ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

চিকিৎসক-সাংবাদিক-অ্যাটেনডেন্টদের শ্রদ্ধাশীল থাকার সুপারিশ

ইসমাইল হোসেন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৬ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০১৪
চিকিৎসক-সাংবাদিক-অ্যাটেনডেন্টদের শ্রদ্ধাশীল থাকার সুপারিশ

ঢাকা: হাসপাতালগুলোতে অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি নিরসনে ‘ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট ইউনিট’ গঠন ও নিরাপত্তা অ্যালার্ম স্থাপন ও বাজানোর সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি।

সকল হাসপাতালের তথ্য সংগ্রহ-প্রদানে একটি করে তথ্য সেল গঠনের সুপারিশ করে কমিটি হাসপাতালসমূহে চিকিৎসক-নার্স, সাংবাদিক-অ্যাটেনডেন্টদের পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার সুপারিশ করা হয়েছে।



বৃহস্পতিবার বারডেম হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতাল এবং জেড এইচ শিকদার মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে সাংবাদিক মারধর ও চিকিৎসক-অভিভাবকদের মধ্যে অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির ঘটনায় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।  
 
স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে চারটি হাসপাতালের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন তুলে ধরেন।
 
পাশাপাশি আহত সাংবাদিকদের চিকিৎসা ব্যয় মেটানো এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতি পূরণ দেওয়ার ব্যাপারে সুপারিশ করে তদন্ত কমিটি।

হাসপাতালে চিকিৎসক-সাংবাদিক সুসম্পর্ক রাখতে এছাড়াও বেশ কিছু সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। সাংবাদিকগণ নিজেদের পরিচয় দিয়ে সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা নিয়ে কাজ করা। কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করবে।
 
সলিমুল্লা মেডিকেলের ঘটনায় তদন্ত কমিটি বেলেছে, আইন কারো হাতে তুলে নেওয়া যাবে না। পেশাগত দায়িত্ব পালনে পরষ্পরের প্রতি সবার শ্রদ্ধাশীল থেকে সদাচরণ ও সৌজন্যতার প্রতিফলণ ঘটাতে হবে।
 
বারডেমে নিয়োগ নীতিমালার পরিবর্তন
গত এপ্রিলে বারডেম হাসপাতালে রোগী মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসক-অ্যাটেন্ডেন্ট মারামারির ও পাল্টাপাল্টি মামলা হয়। সে সময় চিকিৎসকরা কর্মবিরতি পালন করে।
 
এসব ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি জানায়, বারডেমে কর্তব্যরত মেডিকেল অফিসারদের ৩ বছর চাকরির পর তাদের চাকরি আপনাআপনি অবসান ঘটে। বারডেমের নিয়মিত চাকরিরত মেডিকেল অফিসাররা হাসপাতালের সংকটে সাড়া দিতে চায় না। এবারও বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়েছে। ঘটনার সময় ৩৫/৪০ জন কর্তব্যরত চিকিৎসক থাকলেও তারা সহকর্মীদের রক্ষা করতে এগিয়ে আসেনি।
 
বারডেমে মেডিকেল অফিসার এবং অন্যান্যদের মধ্যে চাকরির নিশ্চয়তা, ধারাবাহিকতা, নিরাপত্তা নিশ্চিত না থাকার কারণে তারা প্রতিষ্ঠানকে নিজেদের মনে করেন না। ৩ বছর চাকরির পর বিদায় করার ‘নিষ্ঠুর নিয়ম’ অবিলম্বে বন্ধ করতে বারডেমের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ এবং সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।
 
এ হাসপাতালে রাত্রীকালীন চিকিৎসকদের সিনিয়র ও জুনিয়র সমন্বয় করে দায়িত্ব বণ্টন করারও সুপারিশ করা হয়।
 
ভবিষতে এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা দেখা দিলে নিরাপত্তার দায়িত্বরত কর্মকর্তা এবং নিরাপত্তাকর্মীদের রুমে অ্যালার্ম বাজানোর পরামর্শ দেয় তদন্ত কমিটি। এতে যথাযথ কর্মকর্তা-নিরাপত্তাকর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবে, বলে মনে করে কমিটি।
 
হাসপাতালে উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট ইউনিট রাখার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। তবে এ ইউনিট না করা পর‌্যন্ত জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় সিফটিং করে ২৪ ঘণ্টা সিনিয়র কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালন করার সুপারিশ করা হয়েছে।
 
