ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

কিশোরগঞ্জে ‘বড়ইতলা গণহত্যা’ দিবস পালিত

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০২২
কিশোরগঞ্জে ‘বড়ইতলা গণহত্যা’ দিবস পালিত

কিশোরগঞ্জ: ১৯৭১ সালের ১৩ অক্টোবর কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার কর্শাকড়িয়াল ইউনিয়নের বড়ইতলা নামক স্থানে ৩৬৫ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে নির্মমভাবে হত্যা করে রাজাকার ও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।  

প্রতি বছর ১৩ অক্টোবর দিনটি বড়ইতলা গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে কিশোরগঞ্জবাসী।

বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড, স্থানীয় আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এছাড়া বড়ইতলা স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালিত হয়েছে।

জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ১৩ অক্টোবর সকাল ১০টার দিকে কিশোরগঞ্জ থেকে ট্রেনে করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী বড়ইতলা নামক স্থানে এসে নামে। পরে তারা পার্শ্ববর্তী দামপাড়া গ্রামে গিয়ে চার/পাঁচজন নিরীহ গ্রামবাসীকে গুলি করে হত্যা করে। ঘটনার আকস্মিকতায় প্রাণে বাঁচতে কর্শাকড়িয়াইল ইউনিয়নের দামপাড়া, বীরদামপাড়া, কড়িয়াইল, তিলকনাথপুর, গোবিন্দপুর, চিকনিরচরসহ আশপাশের গ্রামের লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ছোটাছুটি করতে থাকেন। এসময় রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীর সদস্যরা গ্রামের সাধারণ মানুষকে সভা হবে বলে ডেকে বড়ইতলা নিয়ে যায়। সেখানে গেলে সাধারণ মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। স্থানীয় রাজাকাররা পাকিস্তানি সৈন্যদের নিয়ে গ্রামে গ্রামে গিয়ে বাড়িঘরে লুটতরাজ, নারী নিপীড়ন ও অগ্নি সংযোগ করে। এ সময় এক রাজাকার গুজব ছড়ায় যে গ্রামবাসী দুই পাকিস্তানি সৈনিককে মেরে ফেলেছেন। এ গুজবের পর বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগিতায় কিশোরগঞ্জ-ভৈরব রেললাইনের পাশের বড়ইতলা এলাকায় ধরে নিয়ে গিয়ে নিরীহ ৩৬৫ জনকে দাঁড় করিয়ে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে, রাইফেলের বাট দিয়ে পিটিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে।  

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তৎকালীন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বড়ইতলার গণহত্যার স্থল পরিদর্শন করেন। পরে বড়ইতলার নাম পরিবর্তন করে ‘শহীদ নগর’ রাখা হয়। শহীদদের স্মরণে সেখানে তখন একটি স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়। পরে ২০০০ সালে সরকারের সহযোগিতায় বড়ইতলা এলাকায় রেললাইনের পাশে ৬৬৭ বর্গফুট এলাকায় ২৫ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়।

বড়ইতলা হত্যাকাণ্ডে স্বজনহারা শত শত পরিবার এখনো মানবেতর জীবন-যাপন করছে। তাদের খবর রাখে না কেউ। এখনো মেলেনি শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি ও মর্যাদা।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।