কলকাতা থেকে ফিরে: একটি ছোট ক্যাপসুল দেহের ভেতরে ছবি তুলে বিভিন্ন রোগ নির্ণয় করছে। ছোট ক্যাপসুলটি রোগীকে খাওয়ানোর ১০ঘণ্টা অবস্থান করে সফলভাবে ছবি তুলে পাঠাচ্ছে।
রোগী একটি ছোট ক্যাপসুল খাচ্ছে। ওই ক্যাপসুল দশ ঘণ্টা শরীরের ভেতরের ছবি তুলে আনছে। প্রতি সেকেন্ডে চারটি ছবি। অনেকটা ওয়াই-ফাই সিস্টেমে সেই ছবি চলে আসছে কম্পিউটারে। কম্পিউটারের সাহায্যে ছবিগুলো বিশ্লেষণ করে নির্ভুলভাবে রোগ নির্ণয় করছেন চিকিৎসকরা।
অ্যাপোলো হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. মহেষ গোয়েঙ্কা বলেন,‘একটি ক্যাপসুল খাইয়ে রোগীর ভেতরের পুরো পরিস্থিতি জানতে পারছি। চিকিৎসা জগতে এটি একটি বিপ্লব বলা যায়। ’
শুধু ক্যাপসুলের ছবি তোলা নয়, চিকিৎসা বিজ্ঞানে অ্যাপোলো গ্লেনিগেলস হাসপাতাল আমেরিকা ও ইউরোপের হাসপাতালগুলোর মতো এগিয়ে গেছে যা না দেখলে উপলব্দি করা যাবে না।
একটি রোবট, নাম দ্য ভেঞ্চি, মানুষের জটিল অপারেশনে এটি ব্যবহৃত হচ্ছে। দ্য ভেঞ্চি কিডনি সফলভাবে প্রতিস্থাপন করছে। এ রোবটটি ফ্রান্সে তৈরি হলেও এর ব্যবহার প্রথম শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্রে। এরপর চলে গভীর গবেষণা। এ রোবটটিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ে রাখা হয়। এটি পেট না কেটে মাত্র তিনটি ছিদ্র করে একজনের কিডনি বের করে স্থাপন করা হচ্ছে অপরজনের শরীরে। শরীরের ভেতরের ক্যান্সারের সেলগুলো উপড়ে তুলে আনছে দ্য ভেঞ্চির ছোট হাত। রোগীর তেমন কোনও কষ্ট হচ্ছে না। শরীরের অনাহুত রক্তক্ষরণও নেই।
প্রচলিত পদ্ধতিতে অপারেশনে রোগীর যেখানে ছয় ব্যাগ রক্ত লাগতো, সেখানে এখন মাত্র এক ব্যাগ রক্তে সফল অপারেশন হচ্ছে। এসব চিকিৎসা বিজ্ঞানের সর্বাধুনিক নানা প্রযুক্তির সন্নিবেশ ঘটেছে কলকাতার এ হাসপাতালটিতে।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে এ বিষয়ে প্রশিক্ষন নিয়ে আসা ডা. বিনয় মাহেন্দ্র বলেন,‘চিকিৎসা বিজ্ঞানে রোবটিক সার্জারি আশাতীত সাফল্য এনে দিয়েছে। এ অপারেশনে রোগী চিকিৎসা নিয়ে মাত্র তিনদিনে বাড়ি ফিরতে পারছেন। ’
মাত্র আট মাস আগে অ্যাপোলো হাসপাতালে রোবট দিয়ে অপারেশন শুরু হয়। হাসপাতালের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রুপালী বসু জানান,‘প্রায় ৩৫ কোটি টাকা খরচ করে দ্য ভেঞ্চি নামের এ রোবটটি আনা হয়। ’
চিকিৎসা বিজ্ঞানের আবিষ্কৃত সর্বশেষ সব প্রযুক্তিই অ্যাপোলো হাসপাতালে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন,‘বিশ্বমানের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য আমরা নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ’
বাংলাদেশের রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের বিষয়ে তিনি বলেন,‘বাংলাদেশি রোগীরা চিকিৎসা ক্ষেত্রে যেন অগ্রাধিকার পায় সে বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আন্তরিক। বাংলাদেশ থেকে যাওয়া একজন রোগীর অবস্থান এবং অবস্থানের সাথে তার আর্থিক খরচের বিষয়টি যুক্ত। এ বিষয়টি মাথায় রেখে বাংলাদেশসহ বিদেশি রোগীদের যাতে অনাহূত অবস্থান করতে না হয় সেদিকে নিবিড় নজরদারি রয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের ইনফর্মেশন সেন্টার থেকেই যেন রোগীরা নিবন্ধন করে আসতে পারে সেই বিষয়টিও বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। ’
সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে তিনি চট্টগ্রাম তথ্য কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত সৈয়দ রিফাত ফারুক সম্রাটকে তাৎক্ষনিক এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কিছু নির্দেশনা দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০২, ২০১৫
টিসি
** বাড়ির পাশে কলকাতায় সাশ্রয়ী চিকিৎসা এ্যাপোলোতে