ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

চা পানে সুস্থ নিরোগ জীবন

জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২৭ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৫
চা পানে সুস্থ নিরোগ জীবন

আপনি কি খাচ্ছেন আর কি পান করছেন তার উপর নির্ভর করছে আপনি কতোটা সুস্থ থাকবেন। ধরুন আপনি জাঙ্কফুড খাচ্ছেন, কোক-পেপসির মতো পানীয় বা কার্বোনেটেড ওয়াটার পান করছেন, তাহলে কী করে আপনি সুস্থ থাকবেন? সুস্থ থাকতে হলে আপনাকে এসব থেকে দূরে থাকতেই হবে।

তবে কি কি খেলে বা পান করলে আপনি সুস্থ থাকবেন নিরোগ থাকবেন সেটা আপনাকে জানতে হবে আগে। আজ আপনাদের বিভিন্ন প্রকার চায়ের কথা জানাবো, যে চা পান করলে আপনি প্রচুর হেলথ বেনিফিট পাবেন। তবে আমরা সচরাচর দুধ-চিনি মেশানো যে চা পান করি সে চায়ের কথা এখানে বলছি না। আমরা এখানে যে কয় ধরণের ভেষজ চায়ের কথা বলবো সেগুলোর কোনোটিতেই দুধ মেশানো চলবে না। তাহলে চলুন ঘুরে আসি স্বাস্থ্যপ্রদ কয়েক ধরনের চায়ের প্রসঙ্গে:

গ্রিন টি

দিন যতো যাচ্ছে, গ্রিন টি সাধারণ চায়ের জায়গা দখল করে নিচ্ছে। গত ক’বছরে  গ্রিন টি রেগুলার টি বা সাধারণ চায়ের সাথে সমান তালে পাল্লা দিচ্ছে----অন্তত শহুরে মানুষদের মধ্যে। সে তো আর এমনি এমনি না! স্বাস্থ্যকর বলেই গ্রিন টি’র প্রতি ঝুঁকছে মানুষ। বলা হচ্ছে, গ্রিন টি স্মৃতিশক্ত বাড়ায়, ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করে আর বহুমূত্র বা ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে। এই চা জাপানে আর চীনে আগে থেকেই জনপ্রিয়। এই চা শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। অক্সিডাইজেশন হচ্ছে সেই প্রাকৃতিক ক্রিয়া যার কারণে আপেল কাটার পর তার রঙ বদলে যায়। কারণ বায়ুমণ্ডলে থাকা অক্সিজেন এর সংস্পর্শে আসে। গ্রিন টি দেহে ক্ষতিকর এই প্রক্রিয়াকে থামিয়ে দিয়ে দেহের অশেষ উপকার করে। কারণ এই চায়ে আছে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। আর আছে পলিফেনল---যার রয়েছে অশেষ হেলথ বেনিফিট। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আর কি কি করে জানতে চান? এই চা পরিপাকতন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়ায়, রক্তচাপ কমায় এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে। আর হ্যাঁ, আপনার হৃদযন্ত্রেরও উপকার করে এই গ্রিন টি। যারা ধূমপায়ী তাদের ধূমপানের বদভ্যাস ছাড়তেও পরোক্ষ ভূমিকা আছে গ্রিন টি’র।   

চিকিৎসকরা  তাই বলছেন, ‘Drink Green Tea to Get Rid of Smoking Addiction’.

পুদিনা চা
 
পুদিনার অনেক গুণ। পেটের গোলমালে উপকার পাওয়া যায়, বমি ভাব দূর হয়, হজমের গণ্ডগোল দূর করে, চুকা ঢেঁকুর বন্ধ করে। টুথপেস্ট, গাম তৈরিতেও কাজে লাগে এই আশ্চর্য ভেষজ উদ্ভিদটি। আর হ্যাঁ, মেদ কমাতেও কাজে লাগে পুদিনা। ম্যারিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে চালানো এক গবেষণায় দেখা গেছে, পুদিনাতে যে বেশ কয়েক প্রকারের প্রাকৃতিক তেল থাকে  যা গলব্ল্যাডারকে উদ্দীপ্ত করে। যার ফলে প্রচুর জারক রস উৎপন্ন হয়। তাতে হজম করা সহজ হয়। পাশাপাশি পেটের ভেতরে জমা হওয়া চর্বি গলে  যায়। পিত্ত ও যকৃতেরও নানা উপকার করে এই পুদিনা। আর Irritable Bowel Syndrome (IBS) বা পেটে অস্বস্তিকর অনুভূতি অনেকের লেগেই থাকে। এই অবস্থাকে ঝেঁটিয়ে বিদেয় করতেও পুদিনার জুড়ি নেই। পুদিনা পাতা থেকে তৈরি তেল মাথাব্যথা, পেশির ব্যথা, দাঁত ব্যথা, স্নায়ুর সমস্যা (ব্যথা) ও মুখের প্রদাহ দূর করার কাজে আশ্চর্য ফলদায়ক।  

