ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

পর্ব ২২

গ্রামের পথে খোসবাগ থেকে রোশনিবাগ

এরশাদুল আলম প্রিন্স, ল’ এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৪ ঘণ্টা, মে ১, ২০১৭
গ্রামের পথে খোসবাগ থেকে রোশনিবাগ মুর্শিদাবাদের একটি গ্রাম

মুর্শিদাবাদ ঘুরে: ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদের দূরত্ব ৩৫০ কিলোমিটার। তবে দুটি দেশের রাজনৈতিক মানচিত্র এ দূরত্বকে বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। প্রায় ৩০০ বছরের ইতিহাস পেছনে ফেলে ঢাকা ও মুর্শিদাবাদ আজ দুই দেশের দুই শহর। তবুও ইতিহাসের যোগসূত্র ধরেই আমরা বাঙালি। আমাদের জীবন-জীবিকা ও সংগ্রামের পথ একই রেখায় অঙ্কিত।

খোসবাগ থেকে রোশনিবাগ একটি বাঙালি গ্রাম। আসলে পৃথিবীর সব গ্রামের চিত্রই এক।

তাইতো গ্রাম শ্বাসত। ভিন্নতা কেবল শহরে। এক শহরের থেকে আরেক শহরের মিলের চেয়ে অমিলই বেশি। কিন্তু গ্রামের জীবন এক, জীবিকাও এক, সংগ্রামও এক, রূপ-বৈচিত্র্যও এক। গ্রামে মানুষের ছুটে চলার পরিধিটা হয়তো সীমাবদ্ধ, কিন্তু তারই মাঝে তার জীবন সংগ্রামের চিত্রটা একেবারেই স্পষ্ট।
মুর্শিদাবাদের একটি গ্রাম
কৃষি নিয়েই এ গ্রামের মানুষের নিত্যদিনের কর্মমুখরতা। তাদের জীবন সংস্কৃতি কৃষিকে ঘিরে।

আবহমান বাংলার গ্রাম বলতে যা বোঝায় তা আজ আর নেই। গ্রাম আজ শহরের দিকে তাকিয়ে আছে। শহরকে সে কাছে পেতে চায় অথবা শহরের মাঝে ঢুকে যেতে চায়। খোসবাগ-রোশনিবাগে কুঁড়েঘর বলতে কিছু নেই। তবে মাটির ঘর চোখে পড়লো অনেক। বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে সব বাড়িতেই।

সব বাড়ির সামনেই আছে আঙিনা। বাড়ির পেছনে উঁকি দেয়া তাল গাছ খেজুর গাছের সাড়ি, আর একটু পাশেই আছে ভাগীরথী নদী। যদিও এই নদীতে আজ আর পালতোলা নৌকা নেই। সবই ইঞ্জিন চালিত নৌকা। বাংলার ইতিহাস যেনো এই ভাগীরথী নদীর মতোই একই ধারায় বহমান।

পথ আঁকা-বাঁকা তবে তা মেঠোপথ নয়। পথের দুই ধারে সবুজের মাঠ। ধান চাষই বেশি হয়। ইঞ্চি পরিমাণ জমিও পতিত পরে নেই কোথাও। পরিকল্পিত আবাদ হচ্ছে সব জমিতে। জমিতে সেচের ব্যবস্থাও করে নিয়েছে সবাই। তবে মাঝে মাঝে সরকারও পানির পাম্প বসিয়ে দিয়েছে। বাড়ির সামনে দুই-চারটা গরু, মহিষ নেই এমন বাড়ি খুজে পাওয়া ভাড়।
মুর্শিদাবাদের একটি গ্রাম
মুর্শিদাবাদ এক সময় রেশম চাষের জন্য বিখ্যাত ছিল। কাসিম বাজারের রেশম খ্যাতির জন্য ইংরেজ বণিকরা এদেশে এসেছে। কাসিমবাজার ইংরেজ কুঠির বাণিজ্যিক কারণও এই রেশম।

মুর্শিদাবাদে সাধারণ চলাচলের জন্য নারী-পুরুষ সবাই সাইকেল ব্যবহার করে। শহরের চেয়ে বরং গ্রামে সাইকেল বেশি। গ্রামের মেয়েরা শাড়ি, স্যালোয়ার-কামিজ পড়েই সাইকেল চালায়। শহরেও তাই। বাড়ি থেকে স্কুল যেতেও ছেলে-মেয়েরা সাইকেলে যায়।
মুর্শিদাবাদে চলাচলে নারী-পুরুষ সবাই সাইকেল ব্যবহার করেখোসবাগ থেকে রোশনিবাগের এই সড়কটির বেহাল দশা। পুরোই রাস্তাতেই খানা-খ্ন্দ। অথচ এই সড়কে অনেক পর্যটকই যাতায়ত করে। আর সাধারণ মানুষের নিত্যদিনের ভোগান্তি তো আছেই।

গ্রামের এই পথ ধরে চলতে চলতে আবহমান বাংলারই এক চিরচেনা গ্রাম খুঁজে পাওয়া যায়। বাংলার ইতিহাসের সাথে এই খোসবাগ-রোশনিবাগের সম্পর্কতো অচ্ছেদ্য। কিন্তু বাংলার অবহেলিত লক্ষ গ্রামের মতোই ইতিহাসও এখানে অবহেলিত।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৭ ঘণ্টা, মে ০১, ২০১৭
এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।