ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

কালের সাক্ষী ৫০০ বছরের পুরোনো সাহাপুর রাজবাড়ি

মাছুম কামাল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০১ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০২২
কালের সাক্ষী ৫০০ বছরের পুরোনো সাহাপুর রাজবাড়ি রাজবাড়িতে প্রবেশের সিংহদ্বার

ঢাকা: ইতিহাস-ঐতিহ্যের আঁতুড়ঘর বাংলাদেশ। প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর শাসকরা এদেশে ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য এসেছিলেন।

এমনকি শাসনও করেছিলেন দীর্ঘ সময় ধরে। উপনিবেশবাদের সর্বশেষ উদাহরণ হল ব্রিটিশ শাসন। ১৯৪৭ সালে যার সমাপ্তি ঘটে। ফলে এ সুদীর্ঘ ইতিহাসের অংশ হিসেবে দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে আছে তাদের অসংখ্য স্থাপনা।


নাট্যমন্দির/দুর্গামন্দির

স্থাপনাগুলোর মধ্যে কিছু মোগল আমলের, কিছু পর্তুগীজদের, কিছু ব্রিটিশদের এবং পাকিস্তান আমলে নির্মিত অনেক স্থাপত্য ধ্বংস কিংবা প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থায় এখনো টিকে আছে। তেমনই এক স্থাপত্যের গল্প শোনাতে চাই আজ। বলছি, চট্টগ্রাম বিভাগের অধীন চাঁদপুর জেলার অন্তর্গত শাহরাস্তি উপজেলার সাহাপুর রাজবাড়ির কথা।


খাজাঞ্চিখানা

পটভূমি: ইতিহাস বলছে, আনুমানিক পনের শতকের সময় এ রাজবাড়ি বা জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রাজা শিবানন্দ খাঁ। ৷ তবে, এর স্বপক্ষে কোনো শিলালিপি পাওয়া যায়নি। এ সাহাপুর রাজবাড়িটি ছিল প্রাচীন মেহের পরগণার রাজধানী। স্থানীয়ভাবে এ রাজবাড়িটি অনেকের কাছে সাহাপুর চৌধুরী বাড়ি নামেও পরিচিত।


নাট্যমন্দিরের অভ্যন্তরে ঠাকুর আসনের জায়গা

রাজা শিবানন্দ খাঁর বংশধর ভুপেষ রায় চৌধুরী। বাড়িটির পটভূমি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, প্রায় ছয়শ’ বছর পূর্বে এ রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা শিবানন্দ খাঁ নিজমেহের হতে সাহাপুর গ্রামে আসেন এবং এ রাজবাড়িটি নির্মাণ করেন।

রাজবাড়ির দেয়ালের নকশাগুলো এত বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো সুস্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। চমৎকার নির্মাণশৈলীর জঙ্গলে ঘেরা এ রাজবাড়িটির অভ্যন্তরে সুড়ঙ্গপথ, বিশ্রামকক্ষ, এবং পানশালা রয়েছে। কথিত আছে রাজার বিরোধিতাকারীদের এ সুড়ঙ্গ পথে ফেলে দেওয়া হতে। যেখান থেকে কোনোদিন কেউ ফিরে আসেনি আর। বর্তমানে এ স্থাপত্যটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকায় ভেতরে কাউকে তেমন প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। তবে, বাড়ির অভ্যন্তরে থাকা বংশধরদের সঙ্গে কথা বলে ভেতরে প্রবেশ করা যেতে পারে।


তুলসীতলা

বাড়িটিতে যা-যা রয়েছে: রাজবাড়ির অভ্যন্তরে রয়েছে একটা সিংহদ্বার তথা পাহারা চৌকি, শানবাঁধানো পুকুর, ঠাকুর মন্দির, নাট্যমন্দির, খাজাঞ্চিখানা এবং মূল রাজবাড়ি।


দেয়ালের নকশাগুলো এখনো সুস্পষ্ট

এ রাজবাড়ির অদূরেই নাওড়া গ্রামে জমিদারদের তৈরি করা একটা মঠ আছে। যার নাম সত্যরাম মজুমদারের মঠ। তিন শতাধিক বছরের পুরনো এ মঠ সাহাপুর রাজবাড়ির বংশধর দেওয়ান সত্যরাম মজুমদার ১৭৯১ সালে নির্মাণ করেন। তবে এর প্রতিষ্ঠাতা কে তা নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। কারো কারো মতে এ মঠটির প্রতিষ্ঠাতা জমিদার শৈলনাথ মজুমদার, যিনি তার মায়ের সমাধির ওপর স্মৃতিস্তম্ভ হিসেবে মঠটি তৈরি করেছিলেন।


জঙ্গলে ঘেরা মূল রাজবাড়ি

কালের বিবর্তনে হয়ত এক সময় হারিয়ে যাবে এ নিদর্শন। পানশালা বন্ধ হয়েছে বহু আগেই। সেখনে এখন নেই প্রজাদের আনাগোনা। নেই পূন্যাহ অনুষ্ঠান, খাজাঞ্চিখানার ব্যস্ত গোমস্তার চোখ রাঙানি। আছে তার প্রায়মৃত স্মৃতি কেবল। তবু, ঐতিহ্যের পরম্পরায় ৪শ’ বছর ধরে প্রচলিত দুর্গাপূজা এখনো মহাসমারোহে অনুষ্ঠিত হয়। কে জানে! হয়ত বাতাসের ইথারে কান পাতলে শোনা যেতেও পারে বাঈজির ঘুঙুর রিমঝিম শব্দ।


ঠাকুরমন্দির

যেভাবে যাবেন: ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে চাঁদপুর অভিমুখী পদ্মা, আল-আরাফাহ, তিশা নামের যেকোনো একটি বাসে চেপে বসলে ৩-৪ ঘণ্টার মধ্যে শাহরাস্তি গেট নামতে পারবেন। সেখান থেকে ৩০-৫০ টাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বা সিএনজি চালিত অটোরিকশা করে যেতে পারবেন সাহাপুর রাজবাড়িতে। এছাড়াও ঢাকা সদরঘাট থেকে চাঁদপুরের বেশ কিছু লঞ্চ আছে, চাইলে সেগুলোতে করেও যেতে পারবেন। সেক্ষেত্রে চাঁদপুর সদর থেকে আপনাকে শাহরাস্তি গেট আসতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২০০, ২১ জুন, ২০২২
এমকে/জেডএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।