ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

খাবারের মান রক্ষায় ব্যর্থ আন্তর্জাতিক ফুড আউটলেটগুলো

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৮ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০১৪
খাবারের মান রক্ষায় ব্যর্থ আন্তর্জাতিক ফুড আউটলেটগুলো ছবি: প্রতীকী

ঢাকা: বাইরেটা বেশ ফিটফাট। চাকচিক্যে ভরা।

শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ। খদ্দেরে ঠাসা। কেউ বসে কেউ কিউতে দাঁড়িয়ে। রাজধানীর ব্র্যান্ডেড ফুডশপগুলোর এটাই চিত্র। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর ভোজনরসিকরা ভিড় করেন এই দোকানগুলোতে। অর্ডার চলে। চলে টেবিলে-টেবিলে খাওয়ার ধুম। শিশু থেকে কিশোর-তরুণ-যুবা-মধ্যবয়সী-শেষ বয়সী সব বয়সের নারী-পুরুষ খদ্দের আছেন এই তালিকায়।

খাওয়ার ঢঙে ও বাহুল্যে বলা চলে এই খাদ্য ‘সুস্বাদু’। কিন্তু তা কতটা স্বাস্থ্যসম্মত?

এখানেই আসে মানের প্রশ্ন। এসব ব্র্যান্ডেড খাবারের দোকান আন্তর্জাতিক চেইন ধরে বাংলাদেশে। কিন্তু বাংলাদেশে কি সেই মানে এর পরিবেশন চলছে? যে মান নিশ্চিত থাকে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর দোকানগুলোতে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রাজধানী ঢাকায় ও চট্টগ্রামে বিদেশি ফুডব্রান্ডের যেসব আউটলেট রয়েছে এসবের কোনোটিই আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে খাবার তৈরি করছে না। খাবারে ব্যবহৃত হচ্ছে বাসি তেল।

রাতে যে ফ্রায়েড চিকেন অবিক্রিত থাকছে, পরের দিন তা-ই আবার ভেজে বিক্রি করার অভিযোগও রয়েছে ফুড চেইনশপগুলোর বিরুদ্ধে। কেবল অভিযোগ নয়, ভ্রাম্যমান আদালতের আকস্মিক অভিযানে বারবারই ধরা পড়েছে এসব দোকানের অস্বাস্থ্যকর খাবার আর আরও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ।

কিন্তু তাতে পরিবর্তন এসেছে সামান্যই। মুখরোচক এসব খাবার খেয়ে তাৎক্ষণিক তৃপ্তি মিললেও দীর্ঘ মেয়াদে এসব অস্বাস্থ্যকর খাবারের রয়েছে ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া।

fried_chickenবিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, আউটলেটগুলো যেভাবে মুখরোচক খাবার তৈরি করছে তাতে তাৎক্ষণিক কোনো সমস্যা দেখা না দিলেও ধীরে ধীরে পরিপাকতন্ত্রে সমস্যা দেখা দিতে থাকে। বেশি পোড়া তেলে ভাজার কারণে খাবার সুস্বাদু হলেও তা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়াচ্ছে।

বর্তমানে দেশে আন্তর্জাতিক কয়েকটি চেইন ছাড়াও রয়েছে দেশি ব্র্যান্ডের বিভিন্ন আউটলেট। আন্তর্জাতিক চেইনগুলোর মানরক্ষায় বাংলাদেশে যারা ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়ে এসেছেন তারা মোটেই তৎপর নন! নীতিমালা পুরোপুরি মানা হচ্ছে কি না সেটাই দেখার কেউ নেই।  

বিদেশে এসব ব্র্যান্ডের শাখাগুলোতে আট ঘণ্টা পর খাবার ফেলে দেওয়া হলেও বাংলাদেশে এর ব্যতিক্রম। চিকিৎসা বিজ্ঞানে বলা হয়েছে, তেলে ভাজা খাবার আট ঘণ্টার বেশি থাকলে তাতে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের আশংকা থাকে।

রাজধানীতে বিদেশি ব্রান্ডগুলোর এসব শাখায় যারা কাজ করছেন তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে বেশিরভাগ খাবারই ন্যূনতম ১৬ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পর্যান্ত রাখা হচ্ছে। এছাড়া কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানকে ভেজাল খাবার বানানোর কারণে জরিমানাও গুণতে হয়েছে।

এধরনের ফুড চেইনশপে খাবার খেয়েছেন এমন একাধিক দেশি-বিদেশি বলেছেন, মনে হচ্ছে বেশিরভাগই স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে খাবার তৈরি করছে না। বিদেশে এসব ফুড শপের যেসব আউটলেট রয়েছে তাতে নিয়মিত খাবারের মান পরীক্ষা করা হয়। এদেশে খাবারের মান নিয়মিত পরীক্ষা করা হয় কি-না ঠিক জানি না।

বিএসটিআই সূত্র জানিয়েছে, এসব আউটলেটে বছরে দু’একবার ভেজাল বিরোধী অভিযান চালানো হয়। খাবারে ভেজালের কারণে জরিমানা দিয়েই পার পেয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক এসব ব্রান্ডের শাখাগুলো।

রাজধানীর বারডেম হাসপাতালের পরিপাকতন্ত্র প্যানক্রিয়াস ও লিভার রোগ বিশেষজ্ঞ আবদুল্লাহ মামুন বলেন, বর্তমানে উচ্চবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর অনেকেই পেটের পীড়ায় ভুগছেন। এর প্রধান কারণ ফাস্ট ফুড কালচার। মুখরোচক খাবারের জন্য অনেকেই বিভিন্ন ব্রান্ডের ফুড শপগুলোতে ভাজাপোড়া খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। burger

এসব শপে ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার বর্জন করতে তিনি পরামর্শ দেন।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালিত অভিযানে অপরিচ্ছন্নতার কারণে একটি নামি ব্র্যান্ড শপকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট আল আমিনের নেতৃত্বে একটি টিম ওই আউটলেটের কিচেনে গিয়ে দেখতে পায়, অপরিষ্কার হাতে একজন কর্মচারী চিকেন স্ট্রিপস তৈরি করছেন। অথচ জীবাণুমুক্ত হাতমোজা (হ্যান্ড গ্লাভস) পরে কাজটি তার করার কথা।

এ কারণে প্রতিষ্ঠানটিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন আদালতের দায়িত্বে থাকা ম্যাজিস্ট্রেট। গতবছর নিম্নমানের খাবার পরিবেশনের দায়ে চট্টগ্রামেও একই ব্র্যান্ডকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

জনস্বাস্থ্য বিভাগের একটি সূত্র জানায়, বাংলাদেশে বিভিন্ন ফুড ব্রান্ডের শাখাগুলো বিশুদ্ধ খাদ্য আদালতের পরিদর্শকদের মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ দিয়ে হাত করে রাখে। ফলে এদের বিরুদ্ধে মামলা খুব একটা হয় না।

এসব কোম্পানির যে দু-একটা স্যাম্পল আসে, তা পরীক্ষায় ভেজাল ধরা পড়ে না। কারণ যারা পরীক্ষা করেন, সেসব কর্মকর্তা মোটা অঙ্কের ঘুষ খেয়ে রিপোর্ট দেন।

বাংলাদেশ সময়: ১২১৭ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।