তাহলে বলুন, পুদিনা চা পান না করে আপনি নিজেকে বঞ্চিত করবেন কিনা। সিদ্ধান্ত একান্তই আপনার।

বুশ টি বা জংলি চা

মেরুন রঙের এই চায়ের গন্ধটা কিন্তু মোটেই ভালো লাগবে না আপনার। জংলি চা বলে কথা! কিন্তু গন্ধটা সয়ে নিয়ে এই চা যদি আপনি পান করেন তো বিবিধ উপকার পাবেন। বলা বাহুল্য, এই চা নামের ভেষজটি জন্মায় কেবল আফ্রিকায় মহাদেশে।

গন্ধটা ঝাঁঝালো হলেও মুখে নিলে এর স্বাদটা কিন্তু বেশ লাগবে আপনার। এই চা পানের অনেক পরও এর তৃপ্তিদায়ক স্বাদটা মুখে লেগে থাকবে আপনার।

এই চা আসলে এক ধরনের ভেষজ উদ্ভিট। লোকেরা একে গরম পানিতে মিশিয়ে চা হিসেবে পান করে। আফ্রিকাতে এই চায়ের  উৎপত্তির কারণে ইংরেজিতে এর নাম হয়েছে ‘’বুশ টি ---যার আফ্রিকান নাম Rooibos (roo-ee-bosh)  ; ইংল্যান্ডে এটিকে ‘রেড বুশ’ নামেও পরিচিতি পাচ্ছে।

এই জংলি চায়ের বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এটি পুরোপুরিভাবে ক্যাফেইনমুক্ত। গ্রিন টি বিকল্প হিসেবে ভাবা হয় এই জংলি চা-কে।  

এর নানান উপকারিতার মধ্যে আছে কয়েকটির কথা জানাচ্ছি। অ্যালার্জি যাদের আছে তারা এটি পান করলে উপকৃত হবেন। এটি ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ বলে হাড়ের ক্ষয়রোগ টেকাতে এবং হাড়ের সুষম গঠনেও এটি ভূমিকা  রাখতে পারে। প্রচণ্ড পেটের ব্যথায়ও এটি বেশ উপকারী। এছাড়া বুক জ্বালাপোড়া, আলসার এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও এটি বেশ ফলপ্রদ।  

ফেনেল টি
 
ফেনেল হচ্ছে সবুজাভ এক ধরনের সুগন্ধী ভেষজ উদ্ভিদ । এর পাতাগুলা হয় লম্বা আর ফুল হয় হলদে রঙের। এর বীজ দেখতে অনেকটা জিরার মতো , তবে জিরার চেয়ে আকারে অনেক বড়। এই উদ্ভিদের পুরোটাই কোনো না কোনোভাবে খাওয়া যায়। এটি সালাদেও ব্যবহার করা চলে। রান্নায়ও এর ব্যবহার করেন অভিজ্ঞ পাচকেরা। যাদের বুক জ্বালাপোড়া হয়, পেটে ঢেঁকুর হয়, খাবারে অরুচি, পেটে শূলবেদনা তারা ফেনেল সিড খেলে উপকার পাবেন। এই ফেনেল সিড দিয়ে বানানো চা আপনাকে এসব সমস্যার ভালো নিদান দেবে।  

তাহলে আসুন জেনে নিই কী করে বানাবেন ফেনেল টি। তাজা এক চা-চামচ ফেনেল সিড নিন। ফুটন্ত পানিতে বীজগুলো ছেড়ে দিন। তিন/চার মিনিট সেদ্ধ করুন। এরপর নামিয়ে কাপে ঢেলে পান করুন।

জিঞ্জার টি বা আদা চা আদা
 
আদার গুণাগুণ সম্বন্ধে কমবেশি সবারই ধারণা আছে। বমি বমি ভাব আর চুকা ঢেঁকুর আর পেটফাঁপা বন্ধে এর কার্যকারিতার কথা প্রায় সবাই জানি। এজন্যই তো ছোটবেলায় পেটব্যথা বা পেট ফাঁপার কথা বললে আমার/আপনার মা আদার টুকরো চিবুতে বলতেন। আদা চায়েও একই উপকার আপনি পাবেন। যাদের পেটখারাপজনিত ‘‘মোশন সিকনেস’’ আছে তারাও বা যাদের ঘনঘন মাথাব্যথা হয় তারা আদা চা খেলে উপকৃত হবেন।

যেভাবে তৈরি বানাবেন আদা চা:একটি আদা নিয়ে ছাল ছাড়িয়ে নিয়ে এক থেকে দু’ইঞ্চি লম্বা টুকরা নিন। এরপর ফুটন্ত পানিতে টুকরাটা ছেড়ে দিন। তিন থেকে ৫ মিনিট সেদ্ধ করুন। চুলা থেকে নামিয়ে কাপে ঢালুন এবং পান করুন। বেশি তেতো মনে হলে একটু মধু মিশিয়ে নিন। একটুখানি লেবুর রসও মেশাতে পারেন। তাহলে এসিডিটি বা গ্যাসের সমস্যা হবে না। নামিয়ে

বাংলাদেশ সময়: ০৭২৫ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।