ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

নতুন প্রজন্মকে অতীত ও অর্জন শেখাবে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০১৮
নতুন প্রজন্মকে অতীত ও অর্জন শেখাবে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। ছবি: সাগর

ঢাকা: মহান মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদের গৌরবময় আত্মত্যাগ অনুভব করার আদর্শ স্থান হলো মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। আর তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ইতিহাস সম্পর্কে জানতে এ জাদুঘরে ভিড় জমাতে দেখা যায় দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ নতুন প্রজন্মকে।

স্বাধীনতা দিবসে (সোমবার, ২৬ মার্চ) মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ঘুরে দেখা গেলো চেতনাপ্রেমী বাঙালির সেই পরিচিত ভিড়। বড়দের হাত ধরে এসেছে অনেক শিশু-কিশোর।

দেশের গোড়াপত্তনের ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা নিতে এসেছেন বিদেশি নাগরিকরাও।

জাদুঘরের দুই নম্বর গ্যালারির নাম 'আমাদের অধিকার, আমাদের ত্যাগ'। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করতে বাঙালি যেসব ত্যাগ স্বীকার করেছে, তারই বিভিন্ন নিদর্শন উঠে এসেছে এ গ্যালারিতে। এখানেই নিজের ছোট্ট সন্তানদের এ ত্যাগের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন ব্যবসায়ী আক্তার হুসাইন। তিনি এসেছেন তার দুই মেয়ে দীপ্র ও দীপিত'কে নিয়ে।

আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, বাচ্চাদের জন্যই মূলত এখানে আসা। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা যা দেখেছি, সেগুলো এখন নিজ চোখে দেখার উপায় নেই। তবে স্মৃতি ও জ্ঞানের সঙ্গে জাদুঘরের ছবিগুলো মিলিয়ে বাচ্চাদের বুঝিয়ে দিচ্ছি মুক্তিযুদ্ধের সময়কার পরিস্থিতি।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের গ্যালারি।  ছবি: সাগর

লাল টুকটুকে জামা পরা ছোট্ট সোনামণি তুষিতা'কে ধরে ধরে প্রতিটি নিদর্শনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন তার বাবা ডা. হিল্লোল কুমার চৌধুরী। তিনি বলেন, ওকে সহজ ভাষায় জাদুঘরের বিষয়বস্তুগুলো বোঝানোর চেষ্টা করছি।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের সাবেক এ শিক্ষার্থী বলেন, আমি থাকতাম মেডিকেল কলেজের ফজলে রাব্বি হলে। বাচ্চাকেও ওখানে নিয়ে গিয়েছি। তবে এখানে এসে আমাদের স্যারের ব্যবহৃত প্রেশার মাপার মেশিন, তার ব্যবহৃত গাড়ি দেখাতে পারলাম ওকে। বোঝাতে পারলাম মুক্তিযুদ্ধে এই মানুষটার অবদান।

জাদুঘর ঘুরে অনেক কিছুই জানতে ও শিখতে পেরেছে ঢাকা রেসিডেনশিয়াল কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র মামুন শায়ন্ত। চতুর্থ গ্যালারিতে কথা হয় তার সঙ্গে।

শায়ন্ত বলে, সাত জন বীরশ্রেষ্ঠ, অনেক বুদ্ধিজীবী আর অসংখ্য সাধারণ জনগণ প্রাণ দিয়েছেন আমাদের দেশটা স্বাধীন করতে। এর মানে, বড় কিছু পেতে হলে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। আর এখান থেকেই জানতে পারলাম আমাদের ওপর পাকিস্তানিদের নির্যাতনের বিস্তারিত বর্ণনা।

জাদুঘরের সবগুলো গ্যালারির প্রায় প্রতিটি নিদর্শনই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সিভিল ইঞ্জিনিয়ার নুরুল গণি চৌধুরী। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন প্যারিস প্রবাসী।  

তিনি জানালেন, প্যারিস থেকেই সম্পৃক্ত থাকার চেষ্টা করেছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধে। মুক্তিযুদ্ধের জন্য সেখান থেকে তহবিল সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়া এ জাদুঘরটির জন্য কয়েকটি নিদর্শনও কর্তৃপক্ষকে জমা দিয়েছেন তিনি।

নতুনদের জন্যে তিনি বলেন, নিজেদের সম্পর্কে জানতে হলে এ জাদুঘরটি সবারই ঘুরে যাওয়া উচিত। এখানে এলে সবাই বুঝতে পারবে আমরা কোথা থেকে এসেছি, আমাদের অতীত কি, প্রতিটা অর্জনের জন্য আমাদেরকে কি পরিমাণ ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। আর এগুলো জানাটা সবচেয়ে জরুরী নতুন প্রজন্মের জন্য।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।  ছবি: সাগর

‘মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর’ দেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক জাদুঘর। এটি ঢাকার আগারগাঁওয়ে অবস্থিত। বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এই জাদুঘরের উদ্বোধন হয় ১৯৯৬ সালের ২২ মার্চ।  

মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক দুর্লভ নিদর্শন রয়েছে এ জাদুঘরটিতে। তবে নতুন প্রজন্মের জন্য এর সংগ্রহশালা আরও সমৃদ্ধ করার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান এখানে ঘুরতে আসা সবাই।

মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে বিনামূল্যে প্রবেশ উন্মুক্ত রাখে জাদুঘর কর্তৃপক্ষ।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০১৮
এইচএমএস/এনএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।