ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

গান গাই আর সেই তালে রিকশা চালাই, এতেই চলে সংসার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ৪, ২০১৮
গান গাই আর সেই তালে রিকশা চালাই, এতেই চলে সংসার রিকশাচালক আরিফ মোল্লা। ছবি: বাংলানিউজ

মাদারীপুর: গান আমার ভালো লাগে। আমি গান গেয়ে বেড়াই। কিন্তু আমার টানাটানির সংসারেতো শুধু গান গাইলেই চলবে না, উপার্জনও করতে হবে। তাই গান গাই আর সেই তালে রিকশার প্যাডেল মারি। এতে আমার যাত্রীরাও মুগ্ধ হন, আমিও জীবন সংসারের যাবতিক জঞ্জাল ভুলে থাকি। এছাড়া চলে আমার অভাবের সংসারও।

বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন মাদারীপুরের সংগীত প্রেমী রিকশাচালক আরিফ মোল্লা।

মাদারীপুর শহরেই রিকশা চালান আরিফ।

তবে তার রিকশার একটি মাহাত্ম হলো তিনি নিজ কণ্ঠে গান ধরেন আর এর তালে তালে রিকশার প্যাডেল চাপেন। এতে তিনি নিজেও মজা পান, যাত্রীদেরও মুগ্ধতা দেন। তার রিকশায় যিনিই ওঠেন গান শুনতে শুনতে যেতে পারেন গন্তব্যে। তিনি যে রাস্তা দিয়েই যান না কেন, তার খালি গলার গান শুনলে অনেকে বুঝতে পারেন রিকশাচালক আরিফ যাচ্ছেন ওই রাস্তায়।

বাংলানিউজকে আরিফ বলেন, রিকশার প্যাডেল চাপতে চাপতে উড়াল কণ্ঠে গান ধরলে আমার মনের সব কষ্ট দূর হয়ে যায়। আমি তখন অনেক পরিশ্রমও করতে পারি। আমার রিকশাও চলে আমার গানের তালে তালে।

এসময় তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমি যন্ত্রের তালে তালেও গান গাইতে পারি। তাই আমি শিল্পী হতে চাই। সারাজীবন গান করতে চাই।

আরিফ বলেন, আমি রিকশা নিয়ে বের হলেই যারা আমাকে চেনেন তারা আগ্রহ নিয়ে গান শুনতে আসেন। অনেকেই গান শুনে মুগ্ধ হয়ে আমাকে সম্মানী দেন। এতেকরেই চলে আমার অভাবের সংসার। আমার শখ গান করা। স্বপ্ন আমার সংগীত শিল্পী হিসেবে পরিচিতি পাওয়া।

আরিফ আরো বলেন, বর্তমান সময়ে সবার রিকশা-ভ্যানেই ব্যাটারি চালিত ইঞ্জিন লাগানো। কিন্তু আমার রিকশায় পেশি শক্তিই ভরসা। অর্থের অভাবে আমি রিকশায় ইঞ্জিন লাগাতে পারছি না। তাই যাত্রীও পাচ্ছি তুলনামূলকভাবে কম। স্বাভাবিকভাবেই আয়-রোজগারও কম হয়। তারপরও সবকিছু ছাপিয়ে আমি গান গাই। গান গাইতে বসলে ভুলে যাই আমার জীবিকার সন্ধানের কথা।

গানে মুগ্ধ হয়েই তার সঙ্গে জীবন সংসারে যুক্ত হন লিপি। সাড়ে তিন বছরের একটি কন্যা সন্তান নিয়ে তাদের টানাপোড়েনের সংসারে কখনো দুপুরে আবার কখনো রাতে গানের আসরের আয়োজন করা হয়।

রিকশায় প্যাডেল দেওয়া শুরু করার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় তার কণ্ঠের গান। এরপরে আধুনিক নানা গান বাজতে থাকে তার কণ্ঠে, যতক্ষণ পর্যন্ত চলে তার রিকশা।

মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর এলাকার খলিল মোল্লার ছেলে আরিফ। তিন ভাই বোনের মধ্যে মেজ আরিফ ছোটবেলা থেকেই গান গাইতে পছন্দ করতেন। নদীর পাড়ে, খোলা মাঠে বা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে কখনো একা আবার কখনো বন্ধুদের নিয়ে উচ্চস্বরে গান গেয়ে বেড়াতেন তিনি। বয়স বাড়লে নামতে হয় জীবিকার সন্ধানে। বেড়িয়ে পড়েন রিকশা নিয়ে রাস্তায়। তবে গান তাকে ছেড়ে যেতে পারেনি।

স্থানীয় শাহাদাত আকন বাংলানিউজকে বলেন, মাদারীপুর শহরের মধ্যেই রিকশা চালান আরিফ। লেকের পাড়, নতুন শহর, পুরাতন বাজার, কোর্ট পাড়ে পাওয়া যায় তাকে। তার গানের গলা বেশ ভালো। পরিচিতরা তার রিকশায় ওঠলেই গান গাইতে বলেন তাকে। তাছাড়া আরিফের গানের অনেক ভক্তও রয়েছে শহরে। সন্ধ্যায় লেকের পাড়ে বসে অনেকেই আরিফের গান শুনেন।

সাংবাদিক অজয় কুন্ডু বাংলানিউজকে বলেন, পুরোনো দিনের গানগুলো আরিফের কণ্ঠে বেশ ভালো লাগে। ভালো কোনো মাধ্যম পেলে হয়তো রিকশাচালক আরিফ সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবেন।

বাংলাদেশ সময়: ০১০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০১৮
টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।