ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

শীত এলো বলে...

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৮
শীত এলো বলে... শীতের পিঠা বানাতে ব্যস্ত এই নারী

ঢাকা: শীতে নতুন চালের পিঠা খাওয়ার রেওয়াজ গ্রামে চালু থাকলেও ইট-কাঠের শহরে তা একেবারেই হয়ে ওঠে না। তবে রাজধানীবাসীকে পিঠার স্বাদ থেকে বঞ্চিত হতে হয় না, রাস্তার পাশে গড়ে ওঠা ভ্রাম্যমাণ পিঠার দোকানের কল্যাণে। বছরব্যাপী রাজধানীবাসীকে পিঠার স্বাদে ডুবিয়ে রাখা এসব দোকান আরো জমজমাট হয় শীত মৌসুমে। আর গত ক’দিন দেশব্যাপী জেঁকে বসা পৌষের শীত যেন আরো ‘পূর্ণতা’ পেয়েছে রকমারি ভর্তার স্বাদে চিতই পিঠার সঙ্গে গুড়, নারকেলে তৈরি গরম গরম ভাঁপা পিঠায়।

রাত প্রায় সাড়ে ৯টা, রাজধানীর কর্মব্যস্ত মানুষ যখন ঘরমুখো, ঠিক তখন রাস্তার পাশে জটলা দেখে চোখ আটকে গেলো। কৌতূহল নিয়ে কাছে গিয়ে দেখা গেলো পিঠা খাওয়ার জন্য মানুষের এ জটলা।

তবে অবাক হতে হলো পুরো আয়োজন দেখে। এ যেন পিঠার কর্মযজ্ঞ!

রাজধানীর মিরপুরের পল্লবীর রূপনগরের দুয়ারীপাড়া বাজার সংলগ্ন এলাকায় চল্লিশোর্ধ্ব এক নারীর চারপাশ ঘিরে জ্বলছে ১৫টি চুলা। মাঝখানে কাঠের পিঁড়ি পেতে বসেছেন তিনি। এসব চুলায় তৈরি হচ্ছে চিতই ও ভাঁপা পিঠা। এর মধ্যে ১৩টি চুলাই ওই নারী একাই সামলাচ্ছেন। কিভাবে সম্ভব, কিছু সময় দাঁড়িয়ে তা বোঝার চেষ্টা। আর ওই নারীর পারদর্শিতা দেখে অবাক হওয়ার দশা।

পুরো প্রক্রিয়ায় দেখা যায়, ডান পাশ থেকে এক এক করে পিঠার জন্য তৈরি করা গোলা পাতিলে দিচ্ছেন। তারপর ঢেকে দেওয়া হচ্ছে পাতিল। এভাবে প্রতিটি পাতিলে নির্দিষ্ট পরিমাণ পিঠার গোলা দেওয়া শেষ করছেন মিনিটের মধ্যেই। আর প্রতিটি চুলার পিঠায় যেন কোনো হেরফের না হয় সেজন্য পাশ থেকে আরেকজন কাঠের টুকরো দিয়ে সমান আঁচ দিচ্ছেন।

গরম গরম পিঠা খাচ্ছেন ক্রেতারা
ওই নারীর সামনের ১৩টি চুলার মধ্যে ৯টিতে বানানো হচ্ছে ৫ টাকা মূল্যের বড় আকৃতির পিঠা। আর বাকি চারটিতে ৩ টাকা মূল্যের ছোট ছোট (একেকটিতে ৫টি করে পিঠা) পিঠা বানানো হচ্ছে। পাশেই আরো দুইটি চুলায় করা হচ্ছে ভাঁপা পিঠা। এর একটিতে হচ্ছে ৫ টাকা মূল্যের আরেকটি ১০টার মূল্যের পিঠা। চিতই পিঠা খাওয়ার জন্য রয়েছে কয়েক রকমের ভর্তা।

কৌতূহল নিয়ে কথা বলতে চাইলে দম ফেলার ফুরসত না পাওয়া ওই নারীর পাশ থেকে উত্তর দিলেন আরেকজন। ‍মূলত তারা চারজন এই পিঠার কর্মযজ্ঞে নিয়োজিত। এর মালিক হচ্ছেন পেছনে থাকা হোটেল ব্যবসায়ী মন্টু মিয়া। তার কাছ থেকেই জানা গেলো পুরো বিষয়ে।

মন্টু মিয়া জানান, মাগরিবের নামাজের পর শুরু হয় পিঠা বানানো। চলে রাত ১০টা পর্যন্ত। গড়ে প্রতিদিন ২০ কেজি চালের পিঠা বানানো হয়। এরপর ক্রেতার চাহিদার উপর বিষয়টি নির্ভর করে। তবে এতে কী পরিমাণ মুনাফা হয় তা বলেননি এ ব্যবসায়ী।

প্রতিদিন এক থেকে দেড়শ’ টাকায় মজুরিভিত্তিক কাজ করছেন এসব নারীরা। ঘরের কাজের পাশাপাশি এর মাধ্যমে তারা বাড়তি আয়ও করতে পারছেন। আর চার বছর দলে এর মাধ্যমে নিজের ব্যবসার চাকাও ভালোই সচল রেখেছেন পিরোজপুরের বাসিন্দা মন্টু মিয়া। সেই সঙ্গে এলাকাবাসীও পাচ্ছেন শীতের পিঠার মজা।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৮
জেডএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।