ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

মেহেরপুরে ডায়রিয়ার প্রকোপ, তিনজনের মৃত্যু

জুলফিকার আলী কানন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৮ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০১৫
মেহেরপুরে ডায়রিয়ার প্রকোপ, তিনজনের মৃত্যু ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মেহেরপুর: মেহেরপুরে ডায়রিয়া পরিস্থিতি ভয়াভহ রূপ ধারণ করেছে। প্রতিদিনই হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

অতিরিক্ত রোগীর চাপে এখন মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে তিল ধারণের জায়গা নেই। বিগত ২৫ দিনে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে দেড় সহস্রাধিক ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছেন।

এদিকে, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজন সাংস্কৃতিক কর্মীসহ অন্তত তিনজন মারা গেছেন বলে জানা গেছে।

হাসাপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, বেডের অভাবে হাসপাতালের বারান্দায় শতাধিক রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিতে হচ্ছে। এছাড়া হাসপাতালে ‌সরকারের বরাদ্দকৃত ওষুধ শেষ হয়ে যাওয়ায় বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হচ্ছে রোগীদের।

এদিকে, রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করেছেন, হাসপাতালে চিকিৎসক ও নার্সদের দুর্ব্যবহারে তারা হাসপাতাল ছেড়ে ক্লিনিকে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. অলোক কুমার দাস বাংলানিউজকে জানান, রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী জুন পর্যন্ত সরকারের বরাদ্দ করা ওষুধের মজুদ ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। শনিবার কিছু ওষুধ পার্শ্ববর্তী চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে আনা হয় কিন্তু তাও শেষ হয়ে গেছে। তাই এখন রোগীদের বাইরে থেকে ওষুধ কিনে এনে চিকিৎসা সেবা নিতে হচ্ছে।

তিনি আরো জানান, হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের নির্ধারিত ১০ শয্যার বিপরীতে প্রতিদিন ভর্তি হচ্ছে শতাধিক। ফলে ওয়ার্ড ছাপিয়ে সিড়ি রুম, বারান্দাসহ মেঝেতে বেড পেতে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে, কোনভাবেই ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারার কারণে মেহেরপুর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে দু’টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এছাড়া রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উদ্যোগে উচ্চ ক্ষমতা সমপন্ন একটি মেডিকেল টিম রোববার দুপুরে মেহেরপুরে জেলায় কাজ শুরু করছে।

২৫ দিনের ডায়রিয়া পরিস্থিতি মহামারী আকার ধারনের আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকরা। রোববার রাতে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নতুন করে আড়াই শতাধিক রোগী ভর্তি হয়েছে।

এদিকে আইইডিসিআর’র প্রিন্সিপাল সাইন্টিফিক অফিসার ডা. নারায়ণ চন্দ্র দাসের নেতৃত্বে ছয় সদস্যর মেডিকেল টিম মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ড ও জেলার বিভিন্ন স্থানে তদন্ত শুরু করেছেন।
 
মেডিকেল টিমের সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন- ডা. ইকবাল আনসারী, ডা. মোনালিসা, ডা. রাবেয়া সুলতানা, সাধনা রানী শীল ও ইসমাইল খান।

ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের পায়খানা, আক্রান্ত এলাকার পানি ও মৌসুমী ফল পরীক্ষা করা হবে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন আইইডিসিআর’র প্রিন্সিপাল সাইন্টিফিক অফিসার ডা. নারায়ণ চন্দ্র দাস।

ডায়রিয়ার উৎস খুঁজে তিনদিনের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে একটি প্রতিবেদন দাখিল করা হবে বলে বাংলানিউজকে জানান হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মিজানুর রহমান।

ডা. মিজানুর রহমান আরো জানান, ২০ এপ্রিল থেকে ১৭ মে পর্যন্ত মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে দেড় হাজারেরও বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে।

ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের দেখতে হাসাপতাল পরিদর্শনে আসেন জেলা প্রশাসক মাহমুদ হোসেন, জেলা পরিষদের প্রশাসক অ্যাডভোকেট মিয়াজান আলী ও পৌর মেয়র মোতাছিম বিল্লাহ মতু।

জেলা পরিষদ ও পৌর সভার উদ্যেগে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের মধ্যে বিনামূল্য দুই শতাধীক স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে ইতোমধ্যে সচেতনতামূলক প্রচার প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

মেহেরপুরে ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় আইসিডিডিআর’র প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা নারায়ন চন্দ্র দাসের নেতৃত্বে মেডিকেল টিম মেহেরপুর জেলা প্রশাসক মাহমুদ হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ড পরিদর্শন করেন। এ সময় হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. অলোক কুমার দাস, তত্ত্বাবধায়ক ডা. মিজানুর রহমান, সহকারী সুপার ডা. তাপস কুমার সরকার উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত তিনজন রোগীর মৃত্য হয়েছে। এরা হলেন, সদর উপজেলার রাইপুর গ্রামের নিয়ামত আলীর ছেলে আরজ আলী (৩৮), শহরের বেড়পাড়া এলাকার সাংস্কৃতিক কর্মী পিংকি খাতুন (২০) ও সদর উপজেলার গহরপুর গ্রামের রাসেল হোসেন (২৬)।

সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দকী বলেন, পরিস্থিতি মোকাবেলায় হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. অলোক কুমার দাসের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি এবং সিভিল সার্জন অফিসের সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা অফিসার রওশন নাহারের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আরেকটি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। মেডিকেল টিমকে ডায়রিয়ার কারণ ও চিকিৎসা সেবা সম্পর্কিত প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়াও মেহেরপুর পৌর মেয়র মোতাছিম বিল্লাহ মতুকে পৌরসভার পানি পরীক্ষণের জন্য সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
 
অন্যদিকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করে বাংলানিউজকে বলছেন, হাসপাতালে দুর্গন্ধে সুস্থ ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়ছে। ডাক্তার, সেবিকার কাছে কোনো পরামর্শ চাইলে তারা দুর্ব্যবহার করছে। এ কারণে অনেকে হাসপাতাল ছেড়ে পার্শ্ববর্তী ক্লিনিকে চলে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৮ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০১৫
এসআই/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।