বিখ্যাত স্প্যানিশ চিত্রশিল্পী পাবলো পিকাসো একবার বলেছিলেন, ‘চিত্রশিল্প হচ্ছে এমন মিথ্যে, যা আমাদের সত্য উপলব্ধি করতে সাহায্য করে। ’
বিশ্বের যেখানেই একজন চিত্রশিল্পী জন্মান না কেনো, এমনকি কোনো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে জন্মালেও, তিনি তার সামর্থ্য ব্যবহারের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন।
নিঃসন্দেহে যুদ্ধ মানুষের মনে গভীর এবং স্থায়ী প্রভাব ফেলে। তবে যুদ্ধের আরেকটি দিক হলো, তা শিল্পীর সামনে মানবিক সংকট এবং উত্তরহীন বড় কিছু প্রশ্ন উপস্থাপন করে।
ভারতীয় উপমহাদেশে এমন যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটি অঞ্চল কাশ্মীর। ১৯৮৯ সাল থেকে রক্তপাতের কেন্দ্র অঞ্চলটি। তবে প্রজাপতি হয়ে ওঠার জন্য শুঁয়োপোকাকে যেমন নীরবে কষ্ট সহ্য করতে হয়, তেমনই যুদ্ধ বিধ্বস্ত পরিস্থিতিতে কাশ্মীর উপত্যকার অনেকে হয়ে উঠেছেন শিল্পী। তারা তাদের যন্ত্রণা ফুটিয়ে তুলেছেন গল্প, কবিতা বা চিত্রশিল্পে।
উত্তর কাশ্মীরের বারমুল্লা জেলার বাসিন্দা জমির আহমাদ শেখ এমনই একজন শিল্পী।
চিত্রশিল্পী জমির আহমাদ শেখ।
নিয়ন্ত্রণ রেখার (এলওসি) কাছে সবুজ পাহাড় ঘেরা ওই অঞ্চলটি বেশ বিখ্যাত, এর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ঝিলাম নদী।
৪০ বছর বয়সী জমির স্কুলজীবন থেকেই কালো ক্যানভাসে তার স্মৃতি তুলে ধরা শুরু করেন। চিত্রকর্মে তিনি কাশ্মীরের মানুষের জীবনযাপন তুলে ধরেন।
জমিরের বয়স যখন ২৮, তখন বাড়ির পাশে ক্রসফায়ারের সময় বুলেটের আঘাতে তার বাবা মারা যান।
১৯৯২ সালের ৯ জুলাই জমিরের সঙ্গে ঝিলাম নদীর তীর দিয়ে হেঁটে বাড়ি ফেরার পথে ক্রসফায়ারে মারা যান উত্তর কাশ্মীরের বারমুল্লা জেলার বিখ্যাত শিল্পী হামিদ আহমাদ শেখ।
গত কয়েক দশকের সব রক্তপাতের সাক্ষী এ ঝিলাম নদী। পাকিস্তান ও ভারত সীমান্তের গুলি বিনিময়ের ঘটনাগুলো বেশিরভাগই এ অঞ্চলে ঘটেছে।
নিজের আঁকা চিত্রকর্ম নিয়ে জমির বলেন, ‘শিল্পী হিসেবে আমি যখন অনুপ্রেরণার জন্য চারপাশে তাকাই, এ ভূস্বর্গ (কাশ্মীর) তখন অনুপ্রেরণার সঙ্গে সঙ্গে সহিংসতাও দেয়। ’
১৯৯০ সালে পণ্ডিতদের মৃত্যুর পর কাশ্মীরের মানুষ তাদের শেষকৃত্য সম্পন্ন করে।
উপত্যকা ছেড়ে গেলেও কাশ্মীরি পণ্ডিতদের শিকড় এখনো কাশ্মীরেই আছে।
উপত্যকার জীবন।
উপত্যকায় লকডাউন।
ছেলেহারা এক মা।
বাবাকে হারিয়ে যে হতাশার ভেতর দিনযাপন করেছেন জমির, তা ফুটিয়ে তুলেছেন নিজের চিত্রকর্মে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০২০
এফএম