ইতিহাসের সবচেয়ে আলোচিত দলবদল হিসেবে পরিচিত ২০১৭ সালে নেইমারের বার্সেলোনা ছেড়ে পিএসজিতে যাওয়া। ২২২ মিলিয়ন ইউরোর অবিশ্বাস্য ওই ট্রান্সফার ফি দলবদলের সব রেকর্ড ভেঙে দেয়।
বার্সা ও মেসির সঙ্গে নেইমারের যে বন্ধন ছিল, তা এত সহজে ভেঙে যাবে, কেউ আগে অনুমান করতে পারেনি। অনেকটা হুট করেই এমন সিদ্ধান্ত নেন নেইমার। এরপর এতগুলো বছর এ নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল। তবে ধারণা করা হতো, মূলত মেসির ছায়া থেকে বের হতেই পিএসজিতে যান নেইমার। আবার কেউ কেউ দাবি করতো, পিএসজির টাকার লোভেই গেছেন তিনি। কিন্তু তার বাবা নেইমার সিনিয়র বললেন ভিন্ন কথা।
নেইমার সিনিয়র তার ছেলের বার্সা ছাড়ার ব্যাখ্যায় জানান, কোনো আর্থিক কারণ বা অসন্তুষ্টি থেকে নয়, মেসির জায়গা নিতে চাননি বলেই নাকি পিএসজিতে চলে যান ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। 'জতা জতা পডকাস্ট'-এ নেইমারের বাবা বলেন, 'পিএসজিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত তারই (নেইমার) ছিল। সে নিজেই পরিবর্তন চাচ্ছিল। '
'ওই সময় বার্সায় আমরা খুব কঠিন সময়ের মধ্যে ছিলাম, কারণ স্পোর্টিং ম্যানেজমেন্ট কী চায় আমরা বুঝতে পারছিলাম না। মনে হতো, ক্লাব নেইমারকে মেসির জায়গায় দেখতে চায় এবং সে (নেইমার) তা চায় না। সে অন্য কোথাও যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আমি চেয়েছিলাম, আমার সন্তান বার্সাতেই থাকুক। একদম শেষ দিনগুলোতেও তার বিদায় ঠেকাতে চেয়েছিলাম আমরা। কিন্তু সে চলে যায়, কারণ সে কিছুতেই মেসির জায়গা নিয়ে বার্সার সবচেয়ে বড় তারকা হতে চায়নি। '
বার্সার প্রতি নেইমারের দুর্বলতা অনেক পুরনো। বার্সার জার্সিতে খেলা যে তার স্বপ্ন, সে কথা ক্যাম্প ন্যুয়ে আসার আগেই জানিয়ে দেন তিনি। এমনকি এজন্য রিয়াল মাদ্রিদের বেশি বেতনের প্রস্তাবও ফিরিয়ে দেন। এ নিয়ে নেইমারের ম্যানেজারের দায়িত্বে থাকা তার বাবা বলেন, 'বার্সাতে যাওয়ার সিদ্ধান্তও পুরোটাই তার একার। আমার হাতে বার্সা ও রিয়ালের প্রস্তাব ছিল। রিয়ালেরটাতে তিন গুণ বেশি অর্থের প্রস্তাব ছিল। কিন্তু সে জানিয়ে দেয় যে, সে মেসি ও সুয়ারেজের সঙ্গে খেলতে চায়। বার্সার হয়ে খেলা তার স্বপ্ন ছিল। '
রিয়াল মাদ্রিদের প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ অবশ্য দাবি করেছেন, নেইমারকে পাওয়ার কোনো চেষ্টা তারা করেননি এবং বার্সার মতো অত টাকার প্রস্তাব দেওয়ার রিয়ালের পক্ষে সম্ভব ছিল না। যাই হোক, নেইমারের স্পেন ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ফলপ্রসূ হয়নি। যদিও শুরুতেই তাকে ঘিরেই খেলেছে পিএসজি। ফ্রান্সের ঘরোয়া ফুটবলে বেশ সাফল্যও পেয়েছে দলটি। কিন্তু ইউরোপীয় শিরোপা না জিততে পারা আর ইনজুরির থাবা মিলিয়ে শেষটা ভালো হয়নি তার।
যে মেসির ছায়া থেকে বের হয়ে পিএসজিতে গিয়েছিলেন নেইমার, নিয়তি তাদের ফের এক করে দেয়। বার্সা ছেড়ে সেই পিএসজিতেই যান মেসি। আক্রমণভাগে কিলিয়ান এমবাপ্পের সঙ্গে জুটি বেঁধে জেতেন দুটি ফরাসি লিগ ওয়ানের শিরোপা। কিন্তু ক্লাবটির কাঙ্ক্ষিত চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার স্বপ্ন পূরণ হয়নি। দুজনেই পরে প্যারিস ছেড়ে চলে গেছেন।
ইউরোপ ছাড়ার পর মেসি খেলছেন মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) ক্লাব ইন্টার মায়ামিতে। এরইমধ্যে সেখানকার সেরা খেলোয়াড় হিসেবে নিজের অবস্থান পাকা করে ফেলেছেন ২০২২ বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। আর নেইমার সৌদি প্রো লিগের ক্লাব আল-হিলালে। কিন্তু ইনজুরির কারণে এখনো নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি তিনি। শোনা যাচ্ছে, আগামী মৌসুমে ইন্টার মায়ামির হয়ে খেলতে পারেন নেইমার। তেমন হলে ফের একবার মেসি-নেইমার জুটি দেখা যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪
এমএইচএম