মানিকগঞ্জ: পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে তিন রুমের একটি চার চালা ঘর। ঘরটি তৈরিতে ব্যয় হচ্ছে বেশ কয়েক লাখ টাকা।
প্লাস্টিকের তৈরি ঘর কতটা মজবুত, সে নিয়ে বিতর্ক থাকলেও ব্যতিক্রমী স্থাপনাটি দেখতে প্রতিদিনই শতশত মানুষ ভিড় করছেন।
৪২ ফুট ঘরের মাত্র চার ভাগের একটি ভাগে রয়েছে ইট আর বাকি তিন ভাগের দেয়াল তৈরি হয়েছে পরিত্যাক্ত প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে।
প্রতি এক ফুট স্কয়ার দেয়াল তৈরি করতে প্রায় ৭১টি বোতল লেগেছে আর বাকি দেয়াল তৈরিতে লক্ষাধিক বোতলের প্রয়োজন হয়েছে। প্রথম দিকে ওই ঘরের মালিক নিজেই রাস্তা থেকে বোতল সংগ্রহ করতেন, পরে পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল বিক্রেতাদের কাছ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে বোতল কিনে নেন।
মানিকগঞ্জ জেলার সিংঙ্গাইর উপজেলার শেষ দক্ষিণ জামশা ও ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার ঘোষপাড়া এলাকায় রাস্তার ধারেই প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে দৃষ্টিনন্দন ঘর তৈরি করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন বকুল-নাছিমা দম্পতি।
বাড়িটি শুধু যে বসবাসের যোগ্য, তাই নয়, অন্যান্য পাকা বাড়ির চেয়ে দৃঢ় এবং নিরাপদ। বকুল পেশায় এক জন প্লাস্টিকের চাটাই বিক্রেতা। দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে বকুল-নাছিমা দম্পতির সংসার।
বোতল দিয়ে ঘরটি বানাতে শুরু করার পর অনেকে উপহাস করেছে বকুলকে। কিন্তু ঘরটিকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে দেখে তাদের ধ্যান ধারণা বদলাতে শুরু করেছে। অনেকেই এর প্রশংসা করছেন, সমালোচনাও করছেন কেউ কেউ।
জেলায় এ ধরনের ঘর নির্মাণের খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, এ প্লাস্টিকের ঘরটিকে নিয়ে “বোতল হোম” নামে এলাকায় পরিচিতি পাচ্ছে।
ঘরটি নির্মাণে তিন রঙের প্লাস্টিকের বোতল সংগ্রহ করতে হয়েছে, প্রতিটি বোতল হাফ লিটারের। বোতলগুলোতে বালু ভর্তি করার পর সিমেন্ট দিয়ে তা দেয়ালে গাঁথা হয়। বালু ভরা বোতলগুলো স্বাভাবিক ইটের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি দৃঢ় হয় বলেও দাবি বকুলের। অন্যদিকে ইট কিংবা ব্লক দিয়ে তৈরি ঘরের চেয়ে বালু ভর্তি বোতল গরমে তাপ শোষণ করে ঘরকে অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা রাখে।
এছাড়া পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে তৈরি ঘরটি পরিবেশ বান্ধব, অগ্নিনিরোধক। বকুল-নাছিমা দম্পতির এ প্লাস্টিকের ঘরটি বানানোর কাজ এক মাসের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।
বকুল মিয়ার স্ত্রী নাছিমা বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের নতুন বাড়িতে থাকার মতো কোনো ঘর ছিল না, ঘর দেওয়া অনেক জরুরি ছিল, কারণ মেয়েটা বড় হচ্ছে। ঘরের কথা বলার পর আমার স্বামী প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে ঘর বানানোর কথা বলেন। প্রথমে ভেবেছিলাম, হয়তো ঠাট্টা করে বলেছে। কিন্তু কয়েক দিন পর থেকেই রাস্তায় রাস্তায় বোতল কুড়াতে শুরু করে সে (বকুল)। আমরা ভাবছি, তার মাথায় সমস্যা হয়েছে। আশেপাশের লোকজনও তাই বলতো, বাড়ির বাইরে বের হতে পারতাম না। কিন্তু কাজ শুরুর পর আস্তে আস্তে যখন রঙিন বোতলের ঘর আকৃতি পেতে শুরু করলো, তখন ঘরটি দেখতে আমাদের বাড়িতে আশেপাশের লোকজন ভিড় করতে লাগলো। তাদের মাধ্যমে এ ঘরের কথা ছড়িয়ে পড়ায় আশেপাশের জেলা থেকেও মানুষজন আসছে ঘর দেখতে।
বকুল মিয়া বলেন, আমি প্লাস্টিকের চাটাইয়ের ব্যবসা করি। বাড়িতে যখন ঘর দিতে হবে, তখন একা একাই ভাবি এমন একটি ঘর দেবো, যা কিনা আশেপাশে কোথাও নাই। আর ঠিক ওই সময় মাথায় আসে প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে ঘর দেওয়ার চিন্তা। ইটের তৈরি ঘরের চেয়ে এর ব্যয় কম, আবার দেখতেও সুন্দর, ব্যতিক্রমও। শিক্ষিত মানুষের কাছে শুনেছি, এমন ঘর পরিবেশবান্ধবও। এসব চিন্তা থেকেই প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে ঘর তৈরি করেছি।
সিংগাইর উপজেলার জামশা ইউনিয়ন পরিষদের নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান গাজী কামরুজ্জামান বলেন, বকুল ব্যতিক্রমধর্মী একটি ঘর তৈরি করেছেন। আমি এমন ঘর আগে দেখিনি। মানুষের মুখে শুনে আমি নিজেও ঘরটি দেখতে গিয়েছিলাম। আমার কাছে মনে হয়েছে ঘরটি পরিবেশবান্ধব।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ খবির উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, মাইক্রো প্লাস্টিক পরিবেশের জন্য প্রচুর ক্ষতিকারক, বোতলগুলো সূর্যের আলো পেলে ভেঙ্গে যাবে। তবে এটি যদি প্লাস্টার করা হয়, তাহলে সারা জীবনেও নষ্ট হবে না। আমি এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছি, কারণ তারা এ বোতল রিইউজ (পুনরায় ব্যবহার) করছেন, যা পরিবেশের জন্য খুবই ভালো।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০২১
এসআই