ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

স্কুলে যায় না, ওরা ক্ষুদে কারিগর!

মানসুরা চামেলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩২৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১৭
স্কুলে যায় না, ওরা ক্ষুদে কারিগর! স্কুলে যায় না, ওরা ক্ষুদে কারিগর! ছবি: আনোয়ার হোসেন রানা-বাংলানিউজ

জামদানি-পল্লি (নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ) ঘুরে: ‘স্কুলে গেলে টাকা আসবো না। আব্বার কাজ করলে টাকা আসবো। ভালোভাবে সংসার চলবো।

অন্য মানুষ দিয়া কাম করাইলে তো তাগোরে টাকা দিতে হইবো। তাই নিজেই কাজ করি।

মাথা নুইয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে লাল রেশমী সুতা দিয়ে সাদা জামদানিতে নকশা তুলেছ লাবনী। হাত চালানোর ভঙ্গি দেখলে মনে হবে জামদানির পাকা কারিগর। সকাল থেকে বাবার সঙ্গে কারখানায় শুধু লাবনী নয়, তার এক বছরের ছোটো বোন হালিমাও নেমেছে এই কাজে।

এসব কথাই জানাচ্ছিল জামদানি-পল্লির ১০ বছরের খুদে জামদানি-কারিগর লাবনী। লাবনী দশ বছর বয়স পযর্ন্ত কখনও স্কুলের মুখ দেখেনি। শুধু লাবনী না, জামদানিপল্লির আরো অনেক শিশু স্কুলে যাওয়ার বদলে বেছে নিয়েছে জামদানি শাড়ি বোনার কঠিন কাজটি। স্কুলে যায় না, ওরা ক্ষুদে কারিগর! ছবি: আনোয়ার হোসেন রানা-বাংলানিউজ
শাড়ি বুননের সময় একটুমাত্র ভুল পুরো শাড়িটাকেই বরবাদ করে দিতে পারে।   তাই, গভীর, অখণ্ড মনোযোগ দিয়ে, অসীম ধৈর্য নিয়ে কাজটি করতে হয়। নগদ টাকার সাময়িক লোভের বশে এই কোমলমন শিশুদের দিয়ে এ কাজটি করাচ্ছেন অভিভাবকরা।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ বিসিক জামদানিপল্লি ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগ তাঁতী তাদের কারখানায় নিজের সন্তান বা কোনো শিশু শ্রমিকের হাতে জামদানি শাড়ি তৈরির যন্ত্র চরকা ও বীম তুলে দিয়েছেন।

জানা যায়, জামদানি শাড়ির এসব খুদে কারিগর মধ্যরাত অবধি কাজ করে। অনেককে আবার মধ্যরাত পযর্ন্ত কাজ করার পর ভোরেই ঘুম থেকে উঠে নেমে পড়তে হয় কাজে।

লাবনী ও হালিমা নামে দুই মেয়েকে দিয়ে জামদানি শাড়ি তৈরির কাজ করান আইয়ুব আলী। বাবার সঙ্গে সকাল ৭টায় ঘুম থেকে উঠে শাড়ি তৈরিতে নেমে পড়ে এই দুই শিশু।

সন্তানদের দিয়ে এমন কষ্টকর কাজ করানোর বিষয়ে আইয়ুব আলী বলেন, একটি জামদানি শাড়ি তৈরিতে খরচ পড়ে ২০ হাজার টাকা। চারজন কারিগর মিলে যদি তৈরি করি তাহলে সময় লাগবে এক মাস। আমি বাদে বাকি তিনজনকে দিতে হবে হবে ৬ হাজার টাকা করে। সেখানে আমার পরিশ্রমের পরও সর্বোচ্চ মাত্র ২ হাজার থেকে তিন হাজার টাকা লাভ হবে। তাহলে তো সংসার চলবে না। কষ্ট হলেও নিজের সন্তানকে দিয়েই শ্রমিকের কাজটা করিয়ে নিচ্ছি। স্কুলে যায় না, ওরা ক্ষুদে কারিগর! ছবি: আনোয়ার হোসেন রানা-বাংলানিউজদীর্ঘ সময় এক নাগাড়ে মাথা নিচু করে মেশিনে কাজ করার কারণে মেরুদণ্ডের রোগে আক্রান্ত হতে পারে শিশুরা। এছাড়া দীর্ঘ সময় মনোযোগ দিয়ে করতে হয় বলে শিশুদের মেধাশক্তি ও মনের ওপর পড়ে ভয়ঙ্কর নেতিবাচক প্রভাব। এমনই অভিমত  শিশুরোগ বিশেষজ্ঞদের।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের শিশুবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. রুহুল আমীন বাংলানিউজকে বলেন, যে বয়সে শিশুদের স্কুলে যাওয়ার কথা,হেসে খেলে আনন্দে সময় পার করার কথা সে বয়সে দীর্ঘ সময় ধরে কাজের চাপ নেওয়া মারাত্মক ক্ষতিকর। জামদানিপল্লিতে শিশুরা কাজ করে থাকলে, এটা এক ধরনের শিশুশ্রম। অল্প বয়সে বেশি মনোযোগের কাজ করলে শিশুরা হতাশাগ্রস্ত ও অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। একটা শিশুর জন্য কখনই অতিরিক্ত মেধাশক্তি প্রয়োগ করে কোনো কাজ করা সমীচীন নয়। সপ্তাহে ৫ থেকে ৬ দিন এ ধরনের কাজ করলে মেরুদণ্ডসহ অন্য অনেক জটিল দুরারোগ্য রোগেও আক্রান্ত হতে পারে।

বাংলাদেশে সময়: ০৯২০ ঘ্ণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১৭
এমসি/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।