ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

মায়ের ক্যানসার, নানীর গর্ভে জন্ম নিল চাঁদমুখ সিনথিয়া

ফিচার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৯, ২০১২
মায়ের ক্যানসার, নানীর গর্ভে জন্ম নিল চাঁদমুখ সিনথিয়া

দেখো দেখো, একেবারে তোমার মতো দেখতে হয়েছে! চিৎকার করে উঠল এমিলি। ডেলিভারি রুম থেকে সদ্যোজাত মেয়েকে নিয়ে ছুটল স্বামী মাইকের কাছে।

বাবার সঙ্গে মেয়ের পরিচয় করিয়ে দিতে হবে তো।
মেয়ের দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারছিলেন না সিন্ডি রুথজেল। নাতনির জন্ম দিয়ে যে এত সুখ পাওনা ছিল, বোধ হয় কল্পনাও করতে পারেননি ৫৩ বছরের প্রৌঢ়া!
হ্যাঁ। নাতনিরই জন্ম দিলেন শিকাগো শহরের বাসিন্দা সিন্ডি। এ যেন মেয়ে এমিলির জন্য জন্মদিনের উপহার।
সালটা ২০১০। হঠাৎই চিকিৎসকেরা জানালেন এমিলির ক্যানসার হয়েছে। জরায়ুমুখ ক্যানসার। তাকে বাঁচাতে হলে একমাত্র উপায় অস্ত্রোপচার। কিন্তু কী করে সম্ভব? গর্ভে যে সন্তান। অস্ত্রোপচার করা মানেই তো সন্তানের অবধারিত মৃত্যু। শুধু তা-ই নয়, আর কখনও মা হতে পারবেন না এমিলি! তাকে বাঁচাতে বাদ দেওয়া হল জরায়ু। বেঁচে গেলেন এমিলি।
কিন্তু তার মা হওয়ার স্বপ্ন... না সেটা শেষ হয়নি। কীভাবে? এগিয়ে এলেন সিন্ডি। কীভাবে মেয়েকে এই দুর্বিসহ মানসিক যন্ত্রণার হাত থেকে বাঁচাবেন, দিনরাত সেটাই ভাবছিলেন। হঠাৎ একটা খবর নজরে পড়ে সিন্ডির। ৩৪ বছর আগেকার ঘটনা। ব্রিটেনের লুইস ব্রাউন প্রথম টেস্ট টিউব বেবি। পুরনো এ খবরটা পড়ার পর থেকেই কেমন যেন অস্থির লাগছিল সিন্ডির, আরও জানতে হবে। যদি গর্ভদাত্রী মা হওয়া যায়? কিন্তু পঞ্চাশ পেরিয়ে আর কি তা সম্ভব?

হাজারো প্রশ্ন ভিড় করে সিন্ডির মাথায়। তিনি জানতে পারেন, মেনোপজের (নির্ধারিত বয়সসীমার পর ঋতুস্রাব স্থায়ীভাবে বন্ধ হওয়া) পরেও অন্যের দেওয়া ডিম্বাণুতে মা হওয়া যায়। ২০০৭-এ ৫১ বছর বয়সী এক ব্রাজিলীয় নারী মা হয়েছিলেন। পঞ্চাশ কেন, ষাটের কোঠাতেও মা হয়েছেন এমন নজিরও রয়েছে। এতসব উদাহরণ পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন সিন্ডি। দ্রুত যোগাযোগ করেন ডাক্তারদের সঙ্গে। নিজের ইচ্ছের কথা জানান। পাশও করে যান শারীরিক পরীক্ষায়। চিকিৎসকেরা বলেন, তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ। গর্ভে সন্তান বহনে কোনও অসুবিধা নেই। মেয়ে-জামাইয়ের কাছে সরাসরি প্রশ্ন করেন, “যদি আমি তোমাদের সন্তানের গর্ভদাত্রী মা হই?”
মাইক বলেন, “প্রথমে সিন্ডির কথায় একেবারেই গুরুত্ব দিইনি। মনে হয়েছিল, এমন আবার হতে পারে নাকি! অসম্ভব!” কিন্তু ডাক্তারদের সম্মতিতে বিসয়টি সুখকর এক পরিণতির দিকে এগোতে শুরু করে।
শুরু হয় প্রস্তুতি। মানসিক ও শারীরিক। মাইকের শুক্রাণু ও এমিলির ডিম্বাণু থেকে পরীক্ষাগারে ‘জন্ম’ হয় ভ্রূণের। পরে সেই ভ্রূণ প্রতিস্থাপন করা হয় সিন্ডির গর্ভে।

মেয়ের সন্তান গর্ভধারণকালীন অভিজ্ঞতা সম্পর্কে সিন্ডি বলেন, “সবাই আমাকে দেখে জিজ্ঞাসা করত, তুমি আবার মা হতে চলেছ?” সিন্ডি তাদের সবাইকে গল্প করতেন। তার গল্প, এমিলির গল্প। বললেন, “মাঝে মাঝে ভয় করত। তখন এমিলি আর ওর ভাইয়ের কথা ভাবতাম। ভাবতাম ওদের জন্মের কথা। ”
৩১ অগস্ট। এমিলির মেয়ে সিন্থিয়ার জন্মদিন। সদ্যোজাত সন্তানকে কোলে নিয়ে এমিলি বলেন, “যেদিন ক্যানসার ধরা পড়েছিল, মনে হয়েছিল জীবনটা ছারখার হয়ে গেল। কেন এমন হল? আজ মনে হয়, জীবনটা বোধ হয় এর থেকে বেশি সুন্দর হতে পারত না। ’’

সৌজন্যে: দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা

বাংলাদেশ সময়: ১৮০১ ঘণ্টা, ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।