ঢাকা, শনিবার, ১০ মাঘ ১৪৩১, ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২৪ রজব ১৪৪৬

ফুটবল

হামজা চৌধুরীর মতো ফুটবলার তৈরি করতে চায় বসুন্ধরা কিংস ফুটবল একাডেমি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০২৫
হামজা চৌধুরীর মতো ফুটবলার তৈরি করতে চায় বসুন্ধরা কিংস ফুটবল একাডেমি

দেশের ফুটবলের উন্নয়নে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় ক্রীড়ানুরাগী শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ। তারই অংশ হিসেবে আবির্ভাব হয় দেশসেরা ফুটবল ক্লাব বসুন্ধরা কিংসের।

যাত্রা শুরুর পর থেকেই একের পর এক সাফল্যে ক্লাবটি নিজেদের নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। দেশের একমাত্র ক্লাব হিসেবে টানা পাঁচ আসরে লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে ইতিহাস গড়েছে তারা। জিতেছে ট্রেবল শিরোপাও।  

ফুটবলের কাঠামোগত উন্নয়নেও বসুন্ধরা কিংস অভূতপূর্ব অবদান রেখেছে। দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র ক্লাব যাদের ফ্লাডলাইট সহ আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম রয়েছে। মিলেছে ফিফার অনুমোদনও। দেশের ফুটবলের উন্নয়নের স্বার্থে নিজেদের আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে তারা। তাদের হাত ধরে যাত্রা শুরু করেছে বসুন্ধরা কিংস ফুটবল একাডেমি। দেশের ফুটবলের পাইপলাইন সমৃদ্ধ করতে ফুটবল একাডেমি শুরু করেছে তারা। দেশের সব ক্লাব এমন উদ্যোগ নিলে দেশেই হামজা চৌধুরির মতো বিশ্বমানের ফুটবল তৈরি সম্ভব বলে বিশ্বাস করেন বসুন্ধরা কিংসের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর বায়েজিদ আলম জুবায়ের নিপু।

বসুন্ধরা কিংসের এই একাডেমি চলছে ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলগুলোর একাডেমির আদলে। পরিচালিত হচ্ছে দেশের দক্ষ কোচ দ্বারা। রয়েছে সব ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা। তিনটি ভিন্ন ক্যাটাগরিতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে খুদে ফুটবলাররা। ৬-১০ বছর, ১১-১৪ বছর এবং ১৫-১৮ বছর বয়সীদের নিয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বসুন্ধরা কিংস। দেশের ফুটবলের পাইপলাইন শক্তিশালী করতেই তাদের এই পরিকল্পনা। সপ্তাহে পাঁচ দিন চলে এই ফুটবল প্রশিক্ষণ। প্রতি শুক্র এবং শনিবার সব বয়সী ফুটবলাররা প্রশিক্ষণ করেন।  

এছাড়া আরও তিনদিন বয়সভিত্তিক তিনটি ভিন্ন ক্যাটাগরিতে প্রশিক্ষণ চলে। বর্তমানে বিভিন্ন বয়সের প্রায় আড়াইশ ফুটবলার এখানে ট্রেনিং নিচ্ছে। এত অল্প সময়েই এত সাড়া পেয়ে অভিভূত জুবায়ের নিপু। তিনি বলেন, ‘আমরা তিন মাস আগে বসুন্ধরা কিংসের প্রেসিডেন্ট ইমরুল হাসানের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিই। এরপর এই অ্যাকাডেমি শুরু করি। এরপর আমরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি। এখানে প্রায় আড়াইশ ছেলেপেলে আছে। সপ্তাহে তিন দিন এখানে ট্রেনিং হয়। বাকি দিনগুলোতে তারা বাসায় অনুশীলন করে। শুক্র ও শনিবার সকাল থেকেই ট্রেনিং শুরু হয়। এছাড়াও আরও তিন দিন ট্রেনিং হয়। ’

আপাতত এখানে অপেশাদার ফুটবলের একাডেমি করা হয়েছে। খুব দ্রুতই পেশাদার ফুটবল একাডেমির পরিকল্পনাও রয়েছে বলে জানিয়েছেন নিপু। আবাসিকভাবেই ফুটবলাররা ট্রেনিং নিতে পারবে তখন। নিপু বলেন, ‘এখন এখানে ভর্তি হওয়ার জন্য যে কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। ভর্তি ফি দশ হাজার টাকা। আর মাসিক ফি ছয় হাজার টাকা। এছাড়া বসুন্ধরা আবাসিকের বাসিন্দাদের জন্য এখানে ৫০ শতাংশ ছাড় রয়েছে। বর্তমানে এটা অপেশাদার একাডেমি। যেহেতু এটা অনাবাসিক। দ্রুতই আমরা আবাসিকের দিকে যাবো। ’

দেশে কাগজে-কলমে অনেক একাডেমিই রয়েছে। তবে বসুন্ধরা কিংসের মতো পেশাদার সুযোগ-সুবিধা আর কোনও অ্যাকাডেমিতে নেই। এটাই অভিভাবক এবং ফুটবলারদের আকৃষ্ট করছে বলে মনে করেন নিপু। তিনি বলেন, ‘আপনি চারপাশে তাকিয়ে দেখেন এমন একাডেমি দেশে আর কারো নেই। একটা ন্যাচারাল মাঠ আছে, একটা ট্রেনিং গ্রাউন্ড আছে, চারটা টার্ফ আছে, ট্রেনিংয়ের পর নাস্তার ব্যবস্থা আছে, ডক্টর-ফিজিও সব আছে, দেশের সেরা কোচ আছে। যখন যেখানে যা প্রয়োজন তাই আছে। সব প্রফেশনাল কোচ তাদের কোচিং করাচ্ছে। এক সেকেন্ডের জন্যও কেউ দূরে সরে যাচ্ছে না। এটাই সকলকে আকৃষ্ট করছে। ’

বসুন্ধরার মতো অন্য ক্লাবগুলোরও একাডেমির দিকে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন নিপু। যদি দেশের সব ক্লাব একাডেমি করে উন্নত প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করে, তবে দেশেই হামজা চৌধুরীর মানের ফুটবলার তৈরি করা সম্ভব বলে মনে করেন নিপু। তিনি বলেন, ‘দেশের বাইরে দেখবেন সব ক্লাবেরই নিজস্ব উন্নতমানের একাডেমি রয়েছে। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই বিষয়টি ভিন্ন। আবাহনী-মোহামেডান কারও কোনো একাডেমি নেই। আমাদেরও ছিল না। আমরা সম্প্রতি শুরু করেছি। তারাও যদি আমাদের দেখাদেখি শুরু করে, তবে আর আমাদের বাইরে থেকে হামজা আনতে হবে না। দশ বছর পর এখান থেকেই হামজা তৈরি হবে। ’

‘এখানে যে ফুটবলাররা রয়েছে তারা প্রত্যেকেই ভালো ফুটবলার হতে চায়। নিজেদের সেরটা মাঠে প্রকাশ করতে চায়। শুধু প্রয়োজন তাদের সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া। প্রতিটা ক্লাব যদি এই ইয়ুথ ডেভেলপমেন্টের দিকে নজর দেয়, তবে আমার মনে হয় দেশের ফুটবলের চেহারা বদলে যাবে,’ যোগ করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০২৫
এআর/এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।