ঢাকা: তামাক ব্যবহারের ফলে মানুষের শরীরে প্রায় ২০ রকমের ক্যানসার হতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ।
মঙ্গলবার (২৫ জুন) সকালে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে হাসপাতালটির সভাকক্ষে ‘বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণে চিকিৎসকদের অংশগ্রহণ: সফলতা ও ভবিষ্যৎ করণীয়’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, তামাকের মধ্যে ভালো কিছুই নাই। এর সবটাই খারাপ। মানুষের মাথা থেকে পা পর্যন্ত শরীরের ব্রেন, কিডনি, হার্ট, চোখ, লিভার তামাকের কারণে প্রতিটা অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রায় ২০ রকমের ক্যানসার তামাক ব্যবহারের ফলেই হয়। তামাকের মধ্যে প্রায় সাত হাজার কেমিক্যাল রয়েছে। এর মধ্যে ৬০ থেকে ৭০টি উপাদন সরাসরি ক্যানসারের জন্য দায়ী। সুতরাং তামাকের মধ্যে ভালো কিছুই নাই।
তিনি বলেন, তামাক কোম্পানিগুলো সরকারকে প্রতিবছর যে পরিমাণ ট্যাক্স দেয়, তার থেকে কয়েকগুণ বেশি তামাকজনিত চিকিৎসায় ব্যয় হয়। তরুণদের তামাকের প্রতি আসক্ত করতে সিগারেট কোম্পানি চালাকি করে সিঙ্গেল স্টিক সিগারেট বিক্রি করছে। যাতে সহজেই তরুণরা সিগারেট কিনতে পারে। তরুণদের আসক্ত করতে পারলে তারা অনেকদিন ব্যবসা করতে পারবে। তাই বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করা প্রয়োজন।
সেমিনারে তিনি বলেন, বিদ্যমান তামাক আইন সংশোধনের ব্যাপারে আমি নিজে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আইন সংশোধনের ব্যাপারে আগ্রহী। আমি ভবিষ্যতে প্রধানমন্ত্রীকে তামাক আইন সংশোধনের ব্যাপারে আবারও বলব।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক খন্দকার আব্দুল আউয়াল রিজভীর সভাপতিত্বে সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন মহাসচিব অধ্যাপক ফজিলা-তুন-নেসা মালিক।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী।
তিনি বলেন, দেশে তিন কোটি ৭৮ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করেন। কর্মক্ষেত্রসহ পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন তিন কোটি ৮৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। একই সঙ্গে তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে প্রতিবছর প্রায় এক লাখ ৬১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। এর কারণ বাংলাদেশ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ এবং তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন ও প্রণোদনা নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে এখনও সর্বোত্তম মান অর্জন করতে পারেনি বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল বলেন, জনস্বাস্থ্য রক্ষায় চিকিৎসকরা তামাক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। দেশের মানুষদের তামাকের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন করতে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করছে বিএমএ।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক খন্দকার আব্দুল আউয়াল রিজভী বলেন, তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের কারণে দেশে অসংক্রামক রোগ যেমন, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, ক্যানসার ও শ্বাসতন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদি রোগ বাড়ছে। বর্তমানে দেশে মোট মৃত্যুর ৬৭ শতাংশই অসংক্রামক রোগের কারণে ঘটছে। আর এ অসংক্রামক রোগ সৃষ্টির অন্যতম কারণ ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার। তাই এ অকাল মৃত্যু ঠেকাতে অবিলম্বে বিদ্যমান আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন সিটিএফকে’র দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ডা. মাহিন মালিক, যুক্তরাষ্ট্রের গ্লোবাল টোব্যাকো ব্রাঞ্চের প্রধান ড. ইন্দু আহলুওয়ালিয়া, কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আর রশিদ, বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. তারেক মেহেদী পারভেজ, বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি, সন্ধানী, প্ল্যাটফর্ম অব ডেন্টাল অ্যান্ড মেডিকেল সোসাইটির প্রতিনিধিসহ গণমাধ্যমকর্মীরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৫ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০২৪
আরকেআর/আরআইএস