ঝুড়িতে ডিম ভরে শহরে ছুটে আসেন তারা। ভ্রাম্যমাণ দোকানে চলে ব্যবসা।
আবার গলায় ঝুড়ি ভর্তি ডিম নিয়ে অনেক শিশু-কিশোরকে ছোটাছুটি করতে দেখা যায়। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাস্তায় দাঁড়ানো বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রীদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে তারা একটি ডিম বিক্রির আশায়।
শীতে ওরা থরথর কাঁপতে থাকে আর দ্বারে দ্বারে গিয়ে বলে বেড়ায়, ‘স্যার একটি ডিম নিবেন’। এসব অসহায় শিশুদের দেখে মনে হয় ‘অভাব শত্রু হলেও শীতই যেন ওদের পরম বন্ধু’! কারণ শীতে তাদের ব্যবসা ভালো।
ওদেরই একজন লিমন হোসেন, বাবা জাকির হোসেন, মা রুম্মা বেগম। বগুড়া শহরের উত্তর চেলোপাড়ায় বসবাস। স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় পঞ্চম শ্রেণিতে লেখাপড়া করে লিমন। অভাবের সংসার হওয়ায় এ বয়সেও তাকে প্রতিদিন ডিম বিক্রি করতে বগুড়া শহরের আসতে হয়। বিকেল সাড়ে ৪টায় শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় ডিমের ভ্রাম্যমাণ দোকান বসায় এই কিশোর। চলে রাত ১২টা পর্যন্ত।
এ সময়টুকু চরম ব্যস্ত থাকতে হয়। ডিম সিদ্ধ করতে হয়। ডিমের খোসা ছাড়িয়ে পানিতে পরিষ্কার করতে হয়।
লিমন হোসেন বাংলানিউজ বলে, সংসারে প্রচণ্ড অভাব। বাবার আয়ে সংসার ঠিকমতো চলে না। তাই প্রত্যেক দিন আমাকে কাজে নামতে হয়। পড়াশোনার পাশাপাশি এই কাজ করি। আর শীতে ডিম বিক্রিতে লাভ ভালোই।
আরেকজন ডিম বিক্রেতা শিশু জহুরুল ইসলাম। বোন রুখসানা ও মা জোৎস্না খাতুনকে নিয়ে ওদের সংসার। শহরের হাড্ডিপট্টি বস্তিতে বাস। গলায় ঝুড়ি ভর্তি ডিম নিয়ে শহরের বিভিন্ন রাস্তায় ছুটে বেড়ায় সে।
জহুরুল বাংলানিউজকে জানায়, প্রায় পাঁচ বছর আগে বাবা মাকে তালাক দিয়ে পালিয়ে গেছেন। তারপর থেকে মা অন্যের বাসাবাড়িতে কাজ করেন। মার শরীরও এখন আর আগের মতো চলে না। তাই কম বয়সেই সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। জহুরুল প্রতিদিন বিকেলে ৩০-৩৫টি ডিম নিয়ে শহরে আসে। অন্য শিশুদের সঙ্গে সে গভীর রাত পর্যন্ত বিক্রি করে। এ থেকে যে আয় হয় তা মায়ের হাতে তুলে দেয়।
আর এভাবেই চলে লিমন ও জহুরুলদের মতো অসংখ্য অসহায় পরিবারের জীবন সংসার।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০১৭
এমবিএইচ/আইএ