ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফুটবল

জাতীয় দলের ফুটবলারদের নাম জানেন তো?

মহিবুর রহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩১ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০১৬
জাতীয় দলের ফুটবলারদের নাম জানেন তো? অনুশীলনরত বাংলাদেশ জাতীয় দলের ফুটবলাররা-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম থেকে ফিরে: মামুনুল ইসলাম, জাহিদ হোসেন এমিলি ও হেমন্ত ভিনসেন্ট। এই তিনটি নাম ছাড়া চট্টগ্রামের ক্ষুদে ও তরুণ ফুটবলাররা বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের আর কোন প্লেয়ারের নাম জানে না!
 
 ভাবছেন মজা করছি।

না, মোটেও তা নয়। যা সত্যি তাই বলছি।
 
 গত ২৩ জুলাই বিকেলে চট্টগ্রাম বন্দর স্টেডিয়ামে গিয়েছিলাম বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের এবারের মৌসুমে শেখ রাসেল ক্রীড়‍া চক্রের প্রথম ম্যাচের আগের দিনের অনুশীলনের সংবাদ সংগ্রহ করতে। সেখানে গিয়ে দেখি মাঠের বাঁদিকে ছোট একটু জায়গার মধ্যে ফুটবল খেলছে স্থানীয় কিছু ক্ষুদে ও তরুণ ফুটবলার। দেখে বেশ ভালোই লাগলো। মনে মনে ভাবেতে লাগলাম, যাক এদেশের ফুটবলের দুঃখ বুঝি শেষ হলো।


 

তাদের কাছে গিয়ে কথা বলার পর আমার ধারণার আংশিক প্রমান মিললেও দেশের ফুটবল নিয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি দেখে হতাশ হয়েছি। কেননা সেখানে উপস্থিত ফুটবলারদের কাছে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের প্লেয়ারেদের নাম জানতে চেয়েছিলাম।
 
 ন‍াম জানতে চাইলে চটপট উত্তরে একজন বললো, ‘মামুনুল ইসলাম’। মামুনুলের নাম বলার পর মুখে আরতো নাম আসে না! ওদের চোখে মুখে লজ্জার লালচে আভা আমার চোখে আটকে যাচ্ছিলো। এভাবে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ সেকেন্ড পর জটলার ভেতর থেকে একজন বললো ‘জাহিদ হোসেন এমিলি’। তারও বেশ খানিকটা সময় পর একজন বেশ নিচু স্বরে বললো ‘হেমন্ত ভিনসেন্ট’। যেন বলতে ভীষণ লজ্জা পাচ্ছিলো।
   
 আর কেউ? ‘ভাইয়া আমরাতো বাংলাদেশের ফুটবল খেলা দেখি না তাই নামগুলোও ঠিক মতো বলতে পারছি না। ’ কেন দেখ না? উত্তরে জানালো, বাংলাদেশের খেলাগুলো বিটিভি ছাড়া আর কোন স্যাটেলাইট চ্যানেলই দেখায় না। আর বিটিভি আমাদের টিভিতে ঝিরঝির করে তাই দেখতে পারি না। ’


 
এই তিনজনের ভেতরে তোমাদের ফেবারিট ফেবারিট কে? ‘ফেবারিট বলতে কেউ নেই। যদি কেউ তেমন ভালো খেলতো তাহলে থাকতো। ’ সমস্বরে ওখানকার উপস্থিত সবাই বলে উঠলো।
 
 ওদের সাথে কথা শেষ করে অনুশীলনের সংবাদ সংগ্রহ করে বেরিয়ে এলাম স্টেডিয়ামের বাইরে। সেখানেও একই বয়সী কয়েকজনকে দেখে প্লেয়ারদের নাম জানেতে চাইলে তারা কেউ একজনের নামও বলতে পারলো না!
 
এভাবে বন্দর স্টেডিয়াম থেকে দামপাড়া আসতে আসতে ওদের সমবয়সী যতজন পেয়েছি সবার কাছেই জানতে ছেয়েছিলাম প্লেয়ারদের নাম। সবার অবস্থা একই। এক কিংবা দু’জন ছাড়া কেউই সর্বোচ্চ ৫ জন জাতীয় ফুটবল খেলোয়াড়ের নাম বলতে পারেনি! অথচো এদের ভেতর থেকেই এদেশের ক্রিকেটারদের নাম জিজ্ঞেস করলে অর্ডার সহ এগার জনের নাম এক নিঃশ্বাসে বলে ফেললো!


 
 বিষয়টি এদেশের ফুটবলের জন্য কতখানি লজ্জার সেটা ভাবার সময় এখনও কী আসেনি?
 
 বাংলাদেশের ফুটবলের এমন দৈন্য দশা কাটাতে, মাঠে দর্শক ফিরিয়ে আনতে এবং দেশের ফুটবলকে আরও জনপ্রিয় করতে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন ও সাইফ গ্লোবাল স্পোর্টসের যৌথ উদ্যেগে গেল ২৪ জুলাই চট্টগ্রাম এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে গড়িয়েছে ভিন্ন আঙ্গিকের জেবি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ফুটবল।
 
কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো উদ্বোধনী দিনসহ পরের আরও দু’দিনে ১২ টি দলের মোট ৬টি ম্যাচে এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে কাঙ্খিত দর্শকের দেখা মেলেনি। প্রায় ৩০ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন স্টেডিয়ামের অধিকাংশ গ্যালারিই ছিল দর্শকশূণ্য! উদ্বোধনী দিনে হাজার পাঁচেক দর্শকের দেখা মিলেছিলো।


 
 তবে যেহেতু মৌসুমের মাত্র শুরু হলো সেহেতু একথা এখনই বলা ঠিক হবে না যে বাফুফে ও সাইফ গ্লোবাল স্পোর্টস তাদের কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। কেননা প্রথম রাউন্ড শেষে চট্টগ্রামে এখনও বাকি আছে আরও দুই রাউন্ডের খেলা। এরপরে আছে ময়মনসিংহ, সিলেট ও ঢাকা পর্ব। আর দ্বিতীয় পর্বতো শুরুই হয়নি।
 
এখন প্রশ্ন হলো যদি লিগের শেষ পর্যন্ত ফুটবল মাঠে এমন দর্শক খরা অব্যাহত থাকে তাহলে কী হবে? এমন কী পদক্ষেপ আছে যা গ্রহন করলে এদেশের ফুটবলে দর্শক ফিরবে ও এদেশের ফুটবল জনপ্রিয় হবে?
 
কেননা মাঠে দর্শক ফিরলেইনা এদেশের ফুটবল জনপ্রিয়তা পাবে। ক্ষুদে ও তরুণেরা জানতে পারবে লাল-সবুজের ফুটবলারদের নাম আর খুঁজে পাবে তাদের ফেবারিট খেলোয়াড়কে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৯২১ ঘণ্টা, ২৭ জুলাই ২০১৬
এইচএল

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।