ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

রুদ্র তেজের জীবনীশক্তি গ্যালারি চিত্রকের দেয়ালজুড়ে

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২১০ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৮
রুদ্র তেজের জীবনীশক্তি গ্যালারি চিত্রকের দেয়ালজুড়ে গ্যালারি চিত্রকে শিল্পী আবু তাহেরের চিত্রকর্ম প্রদর্শনী। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: শিল্পীর আঁকা ছবিগুলোতে অন্য বিভিন্ন চিত্রকর্মের তুলনায় রঙটা একটু অনুজ্জ্বল। কিন্তু প্রতিটি ছবি থেকে আলাদ ধরনের একটা উজ্জ্বল আলো ফুটে উঠেছে। সে আলোটাই হৃদয়কে মন্ত্রমুগ্ধের মতো করে টানে। ছবির ভাষা বোঝা যাক বা না যাক, একটিবারের জন্য হলেও সে আলোর ছটা মেখে নিতে ছবিটা একবার স্পর্শ করতে ইচ্ছে হয়!

শনিবার (২৮ জুলাই) রাজধানীর গ্যালারি চিত্রকে শিল্পী আবু তাহেরের চিত্রকর্ম প্রদর্শনীতে এমনটাই বলছিলেন দর্শনার্থী তাহমিনা আনাম। চিত্রকর্ম সম্পর্কে সাম্যক ধারণা না থাকলেও তার কথাগুলোই যে সত্য, তাই যেনো প্রমাণ করলেন শিল্পবোদ্ধা মইনুদ্দীন খালেদ।

বাংলানিউজকে এ শিল্পী বলেন, রুদ্র তেজের জীবনীশক্তিকে শিল্পায়িত করার প্রবণতা কাজ করেছে শিল্পী আবু তাহেরের মনে। শিল্পী যখন বিমূর্ত রীতির অনুসারী না হয়ে অবয়বধর্মী বা ফিগারেটিব কাজ করেন, তখনও সেখানে মানুষী শক্তি প্রবল ও অনাবৃত রূপের প্রকাশ ঘটায়। আর সে শিল্পভাষা নিরীক্ষার মধ্য দিয়েই শিল্পী খুঁজে পেয়েছেন নিজস্ব বোধের শিল্পমুদ্রা।

সন্ধ্যায় ধানমন্ডির গ্যালারি চিত্রকে শুরু হয়েছে বরেণ্য শিল্পী আবু তাহেরের ১২ দিনব্যাপী একক চিত্রকর্ম প্রদর্শনী। এ প্রদর্শনীর মধ্য দিয়েই যেনো শিল্পী উঠে এসেছেন চারুশিল্প চর্চার নতুন ভুবনে। সে ভুবনে স্থান পেয়েছে শিল্পীর বিভিন্ন সময়ে আঁকা প্রায় ৪০টি চিত্রকর্ম।

জলরঙ, তেলরঙ, পেন্সিল আর মিক্সড মিডিয়ায় আঁকা ছবিগুলো রঙের বর্ণে প্রকাশ করেছে বিমূর্ততা। সে বিমূর্ততায় রঙের আস্তরণ, পুরুত্ব আর তুলির আঁচড় তুলে ধরেছে দেশীয় শিল্পধারা আর পশ্চিমা ইমেজ। গ্যালারি চিত্রকে শিল্পী আবু তাহেরের চিত্রকর্ম প্রদর্শনী।  ছবি: বাংলানিউজভাবালুতার পর্দা ছিড়ে প্রত্যক্ষ বর্ণে সে ইমেজ কথা বলে মনের বেগ আর স্বভাবের। অন্তত শিল্পীর আঁকা ‘রুরাল’, ‘দ্যা বিউটি অব বেঙ্গল’, ‘লিবারেশন ওয়ার্ক’, ‘আগ্রাসন’, ‘মেকাপ’, ‘এ ফ্যামিলি’, ‘গার্ল উইথ ফ্যান’, ‘নেচার’, ‘ভিলেজ ক্যানভাস’, ‘ট্রি অ্যান্ড বার্ড’ এবং ‘উল্লাস’ শিরোনামের চিত্রকর্মগুলো যেনো তারই প্রমাণ।

মানুষী শক্তিকে অনাবৃত রূপে প্রকাশ ঘটানো এ শিল্পী সবসময়ই চেয়েছেন শিল্পমুদ্রায় নতুন বোধ জাগাতে। নিজের সব কাজে ছাপ রেখেছেন নিজস্ব একটা স্টাইলের। আর শিল্পানুরাগীরা যেনো সহজেই নিরীক্ষার অনুধাবন করতে পারেন, চেষ্টা করেছেন তার জন্যও। তাইতো দেশের আরেক শিল্পবোদ্ধা রফিকুন্নবীও (রনবী) এসব চিত্রে খুঁজে পান তেমন সৃজন।

তিনি বলেন, চিত্রকলায় একটি মাধ্যম থেকে অন্য একটি মাধ্যমে কাজ করতে যাওয়া বেশ কঠিন। এই যেমন তেলরঙ থেকে জলরঙ বা জলরঙ থেকে মিক্সড মিডায়ায় চাইলেই যে কেউ যেতে পারে না। কিন্তু তাহের ভাই এটা করেছেন। তিনি চিত্রকলার বিভিন্ন মাধ্যমে কাজ করেছেন। বিশেষ করে মিক্সড মিডিয়ায় তার অবদান অনন্য। বাংলাদেশের আধুনিক চিত্রকলা আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ শিল্পী মোহাম্মদ কিবরিয়ার পর মিক্সড মিডিয়ায় তিনিই সব থেকে বেশি কাজ করছেন। আর এটা নিয়ে তিনি দো রীতিমত গবেষণা করতেন।

তিনি বলেন, এ শিল্পীর মানসিক শক্তিও ছিলো প্রচণ্ড। তার জন্যই হয়তো তিনি এক মনের বেগ ভাবালুতার পর্দা ছিড়ে একাধিক মনকে জানান দিতে পেরেছেন খুব সহজ করে। আর এ শিল্পীর অনন্য বৈশিষ্ট্য। তিনি তার কাজে সবসময় নিজের এ স্টাইলটা বজায় রেখেছেন।

প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ। প্রদর্শনী আর শিল্পীর চিত্রকর্ম নিয়ে তিনি বলেন, বিগত ৬ দশক ধরে এ চিত্রশিল্পী যে কাজ করেছেন, তা অনন্য। তার কাজ চিত্র শিল্পে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। এটি অবশ্যই আমাদের সংগ্রহ করা উচিত।

এসময় তিনি প্রদর্শনী থেকে শিল্পীর বেশকিছু চিত্রকর্ম ন্যাশনাল আর্ট গ্যালারি এবং জাতীয় জাদুঘরের গ্যালারির জন্য সংগ্রহ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

পঞ্চাশের দশকের শিল্পী আবু তাহের বিগত কয়েক বছর ধরে আক্রান্ত হয়ে আছেন দুরারোগ্য ব্যাধিতে। এ অবস্থায় গ্যালারি চিত্রক শিল্পীর পূর্বাপর কাজের সমন্বয়ে আয়োজন করা হয় এ প্রদর্শনীর। ১২ দিনের প্রদর্শনীটি সকল শিল্পানুরাগীদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে আগামী ৮ জুলাই অবধি প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।

বাংলাদেশ সময়: ০৮০৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০১৮
এইচএমএস/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।