ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

মাংসে ক্যান্সার ঝুঁকি চারগুণ বেশি!

আসিফ আজিজ, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪১৩ ঘণ্টা, মে ২২, ২০১৪
মাংসে ক্যান্সার ঝুঁকি চারগুণ বেশি!

ঢাকা: কয়েক সপ্তাহ আগে পারিচালিত এক গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে ভয়াবহ এক তথ্য। গবেষকরা বলছেন, পশুর মাংস থেকে পাওয়া উচ্চমাত্রার প্রোটিন ক্যান্সার ও ডায়াবেটিসজনিত মৃত্যুঝুঁকি বাড়ায় চারগুণ।

অতি সম্প্রতি একদল বিজ্ঞানী পরিচালিত এক গবেষণার পর রেড মিট অর্থাৎ গরু, ছাগল, ভেড়ার মাংস থেকে সম্পূর্ণরূপে দূরে থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন।

তারা বলছেন, ‘রেড মিট’ শুধু রক্তের ক্ষতিকর কোলেস্ট্রলই বাড়ায় না, এটা একধরনের আয়রন বহন করে, যা হার্টের বিভিন্ন রোগের অনুঘটক হিসেবে কাজ করতে পারে।

অপরদিকে, লন্ডন ইউনিভার্সিটি কলেজ ভিন্নধর্মী আরেকটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। হার্টের বিভিন্ন রোগ, স্ট্রোক এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় এমন সাতটি প্রোটিন ফলমূল ও শাক-সবজি থেকে কীভাবে গ্রহণ করা যাবে তার একটি তালিকা প্রকাশ করেছেন সেখানকার গবেষকরা। তবে সবকিছুর পেছনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, ঘরে আমরা কী খাচ্ছি- নানা পদের মাংস? সবুজ শাক-সবজি? নাকি পুরোপুরি নিরামিষভোজী হতে চলেছি?

পরিবেশগত দিক বিবেচনা করেও আমাদের মাংস খাওয়া কমিয়ে দেওয়া উচিত। এখন প্রশ্ন হলো, মাংসপ্রেমীরা কী একথা শুনে বিচলিত? বিদ্যানাথ হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল অপারেশনস এবং কো-অর্ডিনেশন ম্যানেজার ডা. আশুতোষ গৌতম বলেন, আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রের পরামর্শ মাংস এড়িয়ে চলা- বিশেষ করে গরু ও ছাগলের মাংস।

একইসঙ্গে পল্ট্রি অথবা সামুদ্রিক মাছ কেনার আগে ভালো করে মান যাচাইয়ের দিকে নজর দিতে হবে। মাংস একটি উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার, এতে ফ্যাটের পরিমাণ অনেক বেশি। তাই সেটা মেপে খাওয়া উচিত। আয়ুর্বেদ শাস্ত্র সবকিছুর ভারসাম্য রাখে, অতিরিক্ত কোনোকিছু কখনোই ভালো নয়।

সম্প্রতি নিরামিষ জাতীয় খাবার খাচ্ছেন এবং মাঝে মধ্যে মাংস খান- এমন খাবারের মেন্যু বেশ জনপ্রিয়। নিরামিষজাতীয় খাবারই তাদের প্রথম পছন্দ, কিন্তু কোনো অনুষ্ঠানেই কেবল মাংস খান। কেউ কেউ এতে আপনি নিরামিষাশী না আমিষাশী তা নিয়ে সন্দেহ করতে পারেন।

কিন্তু আমি মনে করি, আমি সেটাই করব যেটায় আমি আরাম পাচ্ছি। একটি নিয়মই আমি মানি- তোমার কাছে যেটা ভালো ও স্বাস্থ্যকর মনে হয় সেটাই খাও। একটি স্বাস্থ্যকর খাবারকে স্বাগত জানালে কেউ আপনাকে তা থেকে বিরত করতে চেষ্টা করবে না।

পুষ্টিবিদ ও স্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শদাতা তপস্যা মুন্ধ্রা বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এনিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে এবং হচ্ছে। কিন্তু প্রধান বিষয় হলো আপনি মাংস কীভাবে খাচ্ছেন, কী পরিমাণে খাচ্ছেন, কীসের সঙ্গে খাচ্ছেন এবং তার মান কেমন। যারা মূলত নিরামিষভোজী ও বিশেষ অনুষ্ঠানেই শুধু সামান্য মাংস খান তারাই সম্ভবত বেঁচে থাকার জন্য সবচেয়ে ভালো পথে চলছেন। আপনার খাবারের মেন্যুতে প্রতিদিন যদি মাংস থাকে এবং একসময় যদি না থাকে তবে আপনার পুষ্টি কমে যাবে যা আপনাকে আবার অর্জন করতে হবে। তখন আপনাকে পুষ্টির জন্য বিভিন্ন খাবারের উপর নির্ভরশীল হতে হবে। যেমন আঁশ জাতীয় খাবারের জন্য শাক-সবজি ও ফল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

তাই বলে কিন্তু মাংস খাওয়া হঠাৎ করে একেবারে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। মাংস খাওয়া বন্ধ করার জন্য প্রথমে আপনি সপ্তাহে তিনবার করে খেতে পারেন। এটি ক্রমে পুরোপুরি ছাড়তে সাহায্য করবে। যারা নিরামিষাশী নন তাদের জন্য আদর্শ খাবার, ৬৫ শতাংশ সবজি এবং ৩০ শতাংশ মাংস।

সবেশেষে বলা যায় নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সব খেতে পারেন, তবে সংযমের সঙ্গে বিবেচনা করে। তো কী ভাবছেন? হুজুগে পড়ে আপনি সব খাবার বন্ধ করে দেবেন? কোনো কিছু বন্ধ করার কোনো সীমা নেই, কিন্তু আপনার খাবারের প্লেট থেকে যখন মাংস বাদ যাবে তখন বেশি বেশি তরতাজা স্বাস্থ্যকর খাবার যোগ করতে হবে। আশাকরি নিরামিষ খাবার মাংসের তৈরি খাবার থেকে আপনাকে বেশি আন্দোলিত করবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৪১০ ঘণ্টা, মে ২২, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।