ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

৪ প্রজন্মের মুরব্বি তইজান নেছা, ছেলে-মেয়ে, নাতি-পুতির সংখ্যা ১১৪

জুলফিকার আলী কানন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০২০
৪ প্রজন্মের মুরব্বি তইজান নেছা, ছেলে-মেয়ে, নাতি-পুতির সংখ্যা ১১৪

মেহেরপুর: বৃদ্ধা তইজান নেছা। তিনি বিশ্বের সবচেয়ে প্রবীণ মানুষ কিনা তা বোঝা না গেলেও সন্তানদের দাবি তাদের মায়ের বয়স ১৩৫ এর কোটায়।

তিন ছেলে ও পাঁচ মেয়েসহ ৮ সন্তানের এই জননীর এখন ৩৪ জন নাতি-নাতনি। ৩৪ জন নাতি-নাতনির ঘরে আছে ৭২ জন পুতি ও পুতনি।

চার পুরুষের সংসার জীবনে তার বংশধর এখন ১১৪ জন। তবে তার স্বামী গোলাম বিশ্বাস মারা গেছেন প্রায় ২৫ বছর আগে। শুধু স্বামী নয়, বৃদ্ধা তইজান হারিয়েছেন তার বড় ছেলে ইউনুস আলি ও মেয়ে আত্তাজান নেছাকে।

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কল্যাণপুর কালীতলা পাড়া এলাকায় স্বামীর ভিটায় বসবাস করছেন তিনি। তিন ছেলের মধ্যে ইউনুস আলি মারা গেলেও মেঝো ছেলে ইউসুব আলি ও ছোট ছেলে আক্কাস আলি বেঁচে আছেন।  

মেয়েদের মধ্যে আত্তাজান নেছা মারা গেছেন। এখন বেঁছে আছেন, হাওয়া জান নেছা, আহাজান নেছা, সাহাজান নেছা ও মেহজান নেছা।

বয়সের ভারে নুয্য শরীর। চোখ দুটি বিদীর্ণ, মুখে পড়েছে অসংখ্য ভাজ। তারপরেও থেমে নেই বৃদ্ধা তইজান নেছার জীবন। এখনও তইজান নেছা ঘুরতে যান পাড়াতে। নাতি-পুতির সঙ্গে আড্ডায় মাতেন। শোনান, জীবনের সেই সোনালী দিনের গল্প। কখনো লাঠি ভর দিয়ে বা কখনো একাই হেঁটে বেড়ান তিনি। শরীরের শক্তি আগের মত না পেলেও এই বয়সে এখনো চোখে স্পষ্ট দেখতে পান তিনি। তবে মাঝে মধ্যে স্মৃতিভ্রম হয়ে পড়লেই ভুল বকেন তিনি। কথাগুলো জানালেন তইজান নেছার মেঝো মেয়ে হাওয়া জান নেছা (৫০)।

হাওয়া জান নেছা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা অত্যন্ত ভাগ্যবান যে, এখন পর্যন্ত আমাদের মাকে আমাদের মধ্যে দেখতে পাচ্ছি। আমার মায়ের চার পুরুষের জীবন। আমার বড় বোন এবং বড় ভাই মারা গেছেন। কিন্তু আমার মা আজোও বেঁচে আছেন।

বৃদ্ধা তইজান নেছাকে তার ছেলে এবং মেয়েরা সবাই দেখা শোনা করেন বলে জানালেন স্থানীয়রা।

কথা হলো তইজান নেছার সঙ্গে। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে তিনি বলেন, ‘আর বাঁচতে ইচ্ছা করে না। আমার ছেইলি মইরি গিচে। মেয়িও মইরি গিচে। মরণ আমাকে দ্যাকে না। স্বামীর কথা খুব স্বরণ করতে না পারলেও বার বার বলছিলেন ও আমাকে খুব ভালবাসতো। ওর কতা মনে হইলে খুব কষ্ট হয়। আমাকে একা ফেইলি সে আল্লাহর কাছে চইলি গিচে। তবে, মাঝে মাঝে বলছিলেন আমাকে কেউ দ্যাকে না বাবা, মিত্তি কতা কবোনা, আমাকে কেউ দ্যাকেনা। ’

জানা যায়, তইজান নেছার স্বামী গোলাম বিশ্বাস ছিলেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বর। এলাকার প্রভাবশালী ছিলেন তিনি। অনেক সম্পদের মালিক ও ছিলেন গোলাম বিশ্বাস। মারা যাওয়ার পর জমি জমা ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়েছেন ছেলে-মেয়েরা। তবে সবাই মায়ের প্রতি যত্নশীল।

তইজান নেছার নাতি আব্দুল মতিন, আতিন ও শিউলি খুতুন জানান, আমরা দাদিকে পেয়ে খুবই সুখী। আমাদের পরিবারের সব চেয়ে বয়স্ক মানুষ সে। আমরা ভাগ্যবান যে, আমাদের নাতি-নাতনিরাও আমার দাদিকে দেখতে পাচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮২১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০২০
এনটি
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।