর্দার সুভাষ কানু বলেন, আমাদের বাগানে দুটো কুয়ো ছিলো। বর্তমানে দুটোই মরে গেছে। এখন চা শ্রমিকরা খাল ও ছড়ার পানি পান করে।
‘কিন্তু ছড়ার পানি তো ক্ষতিকর’– এ বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সর্দার বলেন, আমরা কী করবো বলেন। ছড়া ছাড়া গতি কী? প্রয়োজনের তুলনায় টিউবওয়েলও মাত্র কয়েকটা।
এ বিষয়ের যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্র (বিটিআরআই) এর মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (এসও) অপু বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, পরিচ্ছন্ন কুয়ো কিন্তু বিশুদ্ধ জলাধার। স্থানীয় মানুষদের অনাগ্রহের ফলে আজ চা বাগানের কুয়োগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও আমাদের গ্রাউন্ড ওয়াটার লেভেল ধীরে ধীরে নিচে নেমে যাচ্ছে। ফলে কুয়োর পানিও আরো গভীরে চলে যাচ্ছে।
কুয়োর ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কুয়ো কিন্তু মাঝে মধ্যে সংস্কার করতে হয়। ব্যবহার করতে করতে এক সময় বালু বা নানা প্রকারের আবর্জনা জমা হয়। নির্দিষ্ট সময়ের এগুলো পরিষ্কার করা হলে তখনই নিচ থেকে পানি উপরের দিকে আসে।
খরচ কিছুটা বেশি হলেও কুয়োটিকে পুনরায় সংস্কার করে এর প্রাণ ফিরিয়ে দিলে নালা-ছড়ার থেকে অনেক বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যাবে এবং যা পান করার ফলে অসুখ-বিসুখ অনেক কমে যাবে বলে জানান মৃত্তিকা বিজ্ঞানের এ গবেষক।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩, ২০১৬
বিবিবি/এএ