ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

বাবা বলেছিল, তোমার যোগ্যতা দিয়ে যা পাবে তাতেই খুশি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৫১ ঘণ্টা, মে ৬, ২০১৭
বাবা বলেছিল, তোমার যোগ্যতা দিয়ে যা পাবে তাতেই খুশি নূর মোহাম্মদ হৃদয় 

এবারে অনেক ছাত্রছাত্রীর মতো আমিও বসেছিলাম এসএসসি পরীক্ষার হলে। এর ফলও পেলাম, পিরোজপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়েই উত্তীর্ণ হয়েছি। তাই খুশি লাগছে।

কিন্তু অন্য কিছু কথা নিজেকে অবাকও করছে। কিছুদিন আগের ঘটনা।

প্রাক-নির্বাচনী পরীক্ষা শেষ হওয়ার কিছুদিন পর মনে হয়েছিল আমি জিপিএ-৫ পাবো না। কারণ, প্রাক নির্বাচনী পরীক্ষা ভালো হয়নি। তাই মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, পরীক্ষায় বসব না। মনে হচ্ছিল, যদি জিপিএ-৫ না পাই তখন মা-বাবা ও অন্যান্য লোককে কী বলব। কিন্তু তখন বাবা বলেছিল, তোমার জিপিএ-৫ পাওয়ার দরকার নেই। তুমি তোমার যোগ্যতা দিয়ে যা পাবে তাতেই আমরা খুশি। মায়ের মুখেও শুনলাম একই কথা। তাই একটু ভরসা পেলাম। পরীক্ষায়ও বসলাম। আর ফলতো এখন সবার সামনেই।

এখন সেদিনের কথা ভেবে এখন একটু হাসি পাচ্ছে। আবার মা-বাবার ওপর গর্বও হচ্ছে যে, তারা অন্তত অন্য সব বাবা-মায়ের মতো নন যারা তাদের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছেন সন্তানের ঘাড়ে। তাদের সাধ্য না বুঝে বরং সারাদিন দৌড় করিয়েছেন নিজেদের স্বপ্ন পুরণে।  

অনেক ছাত্রকেই দেখেছি যারা অনেক সময় দুপুরের সময়ও ব্যাগ কাঁধে নিয়ে ছুটেছে টিউশন নিতে। আবার বিকেলে খেলতেও দেখিনি এরকম অনেক রয়েছে।  

কিন্তু এদিক থেকে আমি অনেকটা স্বাধীন ছিলাম। আমার বাবা ঢাকায় থাকে। আমি মায়ের সঙ্গে থাকি। ছোটবেলা থেকে প্রতিবেশীদের জবাবে মাকে বলতে শুনেছি, ওর যা ভালো লাগে ও তাই হোক। আমার কোনো আপত্তি নেই।  

আমি কম্পিউটার নিয়ে কাজ করতে বেশি ভালবাসি। মা-ও সেটা জানে। আমি বেশিক্ষণ এটা নিয়ে কাজ করলেও তাকে বারণ করতে দেখিনি। বরং মায়ের উৎসাহে কম্পিউটারের অনেক কাজ যেমন গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন ইত্যাদি শিখতে পেরেছি। আমাকে কখনও পড়ার জন্য চাপ দেয়নি মা। বরং আমার যখন যেটা ভালো লাগত আমি সেটাই পড়তাম। পাশাপাশি শিশু সাংবাদিকতাও চালিয়েছি। তাতেও কোনোদিন বাধা পাইনি। বরং উৎসাহই পেয়েছি। তাই আমার মা-বাবাকে নিয়ে অনেকটাই গর্ববোধ হচ্ছে।

অনেক শিক্ষার্থীকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় তোমাদের লক্ষ্য কী, অনেকেই বলবে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হওয়া। কিন্তু যদি তাদের আবার জিজ্ঞাসা করা হয় এটা কী তোমার স্বপ্ন না অন্য কারও— তখন এরকম উত্তরও শোনা যায় যে, মা-বাবা বলেছে। আমার প্রশ্ন, তাদের সিদ্ধান্তটা সন্তানদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে কেন? তাদের কি নিজ ইচ্ছা বলতে কিছুই নেই।

জিপিএ-৫ না পেলে কী শেখা যায় না? যদি তাই হয় তাহলে তা না হলে আত্মহত্যা করতে হবে কেন? অনেক শিক্ষার্থীই বাসায় পড়া করে গিয়েও পরীক্ষার সময় বন্ধুদের খাতা দেখে লেখে। যেনো মার্ক কম না পায়। কারণ, সবাই শুধু মার্কটাই দেখে। আমার প্রশ্ন তাহলে আমার পড়ে কী লাভ? যদি মার্কের ভয়ে দেখেই লিখতে হয়। মার্ক কম হলে কি শেখা যাবে!

যেহেতু কম্পিউটার ভালবাসি। তাই কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার খুব ইচ্ছা আছে। আর আমি জানি এতে আমার পরিবারও পূর্ণ সহযোগিতা করবে। তবে আরও একটা স্বপ্ন আছে আমার, আমি এই শিক্ষাপদ্ধতিটাকে বদলাতে চাই। এমন একটা শিক্ষাব্যবস্থা বানাতে চাই যেখানে নম্বরের ভয়ে অন্যের খাতা দেখে লিখতে হবে না। যেখানে জিপিএ-৫ এর ভয় থাকবে না। যেখানে জিপিএ-৫ এর ভয়ে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন খুঁজতে বসতে হবে না। যেখানে শিশুদের স্বাধীনভাবে চলতে দেওয়া হবে। আমার মতে তাতে আরও শিক্ষার্থীদের ফল ভালো হবে। উন্নত হবে দেশ।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৭ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০১৭


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।