ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

সিজনাল ফ্লু

অধ্যাপক ডা. মো. জুলহাস উদ্দিন, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৫, ২০১৪
সিজনাল ফ্লু ছবি: ফাইল ফটো

শীতের শেষে এখন চলছে বসন্ত। কয়েক দিন পরেই আসছে প্রচণ্ড গরমের গ্রীষ্মকাল।

ঋতুর এই পরিবর্তন আবহমান কাল থেকেই চলে আসছে এবং চলতেই থাকবে। ঋতু পরিবর্তনের এই সময় তাপমাত্রা, আদ্রতা, ধুলাবালি আর বৃষ্টিপাতের তারতম্যে দেখা যায় নানা রকম অসুখ-বিসুখের উৎপাত। এ ঋতুতে হঠাৎই আবহাওয়ার পরিবর্তনে বাতাসের আদ্রতাও পরিবর্তিত হয়।

শীত-গরমের মিশ্রণের পরিবেশ থাকে পরিবর্তিত। এ পরিবর্তিত পরিবেশে তাপমাত্রা ওঠা নামার কারণে দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণকারী সিস্টেম হঠাৎ করে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে না। এতে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা কমে যায়। আর এ সুযোগে দেহে আক্রমণ করে বসে নানা ধরনের জীবাণু।

এছাড়া বাতাসে ভেসে বেড়ানো ফুলের রেণুসহ রাস্তার ধুলা, ধোঁয়া নিঃশ্বাসের সঙ্গে শ্বাসনালীতে ঢুকে পড়ে শ্বাসতন্ত্রে  সমস্যা সৃষ্টি করে। এতে যাদের নাকে সমস্যাসহ অ্যালার্জির সমস্যা  রয়েছে, তারা শ্বাসতন্ত্রে নানা অসুখে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন।

এসব অসুখের বেশির ভাগই ভাইরাসজনিত  এবং সাময়িক, কিন্তু তা খুবই অস্বস্তিকর। একটু সতর্ক হলে প্রায় ক্ষেত্রেই আমরা এগুলো প্রতিরোধ করতে পারি।

ঋতু পরিবর্তনের সময় সবচেয়ে বেশি দেখা দেয় সর্দি-কাশি বা কমন কোল্ড। এই সময়টাতে আরও একটি ভাইরাস রোগের প্রাদুর্ভাব হতে পারে, যাকে বলে সিজনাল ফ্লু। ফ্লু’তে আক্রান্ত হলে প্রায়ই দেখা যায় ২/৩ দিন নাক বন্ধ থাকে বা নাক দিয়ে পানি ঝরে।

গলাব্যথা ও খুসখুস করে, শুকনো কাশি থাকে, জ্বর থাকতে পারে।   এগুলো বেশিরভাগই ভাইরাসজনিত, লক্ষণ ভিত্তিক কিছু চিকিৎসা, এমনকি কোনো চিকিৎসা ছাড়াই  ভালো হয়, সাধারণত কোনো এন্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয় না। তবে, শুকনো কাশি কয়েক সপ্তাহ থাকতে পারে।

গরম পানিতে আদা, লেবুর রস, তুলসি পাতার রস, মধু ইত্যাদি পান করলে উপকার পাওয়া যায়। অনেক ক্ষেত্রে ভাইরাসের পরপরই ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করতে পারে। কাশির সঙ্গে হলুদ বা সবুজ রঙের কফ বের হলে সঙ্গে জ্বর থাকলে ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। সেক্ষেত্রে এন্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয়।

এ ঋতুতে যে সাবধানতাগুলো মেনে চলা জরুরি---
-ধুলাবালি পরিহার করতে হবে। বাইরে বেরোলে নাকে-মুখে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
-অতিরিক্ত গরমে যাওয়ার প্রবণতা এড়িয়ে চলতে হবে।
-ঘাম হলে মুছে ফেলতে হবে।
-ভিটামিনযুক্ত খাবার বেশি করে খেতে হবে।
-বাইরের খোলা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
-হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় রুমাল ব্যবহার করতে হবে।
-ফ্লু খুব ছোঁয়াচে তাই জনবহুল জায়গা যেমন-পিকনিক বা মেলায় গিয়ে সতর্ক থাকুন।
-যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের জনবহুল জায়গায় না যাওয়াই ভালো।
-সারাদিন পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। দৈনিক আট থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করুন।
-ভিটামিন সি-যুক্ত ফলমূল ও শাকসবজি বেশি করে খেতে হবে।
-আদাযুক্ত লাল চা খেতে হবে ও ফ্রিজের ঠাণ্ডা খাবার এবং আইসক্রিম খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
-বাইরে থেকে এসে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে।
-খাবার খাওয়ার আগে ভালো করে হাত ধুতে হবে।
-পর্যাপ্ত সময় ঘুমাতে হবে। দৈনিক অন্তত আট ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন।


পরিশেষে এ ঋতুতে যে কোনো স্বাস্থ্য সমস্যায় নিজে ওষুধ সেবন না করে অবশ্যই চিকিৎকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করতে হবে।

অধ্যাপক ডা. মো. জুলহাস উদ্দিন, সিনিয়র কলসালটেন্ট(মেডিসিন), ল্যাবএইড, গুলশান

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।