ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

ক্ষতিকর মশার কয়েলে সয়লাব বাজার

তাবারুল হক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০১৫
ক্ষতিকর মশার কয়েলে সয়লাব বাজার ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: অসহনীয় মাত্রার রাসায়নিক ব্যবহার করে ক্ষতিকর মশার কয়েল প্রস্তুত করছে অনুমোদনহীন একাধিক কারখানা। অননুমোদিত এসব কয়েলে রাজধানীসহ দেশের বাজার সয়লাব।

এর ফলে ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অনুমোদিত কোম্পানিগুলো।

স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এসব কয়েল উৎপাদনের বিরুদ্ধে কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা নেই বলেও অভিযোগ রয়েছে অনুমোদিত এসব কোম্পানির।

বিশেষজ্ঞদের মতে, অননুমোদিত এসব কয়েলে ব্যবহার করা হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক ‘একটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট’। কয়েল তৈরিতে অপরিহার্য এ রাসায়নিকটির যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে ক্যান্সার, শ্বাসনালীতে প্রদাহসহ বিকলাঙ্গতার মতো ভয়াবহ রোগ হতে পারে।

যদিও বিদ্যমান বালাইনাশক অধ্যাদেশ- (পেস্টিসাইড অর্ডিন্যান্স ১৯৭১ ও পেস্টিসাইড রুলস ১৯৮৫) অনুসারে, মশার কয়েল উৎপাদন, বাজারজাত ও সংরক্ষণে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অনুমোদন বাধ্যতামূলক। এতে আরো বলা আছে, অধিদফতরের অনুমোদন পাওয়ার পর পাবলিক হেলথ প্রোডাক্ট (পিএইচপি) নম্বর ও বিএসটিআই’র অনুমোদন নিয়েই সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে বালাইনাশক পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করতে হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) মশার কয়েলে সর্বোচ্চ ০.০৩ মাত্রার একটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট ব্যবহার নির্ধারণ করেছে। কিন্তু অননুমোদিত মশার কয়েলে ডব্লিউএইচও’র নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি একটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট ব্যহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

মারাত্মক ক্ষতিকর এসব কয়েল উৎপাদন ও বাজারজাত করছে ২০/২২টি দেশীয় বেনামি কারখানা। ভুয়া পিএইচপি নম্বর ও বিএসটিআই’র লোগো ব্যবহার করে আকর্ষণীয় মোড়কে এসব কয়েল বাজারে ছাড়া হচ্ছে।

এছাড়া বিদেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে উচ্চমাত্রার একটিভ ইনগ্রেডিয়েন্টে সম্পন্ন চায়না কয়েল। দেশের বাজার এসব কয়েলে সয়লাব হলেও এর বিপরীতে সংশ্লিষ্টদের কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ নেই বলে অভিযোগ অনুমোদিত দেশীয় কোম্পানিগুলোর।

বিএসটিআই সূত্র জানায়, ঢাকা বিভাগে (ফরিদপুর ছাড়া) ৩৭টি ব্র্যান্ডের মশার কয়েল উৎপাদন, বাজারজাত ও সংরক্ষণ করতে বিএসটিআই’র অনুমোদন রয়েছে।

অনুমোদিত কোম্পানির মতে, বাজারে যেসব অনুমোদনহীন কয়েল পাওয়া যায় সেগুলো হল- সুপার ডিসকভারি, মাছরাঙ্গা, সোনালী কিং, প্যাগোডা গোল্ড, তুলসী পাতা, সুপার ফিলিপস ডিআইএম জাম্বু, অ্যাটাং কিং সেইফ গার্ড, এক্সট্রা হাই পাওয়ার লিজার্ড মেগা, বস সুপার, টাটা হাই স্পিড, মেট্রো, সুপার জাদু, মাছরাঙ্গা কিং, সুপার সান পাওয়ার, এ-জেড মেঘনা, মারুফ পাওয়ার ম্যাজিক, পোলার, মাছরাঙ্গা মেঘাসহ বিভিন্ন নামে বিক্রি হয়ে থাকে এসব মশার কয়েল।

মশা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কবিরুল বাশার।

মশার কয়েলে মানবদেহে সহনীয় মাত্রার অতিরিক্ত একটিভ ইনগ্রেডিয়েন্টের ব্যবহার সম্পর্কে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, কয়েল প্রস্তুত করা হয় মশার মারার জন্য। তবে মানুষের যেন কোনো ক্ষতি না হয় সে দিক বিবেচনা রেখে ডব্লিওএইচও স্ট্যান্ডার্ড মান ০.০৩ মাত্রা বজায় রেখে কয়েল প্রস্তুত করতে হবে।

কবিরুল বাশার বলেন, বাজারে যেসব কয়েল পাওয়া যায় তা কতোটুকু মাত্রায় ইনগ্রেডিয়েন্ট ব্যবহার করা হয় তা এখন আমাদের দেখার বিষয়। এসব কয়েল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত মনিটরিংয়ের মাধ্যমে মান যাচাই করার দরকার বলে মনে করেন তিনি।

এছাড়া দেশের বাইরে থেকে মশার কয়েল আমদানি করার ক্ষেত্রে একটি সুর্নিদিষ্ট নীতিমালা গঠনের দাবি করেছেন তিনি।
 
কয়েল প্রস্তুতে অনুমোদিত কোম্পানিগুলোর অভিযোগ, মাত্রাতিরিক্ত একটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট দিয়ে তৈরি কয়েল আপাতত কার্যকারিতা বেশি। এতে এতো বেশি বিষ আছে যা শুধু মশাই নয়, টিকটিকি, তেলাপোকাও মারা যায়।

এসব কয়েল ব্যবহারের ফলে মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ভয়াবহতা দেখা দিবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পরিচালক (উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইং) সিরাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, অধিদফতরের অনুমোদন ছাড়া কেউ কয়েল উৎপাদন করতে পারে না। কিন্তু কিছু কারখানা আমাদের অনুমোদন ছাড়াই কয়েল প্রস্তুত ও বাজারজাত করছে বলে অভিযোগ এসেছে।

এ অভিযোগের ভিত্তিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিএসটিআই’র সহকারী পরিচালক (সিএম) রিয়াজুল হক জানান, ঢাকা বিভাগের মধ্যে ৩৭টি ব্র্যান্ডের মশার কয়েল তৈরির অনুমোদন রয়েছে তাদের।

ওই ৩৭টি ব্র্যান্ডের বাইরে কেউ কয়েল উৎপাদন করলে তা অবৈধ ও অনুমোদহীন বলেও জানান তিনি।

চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য সম্প্রতি নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভোক্তাদের স্বার্থে এপ্রিলের শুরু থেকে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ভোগ্যপণ্যসহ অন্যান্য পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণেও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা অব্যাহত থাকবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০১৫
টিএইচ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।