ঢাকা: মাথায় আঘাতজনিত কারণে গত রোববার (০৬ নভেম্বর) ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ১০০ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিতে আসেন রমজান আলী। ওয়ার্ডের দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ব্যবস্থাপত্রে দ্রুত সিটি স্ক্যান করতে বলেন।
সঙ্গে ছিলেন রোগীর চাচা আবদুল বারী। তিনি বলেন, ‘খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, ঢামেক হাসপাতালের সিটি স্ক্যান মেশিন নষ্ট। দ্রুত তাকে বাইরে নেওয়ার চেষ্টা করি। পরে মেডিকেল চত্বর থেকে একটি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ধানমণ্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে সিটি স্ক্যান করিয়ে রিপোর্ট নিয়ে ফিরে আসতে তিন ঘণ্টার বেশি সময় লেগে যায়। এ রিপোর্ট দেখে ওই চিকিৎসক চিকিৎসা দিয়ে রোগীকে ভর্তি করেন’।
ঢামেক হাসপাতালের সিটি স্ক্যান ও এমআরআই মেশিন গত কয়েক মাস ধরেই নষ্ট। ফলে তাৎক্ষণিকভাবে এসব পরীক্ষা করাতে না পেরে এভাবেই জরুরি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা।
আবদুল বারী বলেন, ‘জাতীয় হাসপাতালে এসে আমরা তাৎক্ষণিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হলাম। এর দায় কার?’
হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের ১০৩ নম্বর ওয়ার্ডের নার্স নজরুল ইসলাম জানান, এ বিভাগের অধীনে দু’টি ওয়ার্ড ১০০ ও ১০৩ নম্বরে সপ্তাহে ভাগ করে ভর্তি রোগীসহ প্রাথমিক রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসেন। ওয়ার্ড দু’টির তত্ত্বাবধানে আছে আরো কয়েকটি ওয়ার্ড।
একটি ওয়ার্ডে সপ্তাহে দু’দিন করে ভর্তি হন রোগীরা। ভর্তির দিনে সারা দেশ থেকে আনুমাণিক একশ’ জন রোগী চিকিৎসা নেন। তার মধ্যে ভর্তি রোগী থাকেন আনুমাণিক ৭০ জন।
নজরুল ইসলাম জানান, নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডের সব রোগীর আঘাত থাকে মাথায়। চিকিৎসকরা রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর পরই দ্রুত সিটি স্ক্যানের পরামর্শ দেন। কিন্তু ঢামেক হাসপাতালের সিটি স্ক্যান মেশিন নষ্ট থাকায় বাইরে থেকে সিটি স্ক্যান করে আনতে আনতে তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লেগে যায়। এতে অনেক রোগী কোমায় চলে যান।
এছাড়া এসব রোগীর মধ্যে অনেককে পরবর্তীতে এমআরআই করতে দেন চিকিৎসকরা।
হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহাকারী অধ্যাপক ডা. সুদীপ রঞ্জন দেব বলেন, ‘আমার ইউনিটে প্রতিদিন কম হলেও ৩০ থেকে ৩৫ জন রোগীর সিটি স্ক্যানের পাশাপাশি এমআরই করার প্রয়োজন হয়’।
রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট কামাল উদ্দিন বলেন, ২০১১ সালে হিটাচি কোম্পানির সিটি স্ক্যান মেশিন ও ২০০৫ সালে এমআরআই মেশিন কেনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সিটি স্ক্যান মেশিনের ৫ বছর ও এমআরআই মেশিনের ৩ বছরের ওয়ারেন্টি ছিলো। বেশ কয়েকবার মেশিন দু’টি নষ্ট হয়েছে এবং হিটাচি কোম্পানি তা ঠিক করে দিয়েছে। এর মধ্যে সিটি স্ক্যানের তিনবার টিউব লাগানো হয়।
তিনি জানান, গত ৩১ জুলাই সিটি স্ক্যান মেশিন ও ১১ আগস্ট এমআরআই মেশিন ফের নষ্ট হয়ে যায়।
রেডিওলোজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর মিজানুর রহমান বলেন, ‘যে দু’টি মেশিন রয়েছে, তার প্রতিটি পার্স পুরনো হয়ে গেছে। যখনই নষ্ট হয়েছে তখনই চিঠির মাধ্যমে মেডিকেল কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়’।
ঢামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. খাজা আবদুল গফুর জানান, একটি করে নতুন এম আরআই ও সিটি স্ক্যান মেশিন স্থাপনের কাজ চলছে। খুব শিগগিরই তা সম্পন্ন হবে। চলতি অর্থবছরে আরও একটি এমআরআই মেশিন আনার চিন্তা চলছে।
তিনি বলেন, পুরনো সিটি স্ক্যান ও এমআরআই মেশিনও শিগগিরই মেরামত করা হবে। এর ওয়ার্ক অর্ডার হয়ে গেছে, পার্সও এসে গেছে।
‘আশা করছি, আগামী জানুয়ারি মাসে এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাবেন রোগীরা’।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মিজানুর রহমান বলেন, ‘বহির্বিভাগের যে স্থানে দু’টি মেশিন বসানো হবে, সে স্থান পরিদর্শন করে এসেছি। একটি সিটি স্ক্যান ও এমআরআই মেশিন বহির্বিভাগে ও অন্য দু’টি নতুন মেশিন নতুন ভবনে স্থাপন করা হবে’।
স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপনও মঙ্গলবার (০৮ নভেম্বর) ঢামেক হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের জানান, নতুন সিটি স্ক্যান ও এমআরআই মেশিন কেনা হয়েছে। অতি শিগগিরই তা হাসপাতালে বসানো হচ্ছে।
হাসপাতালের জন্য দু’টি নতুন অ্যাম্বুলেন্স বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগ ৩ মাসের মধ্যে চালু করা হবে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০১৬
এজেডএস/এএসআর