মেয়ে পড়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। ইংরেজিতে অনার্স।
তবে মাহবুব একটা হিসেব মেলাতে পারেন না কিছুতেই। নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়েই তার প্রশ্ন,দেশেই তো কতো কাজ। তবে কাজকে অবহেলা করে সামান্য অর্থের জন্যে মানুষ কেন বহু অর্থ খরচ করে বিদেশে যায়!
পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা থানার কালিকাপুর গ্রামের ছেলে মাহবুব। লেখাপড়ায় মেট্রিক পাশ। বাবার নাম ইয়াসিন। এক রাতেই পায়রা নদী গ্রাস করে নেই সর্বস্ব। সেটা ১৩ বছর আগের ঘটনা। স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে শূন্য হাতেই পাড়ি জমান ঢাকায়।
চলে আসেন সাভারে। কোমরে ব্যথা থাকায় ভারী কোনো কাজ করার সুযোগ ছিলো না তার। শেষে এর ওর কাছ থেকে কিছু সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে শুরু করলেন ফেরি করে পান বিক্রি।
পরিশ্রমও তেমন না। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২ টা। আবার বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত পান বিক্রি করেন তিনি।
এই নিয়মেই চলছে ১৩ বছর। প্রতিদিন ৫ বিড়া পান বিক্রি করেন। প্রতি বিড়ায় ৮০ টি। তবে ৪'শ পানের মধ্যে দিনে নিজেরই লাগে ৪০টি। প্রতিটি পানের খিলির দাম ৫ টাকা।
‘বলতে পারেন অভ্যেস। ক্রেতাদের জন্যে খিলি বানাই। অবসরে নিজেই মুখে পুরি, ব্যস। দিন শেষে হিসেব করে দেখি আমার নিজেরই লাগে গোটা চল্লিশেক। ’
এভাবেই হাটে মাঠে ঘাটে পান বেচা। দিন দিন কদর বাড়ে মাহবুবের পানের খিলির।
‘এক বিড়া পান ১২০ টাকা দিয়ে কিনি। মশলাপাতি দিয়ে খিলি করে বিক্রি করি ৪'শ টাকায়। যে কখনো পান মুখেও তোলেনি, সে একবার আমার পান খেলে আমাকে তার মনে রাখতেই হবে’- বেশ দৃঢ়তার সাথে উচ্চারণ করেন মাহবুব।
নানা রকমের বাহারি জর্দা ছাড়াও মাহবুবের ডালিতে সাজানো থাকে কালিজিরা,ধনিয়া বা মিষ্টি জর্দা দিয়ে বানানো পানের খিলি।
পরনের জামাটা জোড়া তালি দেওয়া। তবে হৃদয়টা ভরপুর তৃপ্তি আর সুখে: "আমার মতো সুখী কে আছে কন!এই পান বেইচ্যা সাভারে দুই কড়া আর দ্যাশে জমি কিনছি আট কড়া। পোলাপান গো উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতেছি। কয়ডা মানুষ আছে আমার মতো সুখী"- ডালিতে পান সাজাতে সাজাতে বাংলানিউজের কাছে এমনই আনন্দিত অভিব্যক্তি তার। জীবনের এই প্রাপ্তিটাই তার কাছে অনেক বেশি।
মেয়ে খাদিজা আর ছেলে জহিরুল ইসলামের প্রসঙ্গ তুলতেই গর্বে চকচক করে ওঠে মাহবুবের চোখ। আর পান খাওয়া গালভরা মুখে ছড়িয়ে পড়ে তৃপ্তির অমলিন হাসি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৭
জেএম