ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

বৃহস্পতিবার বিশ্ব স্বেচ্ছা রক্তদাতা দিবস

ডাঃ মালিহা শিফা | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২১ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০১২
বৃহস্পতিবার বিশ্ব স্বেচ্ছা রক্তদাতা দিবস

ঢাকা: ১৪ জুন বিশ্ব স্বেচ্ছা রক্তদাতা দিবস। সারা পৃথিবী জুড়ে দিবসটি পালনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে যারা নিয়মিত রক্তদিয়ে অন্যকে সুস্থ করে তোলে তাদের স্বীকৃতি দেয়া।

একই সঙ্গে অসুস্থ রোগীদের জন্য রক্ত সংগ্রহ করা।

রক্তের গ্রুপের আবিষ্কারক কার্ল ল্যান্ড স্টেইনারের জন্মদিন উপলক্ষে প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী রক্তদাতা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।

স্পেনের বার্সালোনা শহর কেন্দ্রীক দিবসটি পালিত হয়। যাতে করে তরুণ শ্রেণী রক্তদানে আরও বেশি আগ্রহী হয়।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা সূত্রে জানা যায়, পৃথিবীর প্রায় ৮০ডঁ দেশের হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে মারাত্মক রক্ত ঘাটতি আছে। যার ৭৯টি দেশই উন্নয়নশীল দেশের অন্তর্ভুক্ত। কারণ উন্নয়নশীল দেশের অশিক্ষিত জনগোষ্ঠী রক্তদানে সাধারণত অনাগ্রহী এবং রক্ত দিতে তারা ভয় পায়।

রক্ত নিয়ে কাজ করে পৃথিবীজুড়ে যারা নাম করেছে এর মধ্যে এরকম কয়েকটি সংস্থা হলো, সুইজারল্যান্ডের ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর রেডক্রস এন্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, ডেনমার্ক ভিত্তিক দ্যা ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব ব্লাড ডোনার অরগানাইজেশন (আইএফবিডিও) ও নেদারল্যান্ড ভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অব ব্লাড ট্রান্সফিউশন (আইএসবিটি) প্রমুখ।

বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পরিচালিত নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন কর্মসূচি সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে বছরে প্রায় ছয় লাখ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন। সংগৃহীত রক্তের প্রায় ৭০ শতাংশ আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে পাওয়া যায়, ৩০ শতাংশ পাওয়া যায় স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের কাছ থেকে।

বাংলাদেশে ২০০০ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন কর্মসূচি শুরু হয়। এর আওতায় এ পর্যন্ত ২০৩টি রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। এ সব কেন্দ্রে এইডস, হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি, সিফিলিস এবং ম্যালেরিয়ার স্ক্রিনিং ব্যবস্থা চালু করা হয়। এর পাশাপাশি প্রায় ৫০টি বেসরকারি হাসপাতাল এবং ব্লাড ব্যাংক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইসেন্স সংগ্রহ করে রক্ত পরিসঞ্চালন পরিচালনা করছে।

সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালসহ মোট ১৮টি কেন্দ্র থেকে রক্তের উপাদান প্রস্তুত করে সরবরাহ করা হয়। সরকার নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন আইন প্রণয়ন এবং প্রয়োগ করেছেন।
 
স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য সরকার প্রণীত নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন আইন ২০০২-এর নির্দেশনা এবং এসআরও ১৪৫-এর ৩৫ নম্বর অনুচ্ছেদের কয়েকটি বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে। এতে বলা হয়েছে:

•    জাতীয় নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন বিশেষজ্ঞ কমিটির অধীনে ন্যাশনাল ভলান্টারি ব্লাড ডোনার কমিটি করা হবে, যারা ভ্রাম্যমাণ রক্ত সংগ্রহ ক্যাম্প পরিচালনা ও সারা দেশের ভলান্টারি ব্লাড ডোনেশন কার্যক্রমের সমন্বয় সাধন করবে।
•    পাশাপাশি সম্পূর্ণ রক্তের (হোল ব্লাড) পরিবর্তে ব্লাড কম্পোনেন্টের ব্যবহার বাড়াতে হবে।
•    হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
•    জাতীয় গণমাধ্যম ও বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীদের উদ্যোগে রক্তদানে উদ্বুদ্ধকরণের কার্যক্রম জাতীয় পর্যায়ে গ্রহণ করতে হবে।

•    মোটিভেশনের মাধ্যমে স্বেচ্ছায় রক্তদাতার মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে।

রক্তই রক্তের বিকল্প, অন্য কিছু নয়। অনেক চেষ্টা করেও বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম রক্ত আবিষ্কার করতে সক্ষম হননি। রক্ত একটি অমূল্য সম্পদ। সময়মতো রক্ত পাওয়ায় অধিকার নিশ্চিত করলে, বিশ্ব রক্তদাতা দিবসের যথাযথ মূল্যায়ন হবে। তাই বলা হয়, রক্তদান শুরু হোক আপনার থেকে। রক্ত মানুষের জীবন রক্ষা করে এই মূল্যবোধ জাগ্রত থাকুক সব সময়ের জন্য।

লেখক: ডা. মালিহা শিফা, কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স কর্মকর্তা, মেরি স্টোপস

বাংলাদেশ সময়: ১২১৪ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০১২
সম্পাদনা: তানিয়া আফরিন, বিভাগীয় সম্পাদক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।