সারিয়াকান্দি (বগুড়া): বাঙ্গালি নদীর পাড়ে তৈরি অস্থায়ী বেদে বহরের টঙ ঘরগুলোতে চলে বৈদ্যুতিক টেবিল ফ্যান, বিজলী বাতি। এমনকি, ক্যাসেট প্লেয়ারও চালায় বেদেরা।
বহরের সামনে বসানো সোলার প্যানেলের বিদ্যুতে বহরের টঙ ঘরগুলো আলোকিত হলেও, এখনও অন্ধকারে রয়ে গেছে তাদের জীবন।
সম্প্রতি বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার বাঙ্গালি নদীতীরে ডেরা গেড়ে বসা ঢাকার সাভার থেকে আসা চার পরিবারের একটি বেদে বহর ঘুরে এ চিত্র দেখা গেলো।
কিছুদিন আগে এসেছে এ বহর। সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে একটি সোলার প্যানেল। তা দিয়ে চলে ফ্যানের বাতাস ও প্লেয়ারের সংগীত উপভোগ। জ্বলে বাতি। ব্যবহার করা হয় মোবাইল ফোন।
আধুনিক সব উপকরণের ব্যবহার হলেও বেদেদের জীবন-চক্র এখনোই অনেকটাই বন্দি পুরাতন নিয়মের ঘেরাটোপে।
এসব বেদে বহরের বাসিন্দারা অশিক্ষিত, তাদের সন্তানেরাও। অল্প বয়সে বিয়ে-শাদি হলেও এর কুফল সম্পর্কে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই তাদের।
নেই সঞ্চয় বা ভবিষ্যতের গভীর ভাবনা। কেবল যাযাবর এ সম্প্রদায় গ্রাম থেকে গ্রাম, নদী থেকে নদী, জনপদ থেকে জনপদে ঘুরে কোনোরকমে জীবিকা নির্বাহ করছে।
জীবিকা নির্বাহের অবলম্বন হিসেবে রয়েছে সেই সাপ ও বানরের খেলা দেখানো। ঝাড়-ফুঁক দেওয়া ও তাবিজ-কবজ বিক্রি। আর নারীরা বিক্রি করেন চুরি-লেইস-ফিতা।
বেদে বহরের সদস্য ডেভিড, হিমাদ্রি ও বর্মা বাংলানিউজকে জানান, তাদের লোকজন এই এলাকায় ১৫ দিন ধরে অবস্থান করে বিভিন্ন গ্রামে সাপের খেলা দেখাচ্ছেন। পাশাপাশি ঝাড়-ফুঁক ও তাবিজ কবজ বিক্রি করছেন। কয়েকদিনের মধ্যেই তারা অন্যত্র চলে যাবেন।
হিমাদ্রি জানান, তারা একেকজন সারাদিন বিভিন্ন গ্রামে সাপের খেলা ও তাবিজ বিক্রি করেন। তাদের স্ত্রীরা গ্রামে চুরি-মালা-ফিতা ও তাবিজ বিক্রি করেন। এতে পাওয়া চাল ও নগদ অর্থে কোনোমতে চলে যায় তাদের সংসার।
স্ত্রী ও দুই ছেলে-মেয়েসহ তার চারজনের পরিবার। সাভার থেকে এভাবে গ্রামে-গঞ্জে ঘুরছেন। অভাবের কারণে সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে পারেননি।
আর্থিক সামর্থ্য থাকলে এভাবে যাযাবর জীবন বাদ দিয়ে নিজ গ্রামে স্থায়ীভাবে ঘরবাড়ি করে থাকতেন বলেও তিনি জানান।
সৌর বিদ্যুতের প্যানেল কিভাবে পেলেন জানতে চাইলে তিনি জানান, তারা নিজেদের উপার্জিত অর্থে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে সোলার প্যানেল কিনেছেন। সারা দিন বহরে সূর্যের আলোতে চার্জ হয় এটি। রাতে এটি ব্যবহার করে তারা প্রয়োজনীয় কাজকর্ম করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৬
এসআর