ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

রিকশামিস্ত্রী আসমার স্বপ্ন সন্তানদের ‘মানুষ’ বানানো

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৮
রিকশামিস্ত্রী আসমার স্বপ্ন সন্তানদের ‘মানুষ’ বানানো কাজ করছেন রিকশামিস্ত্রী আসমা। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: ‘মেয়েরা কাজ করবে কেনো’ এ কথাটি তৃণমূল পর্যায়ে এখনও বহুল পরিচিত। সেখানে বলা হয়, মেয়েকে বেশি পড়ানোর দরকার নেই, বিয়ে দিয়ে দাও। যদিও  ঢাকাসহ প্রায় সব শহরগুলোতে পরিবর্তন এসেছে। নারী-পুরুষে শিক্ষা, চাকরিতে ভেদাভেদ করা হয় না কোনো।

যেযার মতো করে কাজ করছেন। তবে সব কাজ থেকে ভিন্ন কাজে (বাইসাইকেল ও রিকশা মেকানিক) ব্যস্ত আছেন আসমা।

মালিবাগ রেলগেট ও মৌচাকের মাঝামাঝি স্থানে বসে প্রতিদিনই বাইসাইকেল ও রিকশার কাজ করেন। কাজ করছেন রিকশামিস্ত্রী আসমা।                                          ছবি: বাংলানিউজএক সময়ে অভাব যার নিত্যসঙ্গী ছিল। সেই আসমা এখন বাইসাইকেল ও রিকশা সারানোর কাজ করে স্বাবলম্বী। অর্থের অভাবে নিজে পড়ালেখা চালাতে না পারলেও দুই ছেলে-মেয়েকে পড়ালেখা করাচ্ছেন। গ্রামে নিজের জমির ওপর বাড়ি হয়েছে। কিছু টাকাও জমেছে তার।

এসব বিষয় নিয়ে রোববার (২১ অক্টোবর) বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হয় তার। আসমা বাংলানিউজকে জানালেন স্বাবলম্বী হওয়ার গল্প।

আসমা বলেন, বরিশালের হিজলায় আমাদের গ্রামের বাড়ি। অভাবের মধ্যেই আমার বিয়ে হয়। সংসারে দুই সন্তান এসেছে। দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়ের মাধ্যমে ঢাকার আসি। আমার স্বামী (আব্দুল জব্বার সর্দার) মালিবাগের সোহাগ কাউন্টারের পাশে রিকশা- বাইসাইকেল মেকানিকের কাজ করতেন। একজনের আয়ে চারজনের সংসার ঠিক মতো চলে না। পরে তিনবছর ধরে আমিও কাজ শুরু করি।

তিনি বলেন, প্রথমে কাজ করতে পারতাম না। অনেকেই নানা কথা বলতেন। কারো কথাই আমি কান দেয়নি। আমার স্বামী আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন। আজ তার উৎসাহে সব কাজ শিখেছি। বাইসাইকেল, ভ্যান-রিকশার সব কাজই আমি করতে পারি। দু'জন মিলে দিন শেষে এখন প্রায় ৮শ টাকা পর্যন্ত আয় আসে।

আসমা বলেন, এক সময় পড়ালেখা করার প্রবল ইচ্ছা ছিল। কিন্তু অভাবের সংসারে সেটা স্বপ্নই থেকে যায়। আমি পড়ালেখা না করতে পারলেও দুঃখ নেই। এখন আমার ছেলে-মেয়ে পড়ালেখা করছে। মেয়েটা তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী, ছেলে পড়ছে প্রথম শ্রেণিতে। তাদের বড় সরকারি কর্মকর্তা বানাতে চাই। তাদের মানুষের মতো মানুষ বানাতে চায়।

কাজ করতে এসে কখনও কোনো বাধার মুখে পড়ছেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেকেই আসে বিভিন্ন কথা বলে। আমি কোনো কথা শুনি না। আমি আমার কাজ চালিয়ে যায়।

আমনার স্বামী আব্দুল জব্বার সর্দার বলেন, আসমা খুব মেধাবী। তাকে একটা কাজ অল্প বুঝিয়ে দিলে দ্বিতীয়বার আর বলা লাগেনি। সে নিজেই সেটা করতে পারে। এখন ও (আসমা) চেয়ে ভালো মিস্ত্রি হয়েছে। সব কাজ ভালোভাবেই করতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১৮
ইএআর/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।