এ দুই সুপারিশ অন্যান্য হাসপাতালের জন্যও করা হয়েছে।
 
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব গৌতম আইচ সরকারকে প্রধান করে বারডেমের তদন্ত কমিটিতে ছিলেন মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সভাপতি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক/সহকারী পরিচালক, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়েনের প্রতিনিধি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব এজাজ আহমেদ জাবের।
 
রামেক চিকিৎসকদের মামলা প্রত্যাহার!
২০ এপ্রিল এই হাসপাতালে রোগী চিকিৎসকদের সংঘর্ষের সংবাদ সংগ্রহের জন্য গেলে সাংবাদিকরা হামলার শিকার হন। তদন্ত কমিটি ক্ষতিগ্রস্ত সাংবাদিকদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা, আহত সাংবাদিকদের সুচিকিৎসা প্রদানসহ চিকিৎসা ব্যয় বহন, তথ্য সেল গঠন, পাক্ষিক বা মাসিক ভিত্তিতে হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম জানানোর সুপারিশ করা হয়েছে।
 
এছাড়াও অ্যাটেনডেন্টদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, ভিজিটিং আওয়ার কঠোরভাবে মেনে চলার কথাও বলা হয়।
 
এ হাসপাতালে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। তবে মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সামনেই এর সমালোচনা করেন সাংবাদিক নেতারা।
 
অ্যাটেনডেন্টদের সামনে রোগীর পরীক্ষা না করা, রোগী ও অ্যাটেনডেন্টদের ব্যাপারে চিকিৎসকদের আরো যত্নবান হওয়ার পরামর্শ দিয়ে কমিটি এই হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা ও সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনকে সাংবাদিক-চিকিৎসকদের সমন্বয় করার পরামর্শ দেয়। তারা প্রয়োজনে মাঝে মধ্যে মতবিনিময়ও করতে পারে।
 
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব আনোয়ার হোসেনকে প্রধান করে রাজশাহী মেডিকেলের ঘটনায় তদন্ত কমিটিতে বিএমএ সভাপতি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক/সহকারী পরিচালক, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়েনের প্রতিনিধি ছাড়াও সচিব ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব হুমায়ুন কবির।
 
সলিমুল্লাহর ইন্টার্ন চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
গত ১৯ এপ্রিল একুশে টিভির প্রতিবেদক সলিমুল্লাহ মেডিকেলে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের লাঞ্চনার শিকার ও ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয়।
 
তদন্ত কমিটি চিহ্নিত দায়ী শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ, ক্যামেরা-মোবাইল ভাঙচুরের ক্ষতিপূরণের জন্য সুপারিশ করেছে।
 
শফিউল আজমের চিকিৎসা সনদ বাতিল
তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রথম আলোর সাংবাদিক শিশির মোড়লকে মারধরের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি দায়ী চিকিৎসক শফিউল আজমের চিকিৎসা সনদ বাতিলের জন্য সুপারিশ করেছে। এছাড়া শিকদার মেডিকেলের কাছে শিশির মোড়লের চিকিৎসা ব্যয় নেওয়ার সুপারিশ করে তদন্ত কমিটি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সনদ বাতিলের প্রক্রিয়া চলছে।


 
সলিমুল্লাহ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব সৈয়দা আনোয়ারা বেগম। সদস্য ছিলেন বিএমএ মহাসচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক/সহকারী পরিচালক, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়েনের প্রতিনিধি। সদস্য সচিব ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব জিল্লুর রহমান চৌধূরী।
 
সুপারিশ বাস্তবায়ন হবে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে কথা বলে সুপারিশসহ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। তারা যে সুপারিশ করেছে তা পর‌্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে। এরইমধ্যে হাসপাতালে তথ্য সেল তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।
 
তিনি বলেন, আমরা চাই চিকিৎসক-সাংবাদিক সুসম্পর্ক গড়ে উঠুক।
 
বাসসের এমডি আবুল কালাম আজাদ, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, বিএমএ নেতৃবৃন্দ ছাড়াও সংবাদ সম্মেরনে সাংবাদিক নেতারা বক্তব্য রাখেন।

** হাসপাতালে ‘নিরাপত্তা অ্যালার্ম’ বাজানোর সুপারিশ
 
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৭ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।