ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

হৃদয়ের চঞ্চলতায় শরৎ এলো সাড়ম্বরে

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৯
হৃদয়ের চঞ্চলতায় শরৎ এলো সাড়ম্বরে হৃদয়ের চঞ্চলতায় শরৎ এলো সাড়ম্বরে। ছবি: ডিএইচ বাদল

ঢাকা: শরৎ, তোমার অরুণ আলোর অঞ্জলি/ ছড়িয়ে গেল ছাপিয়ে মোহন অঙ্গুলি/ শরৎ, তোমার শিশির-ধোওয়া কুন্তলে/বনের-পথে-লুটিয়ে-পড়া অঞ্চলে/ আজ প্রভাতের হৃদয় ওঠে চঞ্চলি।

হ্যাঁ; কবিগুরুর ভাষায় আজ (পহেলা ভাদ্র) প্রভাতে হৃদয়ে চঞ্চলতা জাগিয়ে প্রকৃতিতে লুটিয়ে পড়েছে শরৎ। শুক্রবার (১৬ আগষ্ট) শুভ্রতা ছড়িয়ে কাশফুল আর শিউলী ফুলের মুগ্ধতায় সেজেছে প্রকৃতি।

ষড়ঋতুর বাংলাদেশে ঋতুর পালাবদলে এবার টানা দু’মাস শরতের রাজত্বকাল।

প্রকৃতিতে বর্ষার বৈশিষ্ট এখনও বহমান। আর বর্ষার সে ধারাই এবার শিশির হয়ে ঝরবে শরতে। শিউলিবনের বুকে উঠবে দুরুদুরু কাঁপন, কাশবনের সাদা পালে লাগবে শুভ্র মেঘের হিমেল হাওয়ার দোলা। বার মাসে ছয় ঋতুর এদেশে ভাদ্র-আশিন মাসজুড়ে প্রভাত রাঙাবে শারদ রাজা।

এদশের প্রতিটি ঋতুই বৈচিত্রময়। প্রকৃতি কখনো হয় প্রাণোচ্ছ্বলা চঞ্চলা তরুণী, কখনো হয় দীপ্ত চক্ষু শীর্ণ সন্ন্যাসিনী, কখনো বর্ষশীলা ক্রন্দনরতা অভিমানিনী, কখনো নিস্প্রুভ জরাগ্রস্ত বৃদ্ধা, আবার কখনো বা শান্তশিষ্ট স্নেহময়ী জননী।

ঋতুচক্রে ঝরো ঝরো বর্ষার পরিক্রমায় শরতের আগমন। কাশবনের উপর দিয়ে আকাশে শুভ্র মেঘের ভেলা ভাসিয়ে এসেছে শরৎকাল। বর্ষার বর্ষণের মধ্য দিয়ে শরৎ আসে শান্ত স্নিগ্ধ কোমল রূপ নিয়ে। নির্মল আনন্দ আর অনাবিল উচ্ছ্বাস যার বৈশিষ্ট। মায়াবী রঙিন ভুবন শরতেই পাওয়া যায়। তাইতো প্রকৃতির মতো মানুষের মনও প্রশান্তি পায় শরতে। মেঘাছন্ন আকাশ। মাঠে মাঠে চিরসবুজ ধান ক্ষেতের নয়নাভিরাম দৃশ্য, কৃষকের ঘরে নবান্ন উৎসব, জমা পানিতে ফোঁটা শাপলা-পদ্ম, ডাঙ্গায় ফোঁটা শেফালি-শিউলী-জুঁই বিমুগ্ধ করে প্রকৃতি। নির্মল সবুজ ঘাষের ডগায়, গাছের পাতায় জমে থাকা শিশিরে স্বচ্ছ সূর্য কিরণ ঝলমলে করে তোলে প্রকৃতির সে আয়োজন। দিনের ঝলমলে পৃথিবীকে রাতের ধবধবে জ্যোৎস্না আর ঝাউবনে জোনাকি পোকা আলো দিয়ে সৃষ্টি করে অপরূপ সৌন্দর্য।

বলা হয়, শরতের রূপ শান্ত-স্নিগ্ধ-কোমল। যেখানে মলিনতা নেই, আছে নির্মল আনন্দ আর অনাবিল উচ্ছ্বাস। কবি জীবনানন্দের ভাষায়, ‘যৌবন বিকশিত হয় শরতের আকাশে’। মহাকবি কালিদাসের ভাষায়, 'প্রকৃতি এ সময় নববধূর সাজে সজ্জিত হয়ে উঠে'। শরতের মেঘহীন নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা কেড়ে নেয় প্রকৃতিপ্রেমীদের মন। এতে মুগ্ধ হয়েছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও। বিলে শাপলা, গাছে গাছে শিউলির মন মাতানো সুবাসে অনুভূত হয় শরতের ছোঁয়া। প্রেমের কবি কাজী নজরুল ইসলামকেও আলোড়িত করেছিল শরতের প্রকৃতি। পল্লী কবি জসীমউদ্দীন শরতকে দেখেছেন ‘বিরহী নারী’ হিসেবে।

শরতে শেফালি, মালতী, কামিনী, জুঁই আর টগর মাথা উঁচিয়ে জানান দেয় সৌন্দর্য। মিষ্টি সুবাস ছড়িয়ে দেয় চার পাশে। গ্রামীণ প্রকৃতিতে শরৎ আসে সাড়ম্বরে। যদিও  ইট-কাঠের নগরীতে শরৎ থেকে যায় অনেকটা অন্তরালে। আবার, এই শরতেই হয়ে থাকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। শিউলী ফুল। শরতের এই প্রাণবন্ত রূপে নদীর তীরে ঘন কাশবন সাদা ফুলে ফুলে দোল দিয়ে ভরিয়ে তুলবে মনপ্রাণ। আকাশে শুভ্র মেঘের ভেলা অপরূপ করে তুলবে প্রকৃতি। কখনও কখনও ডানা মেলে উড়ে চলা সাদা বকের সারি নতুন মাত্রা এনে দেবে এই শরৎকালকে। তাইতো এ শরৎকে বরণ করতে আয়োজন করা হয় নানা অনুষ্ঠান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় শরৎবন্দনা ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন আয়োজন করে শরৎবরণ। আর এই ঋতুতে প্রকৃতির সৌন্দর্যের মতোই সুন্দর হয়ে উঠুক হৃদয়-মন-প্রাণ, এমনটাই প্রত্যাশা সবার।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৯
এইচএমএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।