ঢাকা: ডকুমেন্টস না থাকায় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মিথ্যাচারের জবাব দিতে পারি না। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যেসব ইতিহাস লেখা হয়েছে, সেগুলো অন্ধের হাতি দেখার মতো বলে মন্তব্য করেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর) মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আলহাজ্ব মো. শাহজাহান কবির বীর প্রতিকের গবেষণা গ্রন্থ ‘নৌ যুদ্ধ একাত্তর’ এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘যে সমস্ত ইতিহাস (মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক) লেখা হয়েছে, লেখকদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলতে চাই, সেগুলো অন্ধের হাতি দেখার মতো। পরিপূর্ণ কোনো চিত্র ওঠে আসেনি। যে যখন লিখেছি আমাদের দুর্ভাগ্য, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সকলের জন্য না, নিজেকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। আমি একাই যুদ্ধ করেছি, অন্যরা আমাকে সাহায্য করেছে, আমিই সব পরিকল্পনা করেছি, নেতৃত্ব দিয়েছি, সব আমার ব্রেন থেকে এসেছে, অন্যরা ফলো করেছে- নিজেকেই ফোকাস করেছে বেশি। ... সেগুলো পরিহার করে ইতিহাসের আলোকে যার যেটা অবদান সেটা আমরা কম্পাইল করে যেন একটা বই করতে পারি সে বিষয়ে আপনাদের (বীর মুক্তিযোদ্ধা) সহযোগিতা চাই। আমরা যেন নিজের অংশটুকু ছোট ছোট করে লিখে রাখি, আমি কী দেখেছি, আমি কী জানি। ইতিহাস তো লিখতেই হবে। ’
তিনি বলেন, ‘একাত্তরের রণাঙ্গনে যারা যুদ্ধ করেছেন, কীভাবে সেই যুদ্ধে গেলেন, যুদ্ধে কী করেছেন, সহযোদ্ধাদের কথা- সব তাদের কণ্ঠেই ধারণ করে রাখবে সরকার। দুই-তিন মাসের মধ্যে ‘বীরদের কণ্ঠে বীরগাথা’ শিরোনামে সেসব বীরত্বের গল্প ধারণ শুরু হবে। আমরা মন্ত্রণালয় থেকে একটি কর্মসূচি নিয়েছি ‘বীরের কণ্ঠে বীরগাথা’। জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের মৌখিক ভাষ্য আমরা ১৫ থেকে ২০ মিনিটে শুনতে চাই, সেটা আর্কাইভে রাখব। যতদিন এই পৃথিবী থাকবে ততদিন যেন সংরক্ষিত হয়। আশা করি আমরা আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে রেকর্ড করা শুরু করব। প্রত্যেক ব্যক্তির (বীর মুক্তিযোদ্ধ) বাড়ি বাড়ি গিয়ে রেকর্ড করা হবে এবং সেগুলো সারাজীবন সংরক্ষিত থাকবে। ’
আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘নৌ, বিমান ও সেনাবাহিনীর কাছ থেকে আলাদা আলাদা লেখা চাওয়া হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকেও লেখা নিয়ে কম্পাইল করে ছোট আকারে বই করা হবে, যাতে মানুষ পড়তে পারে। আমরা যারা যুদ্ধ করেছি আমাদের জীবদ্দশায় যদি ইতিহাস এভাবে বিকৃত হয়, আমরা যেদিন থাকব না সেদিন কী হতে পারে একটু চিন্তা করলেই আমরা বুঝতে পারি। তাই আমরা যেন যার যার অংশটুকু লিখি। ওরা লুটপাট, ধর্ষণ ও বর্বরতার কাজে জড়িত হয়েছে বলেই ওদের সৈনিকদের মনোবল থাকেনি। সে কারণে প্রায় এক লাখ সৈনিক আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছে, এর থেকে অপমানজনক ইতিহাস পৃথিবীতে আর নেই। কারণ পাকিস্তানী সৈন্যতে মাত্র সাত ভাগ বাঙালি আর ৯৩ ভাগ তাদের লোক ছিল।
‘নৌ-যুদ্ধ একাত্তর’ গ্রন্থটি আগামী ১৫ দিনের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দুই লাখ টাকার বই কিনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন গ্রন্থাগারে সংরক্ষণ করা হবে বলেও এসময় জানান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী।
গ্রন্থের লেখক মো. শাহজাহান কবির বীর প্রতীক জানান, গবেষণাধর্মী তার গ্রন্থে মুক্তিযুদ্ধ এবং এর পটভূমি বিস্তৃত প্রেক্ষাপটে পরিস্ফুটিত হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় নৌপথে নৌ কমান্ডো বাহিনীর দুঃসাহসিক নৌ অপারেশনের বীরত্বগাথা এবং একাত্তরের মধ্য অগাস্ট থেকে ডিসেম্বরের বিজয় পর্যন্ত অর্জন গ্রন্থটিতে বর্ণনা করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ, মাহবুব এলাহী বীর প্রতীক, নৌ কমান্ডার মাহবুবুর রহমান, ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুস সত্তার বীর প্রতীক, রবিউল আলম বীর উত্তম, ক্যাপ্টেন সাহাবুদ্দিন আহমেদ বীর উত্তম এবং বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা নৌ কমান্ডার অ্যাসোসিয়েসনের কো-চেয়ারম্যান হাবিবুল হক খোকনসহ বিভিন্ন বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
অনুষ্ঠানে অন্যান্য বক্তারা বলেন, হাজারো কাহিনী আছে মুক্তিযুদ্ধের। সেগুলো সামনে আনতে হবে। আমাদের আত্মত্যাগের কাহিনীগুলো ছড়িয়ে দিতে হবে নতুন প্রজন্মের মাঝে। যেন তারা পথ না হারায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০২০
এইচএমএস/এমএইচএম