ঢাকা: চাকা ঘুরলেই সাদা-গোলাপি তুলা! মুখে দিলেই হাওয়ার মতো মিলিয়ে যায় মিঠাই হয়ে। শৈশবের সেই আবেগভরা প্রিয় খাবার হাওয়াই মিঠাই।
শহুরে ফাস্টফুডজাতীয় খাবারের ভিড়ে এখনকার শিশুরা হয়তো নামই জানে হাওয়াই মিঠাইর। তবু গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী এই খাবারটি উৎপাদন করে বাঁচিয়ে রেখেন হানিফ মিয়ার মতো কেউ কেউ।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর ) সকালে রাজধানীতে দেখা হয় হাওয়াই মিঠাই বিক্রেতা হানিফ মিয়ার সঙ্গে।
তার বয়স প্রায় ৬৫ বছর। রংপুর এলাকার বাসিন্দা। বর্তমানে ডেমরার মাতুয়াইল এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকেন। তিন কন্যার দু’জনের বিয়ে দিয়েছেন। এক সময় রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতেন। বয়সের ভারে এখন আর পারেন না। তাই বেছে নিয়েছেন এ ব্যবসা। তিনি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ঘুরে বিক্রি করেন হাওয়াই মিঠাই।
একসময় গ্রাম-গঞ্জের বিভিন্ন মেলা বা হাট-বাজারে নিয়মিত দেখা যেত হাওয়াই মিঠাই বানানোর ব্যস্ততা। বাড়ি বাড়িও ফেরি করে বিক্রি হতো। মজার বিষয় ছিল খাবারটি সামনেই তৈরি করে তুলে দিতো হাতে। এই মজা অন্য খাবারে ছিল না। তাই খাবারটির প্রতি আকর্ষণও ছিল বেশি।
কেউ ঘোরাচ্ছেন হাওয়াই মেশিনের চাকা, কেউ প্যাকেট করছেন, কেউ মেশিন থেকে নামানো মিঠাইকে গোলাকৃতির রূপ দিচ্ছেন। এরপর পলি মুড়িয়ে সাজিয়ে ভরে রাখছেন কাচের বাক্সে।
হাওয়াই মিঠাই বানাতে খুব বেশি কিছু লাগে না। একটি মেশিন, আর উপকরণ হিসেবে স্পিরিট, চিনি, তেল আর হালকা ভোজনযোগ্য রং। চলন্ত মেশিনের উপরিভাগের থালার মতো জায়গার মধ্যে ছিদ্রতে দেওয়া হয় এই উপকরণ। মেশিনের ঘূর্ণিতে যে তাপ উৎপাদন হয় তা থেকে রূপ নেয় হাওয়াই মিঠাই।
এক কেজি চিনি দিয়ে প্রায় ৫৫০ থেকে ৭৫০ টাকার হাওয়াই মিঠাই বানানো যেত। কিন্তু এখন কাচের বাক্সে তেমন আর দেখা যায় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাঁশের কাঠির মধ্যে প্যাঁচানো পলিথিন দিয়ে মোড়ানো বিভিন্ন কালারের হাওয়াই মিঠাই দেখা যায়।
সাধারণ সময়ে শহরে খুব কম দেখা যায়। তবে পহেলা বৈশাখ, ১৬ ডিসেম্বর অথবা অন্য কোনো জাতীয় দিবস বা অনুষ্ঠানের সময় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ হকারদের হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করতে দেখা যায়। বিভিন্ন উৎসবে শিশু-কিশোরদের মধ্যে হাওয়েই মিঠাইয়ের চাহিদাও বেশ। আবার বয়স্করাও কোনো কোনো সময় সন্তানদের সঙ্গে হারিয়ে যান শৈশবে। হানিফ মিয়ারা বাঁচিয়ে রাখুক ঐতিহ্যবাহী এ খাবারটি।
বাংলাদেশ সময়: ১০২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০২০
এএ