ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

টাঙ্গন ব্যারেজে চলছে মাছ ধরার উৎসব, অংশ নিতে পারে যে কেউ

শরিফুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২, ২০২২
টাঙ্গন ব্যারেজে চলছে মাছ ধরার উৎসব, অংশ নিতে পারে যে কেউ

ঠাকুরগাঁও: টাঙ্গন নদীতে দেওয়া ঠাকুরগাঁও পানি উন্নয়ন বোর্ডের ব্যারেজের কাছে বসেছে মাছ শিকারিদের মিলনমেলা।  

মঙ্গলবার (১ নভেম্বর) সকালে মাছ ধরার উৎসবে মেতে ওঠেন এলাকার লোকজন।

সপ্তাহখানেক ধরে চলবে মাছ ধরা।

ঠাকুরগাঁও শহর থেকে ২৩ কিলোমিটার উত্তরে ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় দুই জেলায় মধ্যে টাঙ্গন ব্যারেজ (বাঁধ)। সদর উপজেলার রাজাগাঁও ইউনিয়নের চাপাতি গ্রামে অবস্থিত টাঙ্গন ব্যারেজ। হাজার হাজার মাছ শিকারি এখানে মাছ ধরতে আসেন।

কেউ মাছ ধরে বিক্রি করছেন, আবার কেউ কেউ শখের বশে জাল দিয়ে মাছ ধরে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। আবার কেউ মাছ শিকার দেখতে গিয়ে সেখান থেকে মাছ কিনে নিয়ে বাড়ি ফিরছেন।

পঞ্চগড়ের থেকে আসা আলমগীর হোসেন বলেন, আমি শখের বসে মাছ ধরতে এসেছি। কিন্তু অনেকক্ষণ জাল 
পেতে রাখার পর অল্প কিছু মাছ পেয়েছি। তবে বাড়ি ফেরার সময় এখান থেকে আরও মাছ কিনে নিয়ে যাব।

ঠাকুরগাঁও থেকে মাছ ধরতে আসা রবি বলেন, আমরা প্রতি বছরই এখানে মাছ ধরতে আসি। প্রতি বছরই অনেক মাছ পাই, কিন্তু এবারের চিত্র একটু ভিন্ন। কারণ ব্রিজের সামনের জমিতে পানি জমে থাকে আর সেই জমির মালিক তাতে মাছ আটকে রাখেন।

দেবীগঞ্জ থেকে আসা জেলে শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রতিবছর এখানে মাছ ধরতে আসি, এ উৎসব থাকে প্রায় এক সপ্তাহ। এখানে যে যার মতো মাছ শিকার করে নিজেদের বাড়ি নিয়ে যান, আবার কেউ বিক্রি করেন।

সোমবার রাত ১০টায় প্রতি বছরের মতো টাঙ্গন ব্যারেজের গেট খুলে দেওয়া হয়। মাছ শিকার করার জন্য সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় এ ব্যারেজ। যখন পানি কমতে থাকে তখন শুরু হয় মাছ ধরার উৎসব। এখানে বিভিন্ন জেলার মাছ শিকারিরা তাবু টাঙিয়ে দিনরাত মাছ শিকার করেন।
মাছ শিকারিরা ফিকা জাল, লাফি জাল, কারেন্ট জাল, চটকা জালসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম নিয়ে আসেন মাছ শিকার করার জন্য।

প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের সমাগম হচ্ছে এ ব্যারেজে। এ সমাগম চলবে এক সপ্তাহ পর্যন্ত, জানালেন বাঁধের পাহারায় নিয়োজিত আনসার সদস্য।

এদিকে শহরের চেয়ে এখানকার মাছের দাম বেশি বলে জানালেন ক্রেতারা।

ঠাকুরগাঁও থেকে মাছ কিনতে আসা রবিউল হোসেন রিপন বলেন, এখানে টেংরা, গোচি, শিং, টুনা মাছ প্রতি কেজি ৪০০-৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর শোল, রুই, কাতলের কেজি চাওয়া হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। প্রতি কেজি পুঁটি মাছের দাম ২০০-২৫০ টাকা।

ঠাকুরগাঁও শহরের ব্যবসায়ী জালাল জানান, এখানে মাছের দাম বেশি। শহরে যে মাছ ৩০০ টাকায় পাওয়া যায়, সেই মাছ এখানে বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে।

রাজাগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান খাদেমুল ইসলাম জানান, প্রতি বছরের মতো এবারো এখানে মাছ ধরার উৎসব চলছে। দেখে মনে হয় যেন বিভিন্ন জেলার মানুষের মিলনমেলা। সবার জন্য এ জায়গা উন্মুক্ত। যে কোনো জেলার মানুষই চাইলে এখানে মাছ শিকার করতে পারেন। যে যার মতো যত খুশি তত মাছ ধরতে পারে।

উল্লেখ্য, ১৯৯০ সালে ঠাকুরগাঁও জেলার ৪৪ দশমিক ৫০ হেক্টর জমিতে শুষ্ক মৌসুমে গম, বোরো ধান, সরিষা ও আলু ক্ষেতে সম্পূরক সেচ দেওয়ার জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে ১৪ কোটি ৮২ লাখ ৭৭ হাজার টাকা ব্যয়ে পাউবো ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চাপাতি গ্রামে টাঙ্গন নদীর ওপর এ বাঁধ দেওয়া হয়।
১৯৮৪-৮৫ অর্থ বছরে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়ে ১৯৯২-৯৩ অর্থ বছরে শেষ হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১০১৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।