ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

বাবার গান ফেরে মুঞ্জু বয়াতির মুখে মুখে

শরীফ সুমন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৭, ২০১৬
বাবার গান ফেরে মুঞ্জু বয়াতির মুখে মুখে ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ওরে, দুখে দুখে জীবন গেলো/সুখ হইলো না জীবনি/না বুঝিয়া করলাম...করলাম পিরিতি.../প্রাণো সখিরে...

কালনি এক্সপ্রেস (সিলেট-ঢাকা) থেকে নেমে:ওরে, দুখে দুখে জীবন গেলো/সুখ হইলো না জীবনি/না বুঝিয়া করলাম...করলাম পিরিতি.../প্রাণো সখিরে...’।

বাউলা গান নয়, হবিগঞ্জ জেলার মুঞ্জু বয়াতির কণ্ঠ থেকে ভেসে আসছে লোকগীতির আদি সুর।

মিটারগেজ লাইনের ওপর সিলেট থেকে ছেড়ে আসা ‘কালনি এক্সপ্রেস’ আন্তঃনগর ট্রেনটি দুলে দুলে ছুটে চলেছে ঢাকার উদ্দেশে। সে আবহের সঙ্গে ‍মিশে গেলো মুঞ্জুর গানের সুর। সে মেজাজ আরও বাড়িয়ে দিলো দোতরা এবং কর্তাল।

বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জান‍ান, বাবার কাছেই তার হাতেখড়ি, বাবাই তার গানের গুরু। বাবার গলায় গান শ‍ুনলে নেশা লেগে যেতো। সেই নেশায় ২০ বছর আগে মুঞ্জুর গলায় ওঠে গান। এখন গানই তার সব। সংসারও চলে সেই আয় থেকে।

হবিগঞ্জের তিন নম্বর মাধবপুর ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের আশরাফ আলী ফকির জীবিত নেই। কিন্তু তার গান রয়ে গেছে ছেলে মুঞ্জুর গলায়। আশরাফ আলী ফকিরের কথা ও সুরে অর্ধ শতাধিক গান জানা রয়েছে তার। সঙ্গে যোগ হয়েছে তার সুর করা অনেক গান।

প্রথমে গ্রামের মেলায় গাইতেন মুঞ্জু। মেলার আয়োজন আগের মতো হয় না বলে শুরু করেন ট্রেনে ট্রেনে চলা। গান শুনে খুশি হয়ে যাত্রীরা যা দেন- তাতেই চলে তার সংসার। তিন থেকে চার শ’ টাকা হয়ে গেলেই ট্রেন থেকে নেমে পড়েন।

ঢাকা-সিলেট রুটে চলা আন্তঃনগর ট্রেন কালনি এক্সপ্রেস, উপকূল ও পারাবতে ভেসে বেড়ায় মুঞ্জুর সুর। প্রতিদিন সকালে সিলেট থেকে ছাড়া প্রথম ট্রেন কালনি এক্সপ্রেসে ওঠেন তিনি। এরপর দিনভর ট্রেনের মধ্যেই ছুটে চলেন এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত।

হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ থেকে উঠে আজমপুর স্টেশনে নামেন। যাত্রীরা আগের মতো গান শোনেন না- টাকা দেন না। তবে সিলেটে বেড়াতে আসা পর্যটকদের পেয়ে গেলে তার দিন ভালো যায়। তারা গান শোনেন, তার সঙ্গে ছবি তোলেন- দিন শেষে মোটা অংকের সম্মানীও দেন, জানান মুঞ্জু।

এখন তার গলায় সেই সুর নেই। ভালো গান জানার পরও সুযোগের অভাবে খ্যাতি পাননি মুঞ্জু বয়াতি। বললেন, শুরুতে অনেক চেষ্টা করেছি। জানলাম শিল্পী হতে হলে অডিও ক্যাসেট বের করতে হয়। টাকা লাগে-উপরের লোক লাগে।

হাসি-গানে মানুষকে মাতিয়ে রাখা মুঞ্জু জানালেন, তার বড় ছেলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। ছোটট‍ার বয়স তিন বছর। দুই সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করে যেতে চান মুঞ্জু। ছেলেরা যতদূর পড়তে চায়- পড়াবেন।

মুঞ্জুর গানের সুরে আসন না পেয়ে দাঁড়িয়ে থাকা কালনি এক্সপ্রেসের যাত্রীদের ক্লান্তি নিমেষেই হারিয়ে গেলো। কেউ কেউ পাশে দাঁড়িয়ে সেলফিও তুলে নিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০১৬
এটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।